চট্টগ্রাম সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪

৬ উদ্যোগে সাশ্রয় ১শ মেগাওয়াট

মিজানুর রহমান

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ

অফিসসূচি পরিবর্তন, স্কুলের বন্ধ একদিন বাড়ানো, শিল্পাঞ্চলে রেশনিং, রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ, এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং এবং আলোকসজ্জায় নিষেধাজ্ঞার সুবাদে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। গড়ে ১০০ মেগাওয়াটের বেশি চাহিদা কমায় চট্টগ্রামে লোডশেডিংও কমেছে বলে দাবি করেছেন পিডিবির কর্মকর্তারা। চাহিদা আরও কমে এলে আগামী অক্টোবর থেকে চলমান বিদ্যুৎ সঙ্কট পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করছেন তারা।

প্রতি সেকেন্ডে উঠা-নামা করায় একটি অঞ্চলে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। এর বড় কারণ- একেকদিন একেক সময় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে বা কমে। তবে পিডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- বিদ্যুতের দৈনিক সর্বোচ্চ চাহিদার পরিমাণ জানতে সাধারণত সন্ধ্যা ৭টার সময়ের চাহিদাকে তারা হিসাবে নেন। কারণ প্রায় দিনই এই সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ থাকে। ব্যবহার বেশি হয় বিদ্যুতের।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নেওয়া সর্বশেষ উদ্যোগ- সরকারি অফিস ও ব্যাংকের কর্মঘণ্টায় পরিবর্তন এবং স্কুলে সাপ্তাহিক বন্ধ ১ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় গত ২৪ আগস্ট। এর আগের পাঁচ দিন ২৩, ২২, ২১, ২০, ১৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল যথাক্রমে ১৩৯২, ১৩৪৪, ১৪৯৫, ১২১৮, ১১৭০ মেগাওয়াট। অন্যদিকে ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮ আগস্ট চাহিদা ছিল যথাক্রমে ১৩৭০, ১৩০৭, ১১০৫, ১০১৯, ১২৫১ মেগাওয়াট।

এসব তথ্য অনুযায়ী সরকারের সর্বশেষ উদ্যোগ কার্যকরের দিন থেকে আগের পাঁচ দিনের তুলনায় পরের পাঁচ দিনে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। যেমন অফিস-আদালত খোলার দিন ২৩ আগস্টের চেয়ে ২৪ আগস্ট চাহিদা কমেছে ২২ মেগাওয়াট। ২২ আগস্টের চেয়ে ২৫ আগস্ট চাহিদা কমেছে ৩৭ মেগাওয়াট এবং ২১ আগস্টের চেয়ে ২৮ আগস্ট চাহিদা কমেছে ২৪৪ মেগাওয়াট। অর্থাৎ কার্যদিবসে গড়ে চাহিদা কমেছে ১০১ মেগাওয়াট।
অন্যদিকে পিডিবির সুপারভিশন কন্ট্রোল এন্ড ডাটা একুইজিশন (স্ক্যাডা) বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- অফিস-আদালত বন্ধের দিন ২০ আগস্টের চেয়ে ২৭ আগস্ট বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে ১৯৯ মেগাওয়াট। এছাড়া ১৯ আগস্টের চেয়ে ২৬ আগস্ট বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে ৬৫ মেগাওয়াট। অর্থাৎ সরকারের সর্বশেষ উদ্যোগ কার্যকরের পর সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার দুই দিনে গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে ১৩২ মেগাওয়াট।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, জুন-জুলাইয়ে বিদ্যুতের যে সঙ্কট ছিল সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পর চাহিদা কমে আসায় সেই সঙ্কট কাটতে শুরু করেছে। জ্বালানি সঙ্কটের কারণে বন্ধ রাখা ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র চালু হওয়ায় উৎপাদনও বাড়ছে। যে কারণে লোডশেডিং এখন কম হচ্ছে। অক্টোবর থেকে শীতের আবহ শুরু হলে এসি ও ফ্যানের ব্যবহার কমবে। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে পার্থক্য কমে আসবে।

পিডিবি চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম পূর্বকোণকে জানান, সরকারের সাশ্রয় নীতির কারণে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। ফলে লোডশেডিংও কমে এসেছে। তিনি বলেন, অফিসসূচি ১ ঘণ্টা এগিয়ে আনা, স্কুলে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করাসহ নানা সিদ্ধান্তে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কখনও ২০-৩০ কখনও ১০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের চাহিদা কমছে চট্টগ্রামে।

প্রসঙ্গত- জ্বালানি সঙ্কটের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে গত ২০ জুন থেকে রাত ৮টার পর সব দোকানপাট বন্ধের নির্দেশনা দেয় সরকার। নিষিদ্ধ করা হয় ভবন আলোকসজ্জা। ১৯ জুলাই থেকে তালিকা করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১১ আগস্ট থেকে শিল্পাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ রেশনিং করা হয়। সর্বশেষ গত ২৪ আগস্ট থেকে সরকারি অফিস সূচি ৯-৫টার পরিবর্তে ৮-৩টা করা হয়। সাপ্তাহিক বন্ধ একদিন বাড়ানো হয় স্কুলে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট