চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামের তিন সিনেমা হলে ‘হাওয়া’র ঢেউ

মরিয়ম জাহান মুন্নী

৩১ জুলাই, ২০২২ | ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

তিন বান্ধবী আঞ্জুমান, মম ও নুপুর সিলভার স্ক্রিন (সিনেমা হল) লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন টিকিট কনফার্ম করতে। বাংলা এ চলচ্চিত্রটি দেখতে চারদিন আগেই টিকিট কেটেছেন তারা। উত্তেজনা নিয়ে এখন অপেক্ষায় আছেন ছবিটি দেখার জন্য। টান টান এমন উত্তেজনা নিয়ে শুধু এ তিন বান্ধবীই নয়, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন শুক্রবার সারাদেশে মুক্তি পাওয়া বহুল আলোচিত মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত সিনেমা ‘হাওয়া’। পাশাপাশি ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ সিনেমাটিও দেখতে ভিড় করছেন দর্শকরা। সিলভার স্ক্রিন হলের পাশাপাশি দিনভর দর্শকের উপস্থিতিতে মুখর ছিল নগরীর আরো দুটি হল ‘সিনেমা প্যালেস ও সুগন্ধা সিনেমা হল’। চট্টগ্রামের এ তিন সিনেমা হলে বইছে ‘হাওয়া’ ছবির ঢেউ। তিনটি হলে আগামী চার-ছয় দিনের সব টিকেট বিক্রি (বুকড) হয়ে গেছে।

 

সরেজমিনে সিনেমা হলগুলো ঘুরে দেখা যায়, দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে টিকেট কিনতে এসে ফিরছেন খালি হাতে। কল করেও পাচ্ছেন না টিকেট। দর্শকদের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন আবার ফিরেছে। গত শুক্রবার সারাদেশে ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রটি রিলিজ হওয়ার পর থেকেই এমন আগ্রহ দর্শকদের।

 

সিলভার স্ক্রিনে বিকেল ৫টার শো দেখে সাউথইস্ট ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা পলাশ চৌধুরী ও মেডিকেল শিক্ষার্থী নাহিদ অর্পণ বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের হারানো ঐতিহ্য যেন আবার ফিরে এসেছে। ছবিটি রিলিজ হওয়ার আগেই হৈ চৈ শুরু হয়েছে। যখন শুনেছি এখানে চলচ্চিত্রটি চলবে, তখনই কল করে টিকেট কনফার্ম করি। প্রায় এক যুগ পর বাংলা চলচ্চিত্র এমন অসাধারণ একটি মুভি উপহার দিয়েছে। ‘হাওয়া’ অসাধারণ, পাশাপাশি প্রশংসার দাবিদার ‘পরাণ’ সিনেমাটিও। দেখতে যেহেতু এসেছি দুইটা সিনেমাই দেখেছি। স্ত্রী, বোন ও ভাবিকে নিয়ে সুগন্ধা সিনেমা হলে আসেন কলেজ শিক্ষক তপন নাথ। বলেন, প্রথম দিকে টিকেট কাটায় এক সাথে চারটা টিকেট পেয়েছি। আমাদের সাথে আরো দু’জন আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন আর টিকেট পাচ্ছিনা। যদি টিকেট পাওয়া যায় বাকিরাও দেখতে আসবে। এ সিনেমাটি দেখানোর জন্য আমার দুই বোন, ভাগ্নি, ভাবি আমার ওয়াইফ আবদার করেছেন। আমার অবাক লাগছে সিনেমা দেখতে বায়না ধরেছে! কোথায় তারা আগে বলতেন দাদা, আমাকে এ থ্রিপিস, ওই মোবাইল এটাসেটা কিনে দাও। এখন সে জায়গা দখল করেছে সিনেমা! তার মানে আসলেই মানসম্মত একটি সিনেমা তৈরি হয়েছে। আমরা এমন সিনেমাই দেখতে চাই। এতে বাংলা সিনেমা যেমন তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পারে তেমনি হলগুলো তাদের সুদিন ফিরে পাবে। তিনি বলেন, মানুষ এখন প্রায় যান্ত্রিক হয়ে গেছে। যারকারণে এতো খুন, হানাহানি হচ্ছে। কিন্তু এই মানব দেহে বিনোদনের কোনো জুড়ি নেই। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কিন্তু বিনোদন। এতে মানুষের মধ্যে কোনো হিংস্র প্রাণী বাসা বাধঁতে পারে না।

 

সিনেমাটি নিয়ে সিলভার স্ক্রিনের ম্যানেজার অপারেশন সালাউদ্দিন মো. পারভেজ বলেন, আমাদের দুইটা হলের মধ্যে একটায় ১৬টি সিট অন্যটায় ৭২টি সিট। প্রতিদিন চারটা শো চলছে। দু’বার ‘হাওয়া’ ও দু’বার ‘পরাণ’ সিনেমাটি চলছে। সবগুলো সিটই ফিলাপ। দর্শকদের প্রচুর চাপ। চাহিদা অনেক কিন্তু আমরা সিট সংকটের জন্য টিকেট দিতে পারছি না। ‘এমন সিনেমাই দর্শক দেখে’ উল্লেখ করে সালাউদ্দিন মো. পারভেজ বলেন, বাংলা সিনেমা তাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে হলে এমন সিনেমাই তৈরি করতে হবে।

 

সুগন্ধা সিনেমা হলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহদাত হোসেন বলেন, হলে প্রায় এক যুগ পর এমন দর্শক হয়েছে। আমি যখন থেকে সিনেমা প্রদর্শন ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েছি তখন থেকে শুধু লোকসান আর লোকসান। যদিও একটি সিনেমা দিয়ে সেই লোকসান সামলানো সম্ভব নয়, তবে এমন সিনেমা আসলে আবার সুদিন ফিরবে সিনেমা হলগুলোতে। না হয় ‘হাওয়া’ সিনেমার পরে দর্শক আবারও ‘হাওয়া’ হয়ে যাবে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট