চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

এসপিএম প্রকল্প

ব্যয় বেড়েছে ২১৮৮ কোটি কাজ শেষ হয়নি এখনও

৩ বছরের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগছে প্রায় ৮ বছর

মিজানুর রহমান

৩০ জুন, ২০২২ | ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ

গভীর সমুদ্রে বড় জাহাজ থেকে তেল খালাসে আধুনিক প্রযুক্তি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বা এসপিএম স্থাপন করতে সাত বছর আগে প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সেই সময় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় তিন বছর। তবে তিনবার ব্যয় এবং তিনবার মেয়াদ বাড়িয়েও প্রকল্পটির কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা ইস্টার্ন রিফাইনারি। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এসপিএম প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৮০ শতাংশ।
২০১৫ এর নভেম্বরে ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এসপিএম স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৮ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় ওই বছরই প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এতে ব্যয় বাড়ে ৪৯০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় ফের বাড়ানো হয়। মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ এর জুন পর্যন্ত। মোট ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা।
দুই বার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে না পারায় গত মে মাসে প্রকল্পের মেয়াদ ফের এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রকল্পের মোট ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে তিন বছরের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে এখন লাগছে আট বছর। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পটির জন্য এখন অতিরিক্ত ২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারলে সরকারের ২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। প্রকল্পটি যথাসময়ে চালু হলে বিপিসিও আর্থিকভাবে লাভবান হতো। জ্বালানি খাতের কঠিন এই সময়ে প্রকল্পটি কাজে আসতো। তবে প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন- করোনা পরিস্থিতি, বাইরের মালামাল আসতে দেরি, কাজের পরিধি বৃদ্ধির কারণে নির্দিষ্ট সময় ও ব্যয়ে কাজ শেষ করতে পারেননি তারা।
বিপিসি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম হওয়ায় তেলবাহী বড় জাহাজগুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। ফলে এসব জাহাজ গভীর সমুদ্রে নোঙর করে ছোট লাইটারেজের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ১ লাখ মেট্রিক টন তেলবাহী জাহাজ খালাসে সময় লাগে ১০-১১ দিন।
গতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় বড় জাহাজ থেকে সরাসরি তেল স্থানান্তরের জন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এতে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনে মহেশখালী থেকে পতেঙ্গার মধ্যে সংযোগ তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
মহেশখালীর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মাধ্যমে অফশোর পাইপলাইন দিয়ে মাতারবাড়ি এলটিই পর্যন্ত এবং সেখান থেকে অনশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী এলাকায় স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে তেল জমা হবে। পরে ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল নগরীর পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আনা হবে।
প্রকল্পটি চালু হলে গভীর সমুদ্রে ১ লাখ মেট্রিক টন তেলবাহী জাহাজ খালাসে সময় লাগবে মাত্র ২-৩ দিন। কমবে তেল চুরি ও সিস্টেম লস। বছরে বিপিসি’র সাশ্রয় হবে অন্তত ৮শ কোটি টাকা। এসপিএম চালু হলে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি জ্বালানি খাতে নৈরাজ্য কমবে বলে আশা বিপিসি’র। এছাড়া ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন শোধন ক্ষমতা নিয়ে চললেও এসপিএম চালু হলে তা বাড়বে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শরীফ হাসনাত পূর্বকোণকে জানান, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে গভীর সমুদ্রে তেলবাহী বড় জাহাজ খালাসে এসপিএম প্রযুক্তি স্থাপনের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মোট ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ বর্ধিত সময় ২০২৩ এর জুনের মধ্যেই শেষ করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট