চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

ক্রিকেট একাডেমিগুলো কী করছে, কী হচ্ছে?

প্রশিক্ষণ নাকি অন্যকিছু

দেবাশীষ বড়–য়া দেবু

২ আগস্ট, ২০১৯ | ২:২২ পূর্বাহ্ণ

হ যিনি শেখাচ্ছেন তিনিই বা কতোটুকু পারদর্শী, তার যোগ্যতা আছে নাকি?
হ কয়টি একাডেমির নিজস্ব অফিস ও মাঠ আছে?
হ অনেক একাডেমি খেলোয়াড় সৃষ্টির আড়ালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

সপ্তাহের যে কোন দিন বিকেলে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে গেলেই চোখে পড়বে বাইরে বালুর মাঠে, রাস্তায় এবং লন টেনিসের জন্য নির্মিত কোর্টে একই রংয়ের ট্রাউজার ও টি শার্ট পড়ে ক্রিকেট খেলায় মত্ত একঝাঁক ক্রিকেটার। এরা সবাই ক্রিকেট শিখতে এসেছে। এখানে ৫/৬ বছর থেকে শুরু করে ১৫/১৬ বছরের তরুণরাও রয়েছে। সকলের প্রাণান্ত চেষ্টা, চোখেমুখে একটাই স্বপ্ন, ভবিষ্যতে আকরাম-নান্নু কিংবা আফতাব-নাফিস-তামিমের মতো ক্রিকেটার হওয়া। পড়াশুনাকে সামনে রেখে ক্রিকেটই ধ্যান জ্ঞান হিসেবে বেছে নিয়েছে এসব ক্ষুদে ও তরুণ ক্রিকেটাররা। তারা সকলেই কোন কোন না কোন ক্রিকেট একাডেমির শিক্ষার্থী। অবিশ^াস্য হলেও সত্যি যে, চট্টগ্রামে সবমিলিয়ে প্রায় ২৫টি’র বেশি একাডেমির মধ্যে কমকরে হলেও হাজারো শিক্ষার্থী ক্রিকেটের পেছনে সময় ব্যয় করছে। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকটি ক্রিকেটারের পেছনে তাদের মা বাবা চাচা ফুফু ও ভাইবোনেরা লেগেই রয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঐ একাডেমিতে শিক্ষার্থীরা আসলেই কি শিখছে। যিনি শেখাচ্ছেন, তিনিই বা কতোটুকু পারদর্শী বা তার সে যোগ্যতা আছে নাকি। আছে নাকি, তার ক্রিকেট কোচিং-এর উপর কোন ডিগ্রি। এছাড়া এই একাডেমিগুলো কতোটা স্বয়ং সম্পূর্ণ। ক’টি একাডেমির নিজস্ব অফিস ও মাঠ আছে। যন্ত্রপাতির কথা বাদ-ই দিলাম। অভিযোগ আছে অনেকগুলো একাডেমি খেলোয়াড় সৃষ্টির আড়ালে এটাকে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। প্রথমে ভর্ভি ফি হিসেবে এক থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়ে মাসে মাসে ৩/৪শ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। নগরীতে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমি। কিন্তু ক্রিকেটার গড়ার ক্ষেত্রে কতোটুকু সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছে এই একাডেমিগুলো?
একাডেমির আড়ালে ব্যবসার ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো সৃষ্ট কোন ক্রিকেট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক সাইফুল্লাহ চৌধুরী (লেভেল ১ কোচ ডিগ্রিধারী) পুরোপুরি একমত পোষণ করে বলেন, ক্রিকেটে এখন আর মরহুম রাশেদ আজগর চৌধুরীর মতো নিবেদিত কোন সংগঠক নেই। যারা শুধু দিতে এসেছিলেন। কিন্ত এখন ঠিক তার উল্টো। ক্রিকেটে এখন প্রচুর টাকা ও ক্রেজ, তাকে অবলম্বন করে অনেকেই অসাধু প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এতে যারা ক্রিকেট বোঝে তারাও একাডেমি গড়ছে এবং যারা বোঝেন না তারাও এগিয়ে আসছে। ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। এ জন্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থাকেও দায়ী করে তিনি আরো বলেন, তাদের চোখের সামনে ক্রিকেট ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, অথচ তারা কোন ভূমিকা পালন করছে না। তিনি আরো বলেন, একটি একাডেমি গড়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে মাঠ। অথচ কোন একাডেমির নিজস্ব মাঠ নেই। নেই লজিস্টিক সাপোর্ট। বিভিন্ন স্কুল কলেজের মাঠ ব্যবহার করারও কোন সুযোগ নেই। তিনি ক্ষোভ প্রকাষ করেই বলেন, ৪/৫টি একাডেমি ছাড়া বাকিগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (লেভেল ১/২) কোন কোচ-ই নেই।
ব্রাইট ক্রিকেট একাডেমির লেভেল -২ ডিগ্রিধারী কোচ মতুর্জা রায়হান মিঠু বলেন, যে কোন কাজে ভাল-খারাপ থাকবেই। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। কেউ আসছেন কাজ করার প্রত্যয়ে, কেইবা আসছেন অন্য আশায়। তিনিও সাইফুল্লাহ চৌধুরীর সাথে সুর মিলিয়ে বলেন, বিভিন্ন একাডেমিতে এমনও কোচ রয়েছে, তাদের ডিগ্রি থাকাতো দূরের কথা, ক্রিকেটার হিসেবেও কোন ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। তিনি আরো বলেন, এসব তদারকি করার কেউ ন্ইে। একাডেমি গঠনের ব্যাপারেও কোন বাইন্ডিংস নেই, যার ইচ্ছে হয়েছে সে-ই একাডেমি খুলে বসছে। জনাব মিঠুর মতে এখানে একটা নীতিমালা করার প্রয়োজন আছে। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা সংস্থার ক্রিকেট কমিটি এ দায়িত্ব নিতে পারে। পরিশেষে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের মানটা আরো ভাল হওয়া উচিত।
যোগাযোগ করা হলে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বিসিবি’র সাবেক পরিচালক আলমগীর মো সিরাজউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের ক্রিকেট একাডেমিগুলো রীতিমতো বিষফোঁড়। এসব একাডেমির কারণেই চট্টগ্রাম থেকে কোন জাতীয় মানের ক্রিকেটার উঠে আসছে না। এর আগে মহল্লা ভিত্তিক খেলা হতো। এখন সেটা নেই। সবাই এখন একাডেমিমুখী। কিন্তু সেখানে কি শেখানো হচ্ছে এবং কে শিখাচ্ছেন? গোড়াতেই গলদ, উঠতি বয়সেই সেখানে শিক্ষার্থীদের ভুল শেখানো হচ্ছে। এখানে যারা শেখাচ্ছেন, তারাইতো ভালভাবে ক্রিকেট জানেন না। ২য় বা ৩য় বিভাগে খেলেই কী ক্রিকেট শেখানো যায়। এ জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা যদি সহসাই এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আগামীতে কখনোই জাতীয় মানের ক্রিকেটার পাবে না চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট