চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দির একই সাথে চলছে প্রার্থনাও

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ আগস্ট, ২০১৯ | ২:২০ পূর্বাহ্ণ

ঘড়ির কাঁটা তখন একটা ছুঁই ছুঁই। মসজিদে চলছে জোহরের আজানের প্রস্তুুতি। মাঝখানে একটি মাত্র দেয়াল। আর দেয়ালের ওপারেই মাঝে মাঝে বাজছে ঢাক ঢোল ও খাসার টুং টাং শব্দ। কেউ মায়ের পূজা দিচ্ছেন। বিকেলের পূজার প্রস্তুুতি নিচ্ছেন পুরোহিত। বছরের পর বছর ধরে দুটি ধর্মের আরাধনা চললেও ধর্মীয় প্রার্থনায় কখনো ব্যাঘাত ঘটেনি। নগরীর আন্দরকিল্লা বকশির বিট থেকে ডানে মোড় নিয়ে হাজারীগলিতে প্রবেশ করে কয়েক কদম এগিয়ে গেলেই সম্প্রীতির দৃষ্টিনন্দন এ বন্ধনের দেখা মেলে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাজারিগলিতে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে শ্রী শ্রী জয়কালি মাতা মন্দির আর বায়তুল মামুর জামে মসজিদ। শুধুই মসজিদ নয়- সেখানেই রয়েছে তালিমুল কোরআন ফোরকানিয়া মাদ্রাসা। যেখানে শিশুদের কোরআন শিক্ষা দেয়া হয়।
ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকেও হাজারীগলি এত ব্যস্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল না। আগে এই এলাকায় আন্দরকিল্লার কিল্লাকে ঘিরে বড় খোলা জায়গা ছিল। এরপর ধীরে ধীরে এখানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে। সংকীর্ণ গলিতে গায়ে গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ৩৫ থেকে ৪০টি মার্কেট। এসব মার্কেটের সামনের দিকের প্রায় দেড় শ দোকানে চলে স্বর্ণের বেচাকেনা এবং ভেতরের ৪০০ দোকানে চলে ওষুধের পাইকারি ব্যবসা। হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মের মানুষই সেখানে ব্যবসায় জড়িত। ওষুধ আর স্বর্ণের ব্যবসাই মূলত হাজারীগলির অর্থনীতির ভিত গড়ে দিয়েছে।
ইতিমধ্যে মসজিদের মাইকে ভেসে এলো আজানের ধ্বনি। মুসল্লিরা নামাজের প্রস্তুুতি নিচ্ছেন। একই সময়ে পূজারী নারী পুরুষ পায়ের জুতো স্যান্ডেল খুলে প্রবেশ করছেন মন্দিরে।
জয়কালি মাতা মন্দির কমিটির সভাপতি তুষারাংসু বিমল দাশ জানান, মগ আমলেরও আগে জয়কালি মাতা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা হয়। প্রায় ২৫০ বছর আগে এ মন্দিরের জমিও জয়কালি মাতার নামে। ১৯৭৪ সালের দিকে মন্দিরের পাশেই একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা হয়। পরবর্তীতে সেখানে মসজিদও নির্মাণ হয়। দেয়ালের এপারে মন্দির আর ওপারে মসজিদ। বছরের পর বছর ধরে দুই ধর্মের প্রার্থনা হলেও আমাদের মধ্যে কখনো কোন বিষয় নিয়ে দ্বিমত হয়নি। হাজারীগলিতে হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মের ব্যবসায়ী আছেন। সবাই নিজ নিজ ধর্মের ধর্মীয় কাজে মসজিদ আর মন্দিরে আসেন।
ব্যবসায়ীরা জানান,হাজারীগলিতে প্রতিবছর জাঁকজমকভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই বাণিজ্যিক কেন্দ্রের আশপাশে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস বেশি। এই গলিতে তাই গড়ে উঠেছে প্রতিমা তৈরির কারখানা। এ ছাড়া বিক্রি হয় পূজার সরঞ্জাম ও নানা উপাচার। আছে বেশ কয়েকটি হিন্দু হোটেলও।কোনো কোনোটিতে কেবল নিরামিষই পরিবেশন করা হয়। বছরের ১২ মাসে ১৩ পূজা লেগেই আছে গলির পাঁচটি মন্দিরে। লোকনাথ মন্দির,শিব মন্দির, কালী মন্দির, দশমধ্য মন্দির ও অনুকূল ঠাকুরের মন্দিরে পূজা-অর্চনা চলে প্রতিদিন। দূর-দূরান্ত থেকে আসেন ভক্তরা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের অধীন হাজারী লেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের তথ্যমতে, ব্যবসায়ী ও স্থায়ী বাসিন্দা মিলে এই এলাকার লোকসংখ্যা ১০ হাজারের অধিক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট