চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিধিনিষেধ হয়ে যাচ্ছে কাগজের টুকরো

২২ জানুয়ারি, ২০২২ | ১২:৫৯ অপরাহ্ণ

অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু

বিধিনিষেধ হয়ে যাচ্ছে এখন কাগজের টুকরো, কারণ সেগুলোর কোন প্রয়োগ নেই। ভেবে দেখেন যদি সাধারণ মানুষকে শুধু বলা হয়- চুরি করবেন না, তাহলে কি বাংলাদেশে চুরি বন্ধ হয়ে যাবে? মানুষকে যদি বলা হয়- আপনার দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন, তাতে কি চুরি বন্ধ হবে? হবে না। অর্থাৎ চুরি বন্ধে সাধারণ মানুষকে যেমন দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে, পাশাপাশি পুলিশেরও আইনপ্রয়োগের দায়িত্বটুকু পালন করা লাগবে। মানুষকে মাস্ক পরতে হবে, এটা তার দায়িত্ব। কিন্তু না পরলে সাজাও দিতে হবে। মহামারী মোকাবিলার সময়ে বিধিনিষেধ না মানা অন্যান্যদের জন্যে স্বাস্থ্য বা প্রাণের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। অতএব সে ধরনের সকল কাজকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের শাস্তি প্রদান করতে হবে।

অর্থাৎ বিধিনিষিধকে কাগজের টুকরো না বানিয়ে এটার প্রয়োগ করতে হবে। মাস্ক না পরাকে সামাজিক লজ্জায় পরিণত করতে হবে। মাস্ক যেন পোষাকের অংশ হয়ে উঠে, সেরকম একটা জোরালো প্রচারণা চালাতে হবে। বিনামূল্যে অন্তত ৫ কোটি মাস্ক বিতরণ করতে হবে, ফলে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী হবে। তারপরেও কেউ মাস্ক না পরলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি করা সহজ ও বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।

ওমিক্রন মোকাবিলার কৌশল হিসেবে ঘোষিত বিধিনিষেধগুলো যথেষ্ট স্পষ্ট নয়। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে বাস্তবায়নযোগ্যও নয়। রেস্টুরেন্ট, মেলা, পর্যটনকেন্দ্র বা জনসমাগম হয় এমন অনুষ্ঠানে গেলে টিকা সনদ এবং করোনা নেগেটিভ সনদ দেখানোর কথা বলা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে- এই নজরদারির কাজটি বাস্তবায়ন করবে কে? এতো জনবল কি আমাদের আছে? আবার গণপরিবহণ বা রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের শতকরা ৩৫ ভাগও যখন টিকা নিতে পারেনি, তখন সেসকল ক্ষেত্রে টিকা সনদের বাধ্যবাধকতাও তো বাস্তবানুগ বা নৈতিকভাবে সিদ্ধ নয়। সবমিলিয়ে বিধিনিষিধগুলো অধিকাংশক্ষেত্রেই প্রয়োগযোগ্য বা বাস্তবায়নযোগ্য হয়ে উঠছে না। সাগরে ঢেউ আসলে আমরা মাথানিচু করে ফেলি বা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিই। ওমিক্রনের ঢেউ মোকাবিলায় যারা বেশি ঝুঁকিগ্রস্ত, অর্থাৎ শিশু-কিশোর ও বয়স্ক-অসুস্থ মানুষদের সেভাবেই নিরাপদ বা সুরক্ষাবলয়ে আগলে রাখতে হবে। যারা এখনও টিকা পায়নি, তাদের অতিদ্রুত টিকার আওতায় আনতে হবে।

শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়- মেলা, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ বড় জনসমাগম হয় এমন সবকিছু চার সপ্তাহের জন্য একেবারে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের অসুস্থ মানুষের প্রাণরক্ষার লড়াই চালানোর সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে তুলনামূলক কম ক্ষতির বিনিময়ে মহামারীর এবারের ঢেউটি পার হতে পারবো।

 

লেখক: চেয়ারম্যান, ফার্মাকোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট