চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মতামত

বিদ্যুৎ উৎপাদনে দূরদর্শী ও পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগ জরুরি

ডা. মো. সাজেদুল হাসান

২৩ ডিসেম্বর, ২০২১ | ২:৪০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সরকারের অন্যতম সাফল্য বিদ্যুৎ উৎপাদন। ২০০৯ সালে ৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে বিগত ১২ বছরে ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উৎপাদন ক্ষমতায় পৌঁছেছে। এর এক বড় অংশই উৎপাদন হচ্ছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কিন্তু বিতরণে ক্রটি এবং সিস্টেম লসের কারণে এর পূর্ণ সুফল জনগণ এখনো পাচ্ছে না। স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে দেশের বিদ্যুৎ কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ভেড়ামারা ডিজেলনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপর। বর্তমানে তেল গ্যাসের মত ফসিলনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আগামী ৫০ বছরের চাহিদা সামনে রেখে কয়লা এবং পারমানবিক শক্তিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। উন্নয়নের জন্য বিদ্যুতের বিকল্প নেই কিন্তু এই জীবাশ্ম নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে।

শিল্প কারখানার আধিক্যের কারণে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলক বেশি সেটা মেটানোর উদ্দেশ্যে ২০৩৫ সাল নাগাদ ৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তিনটি মেগাপ্রকল্প চলমান। এই প্রকল্পগুলোর আওতায় সাবস্টেশন নির্মাণ, নবায়ন, উন্নীতকরণ, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ট্রান্সফর্মার স্থাপনের মত গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও নগরবাসীর জন্য স্বস্তিদায়ক আন্ডারগ্রাউন্ড ডাবল সার্কিট কেবলস্থাপন এবং প্রিপেইড মিটার প্রদানের কাজও চলছে। কর্তৃপক্ষের আশ্বাস গৃহীত প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে মানসম্পন্ন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। আমরা এই আশাবাদকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও দূরদর্শী ও পরিবেশ বান্ধব করার জন্য উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান করি।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, গ্যাস, তেলের সরবরাহ এবং মজুদ চিরস্থায়ী নয়। এখনই যদি নতুন প্রযুক্তির সন্ধান না করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সংকটে পড়ার আশঙ্কা বিদ্যমান। তাছাড়া এই জীবাশ্মনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করবে। সুতরাং বিকল্পের সন্ধানে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি খুঁজতে হবে। সেইক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। তিনটি বিকল্প উৎস বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।

১। হল্যান্ডের মত বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূল জুড়ে উইন্ডমিল স্থাপন।
২। কৃষি অনুপযুক্ত পার্বত্য অঞ্চলে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন
৩। গৃহস্থালি ও পয়ঃবর্জ্য নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কিন্তু চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল সাইক্লোন প্রবণ হওয়ায় উইন্ডমিল স্থাপন ঝুঁকিপূর্ণ। পার্বত্য অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান জুম চাষে পতিত জমি হ্রাস ও সূর্যকিরণের সঠিক এঙ্গেলের অনিশ্চিত। এছাড়া ভূমি উন্নয়নে ব্যবহৃত বর্জ্যরে দখল নিয়ে রয়েছে নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেট। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গৃহস্থালি ও পয়ঃবর্জ্য আমাদের জন্য মূল্যবান সম্পদ। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও এর অবশিষ্ট দিয়ে উৎপন্ন হতে পারে জৈব সার এবং বাকিটা দিয়ে স্যানিটারি ল্যান্ড ফিলিং। তবে এর সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন দূরদর্শী পরিকল্পনা, সমন্বিত উদ্যোগ আর গবেষণা। সরকার, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, সিটি কর্পেরেশন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। ইয়াংওয়ান গ্রুপের মত দৃষ্টান্তমূলক শিল্প কারখানা ও বাসা বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্যও জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

ডা. মো. সাজেদুল হাসান
সাবেক অতিরিক্ত সচিব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট