চট্টগ্রাম শনিবার, ১১ মে, ২০২৪

মশিউরের ইশারায় চলে জঙ্গল সলিমপুর

নাজিম মুহাম্মদ

৭ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:০১ অপরাহ্ণ

তিনি যা বলেন তাই হয় জঙ্গল সলিমপুরে। তিনি সেখানে স্বঘোষিত রাজা। তাঁর কথার বাইরে কারো যাবার সুযোগ নেই। বিচার-সালিশ, অবৈধ বিদ্যুৎ,সরকারি জমি দখল-বেদখল,চাঁদাবাজি, খুন, ইট-বালি, সমিতি ও শাখা সমিতির নামে চাঁদাবাজি হেন কাজ নেই তার ইশারায় হয় না। তিনি হচ্ছেন হত্যা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে অভিযুক্ত চাঞ্চল্যকর ছোটন হত্যাসহ ২৭ মামলার আসামি কাজী মশিউর রহমান। তাঁর রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। মশিউরের অনুসারী প্রত্যেকে একাধিক মামলার আসামি। র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মোস্তফা জামান জানান,জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় মশিউরের নিজস্ব বাহিনী আছে। পাহাড়ে খাস জমি দখল, কেনাবেচা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে মশিউর ও তার বাহিনী জড়িত। ছিন্নমূল সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দেয় মশিউর।
মাটিতে পুঁতে ফেলা হয় লাশ : ২০১৬ সালে বাসা থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শাহাদাত হোসেন ছোটন নামে এক যুবককে। হত্যার পর লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। ঘটনার ১৪ মাসের মাথায় ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড়ে মাটি চাপা দিয়ে রাখা ছোটনের কঙ্কাল উদ্ধার করে সিআইডি।
১০ জুলাই (২০১৬) রাত বারোটার সময় ছলিমপুর ওভারব্রিজ এলাকার আমানত উল্লার ভাড়া বাসা ঘিরে ফেলে মশিউরের অনুগত কামাল, রানা,সালাউদ্দিন, কালু, রফিক, গিট্টু জাহাঙ্গীর, মামুন, কাওসার,্ আল আমিন, সোহেল, ওসমান ও বার্মা সায়েম। ওই বাসাতেই ছিল ছোটন। বাসা ঘিরে ফেলার বিষয়টি বুঝতে পেরে ঘর থেকে বের হয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে ছোটনকে তারা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আধমরা করে একটি ভ্যান গাড়িতে তুলে জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমুলের ভেতরে স্কুল মাঠে নিয়ে দলনেতা মশিউরের কাছে হাজির করে।
ছোটন মারা যাবার পর মশিউর ও আরমান বলেন, যেভাবে হোক ছোটনের মৃতদেহ লুকিয়ে ফেলতে হবে। মশিউরের নির্দেশে রানা, কালু, রফিক, মামুন, কামাল, সালাউদ্দিন মিলে ছোটনের মৃতদেহ জঙ্গল সলিমপুর সিঙ্গাপুর নাসিরের মালিকানাধীন ক্যারাটি পাহাড়ে নিয়ে মাটির নীচে গর্ত করে পুঁতে ফেলে। বিষয়টি পুলিশ জেনে গেছে সন্দেহে দু’দিন পর তারা রাতের বেলা মৃতদেহটি তুলে বস্তায় ভরে ছিন্নমূলের বহদ্দারহাট শাখার পাহাড়ের নীচে এনে রেখে দেয়। পরে ক্যারাটি পাহাড়ের পাদদেশে মাটির নীচে দ্বিতীয় দফায় পুঁতে রাখে। ঘটনার এক বছর পর ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ক্যারাটি পাহাড়ের পশ্চিমে কালিছড়া এলাকা থেকে মাটির নীচে পুঁতে রাখা ছোটনের কংকাল উদ্ধার করে সিআইডি। পরবর্তীতে ছোটনের মা বাবার ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করে ছোটনের লাশ চিহ্নিত করে সিআইডি।
বিদ্যুৎ ও হোল্ডিং ট্যাক্স : অনুসন্ধানে জানা যায়,জঙ্গল সলিমপুরে এক লাখ ২৫ হাজার মানুষের পরিবারের মধ্যে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে চারটি মিটার থেকে। এর মধ্যে একটি মিটার র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত ছিন্নমুল নেতা আক্কাস উদ্দিন, দুটি মশিউর রহমান ও একটি জামাল হোসেন প্রকাশ অন্ধ জামালের মালিকানাধীন। এ চারটি মিটার থেকে পুরো এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ টানা হয়েছে। সেখানে বাসা থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নেয়া হয় ১১ টাকা ও দোকানে ১৩ টাকা। যাকে বাণিজ্যিক হিসাবে অবহিত করা হয়। প্রতিটি নতুন লাইন সংযোগ দিতে নেয়া হয় ৩০ হাজার, উন্নয়ন ফি এর নামে প্রতি পরিবার থেকে নেয়া হয় মাসে ২’শ টাকা। প্লট বদল ফি জমির মুল অনুসারে ক্ষেত্রভেদে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নেয়া হয়। প্রত্যেক পরিবার থেকে বছরে ৫’শ থেকে এক হাজার টাকা ট্যাক্স নেয়া হয়।
১০ সমাজে ১১৭ শাখা : জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি খাস জমিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস করছে এক লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। পুরো সলিমপুরকে ভাগ করা হয়েছে দশটি সমাজে। এসব সমাজের শাখা রয়েছে ১১৭টি।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট