চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

তিন কারণে বাজার পাচ্ছে না পার্বত্যাঞ্চলের ফলমূল

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২০ অক্টোবর, ২০২১ | ১২:৫৯ অপরাহ্ণ

তিন পার্বত্য অঞ্চলে (বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি) ফল-ফলাদি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। গত ১০ বছরে সবজি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ফল উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণের কাছাকাছি। এসব ফলমূলের বড় বাজার রয়েছে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে।

রপ্তানিযোগ্য ফলমূলও উৎপাদিত হচ্ছে এখানে। কিন্তু নানা সংকটের কারণে বাজার ধরে রাখতে পারছে না কৃষক ও খামারিরা। চট্টগ্রাম কৃষক বাজারের সাধারণ সম্পাদক ও নিজামপুর এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘পরিবহন, পার্কিং, বড় বাজার, গুদাম ও হিমাগার না থাকায় পার্বত্য অঞ্চলের উৎপাদিত ফলমূলের বাজার ধরে রাখা যাচ্ছে না। এসব সংকটের কারণে ফলমূল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভোক্তা, কৃষক ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলে কৃষক ও সরকার উভয়ই উপকৃত হবে। উৎসাহিত হবেন কৃষক ও খামারি’। মাঠ পর্যায়ের কৃষকেরা জানান, মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পাওয়া যায়। কিন্তু ভরমৌসুমে উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যায়। তখন পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত ফলমূল ও সবজির দাম অস্বাভাবিক কমে যায়। কাক্সিক্ষত দর না পেয়ে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই পচে যায়। এতে নিরুৎসাহিত হয় কৃষক। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও ভোক্তা।

আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় সবজি ও ফলফলাদির ভালো চাহিদা থাকলেও সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং সরকারের নজরদারির অভাবে মার খাচ্ছে রপ্তানিখাতেও। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে যে হারে ফলের উৎপাদন বাড়ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আয়ের একটা বড় অংশ আসবে ফল বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে।
কৃষক বাজারের সাধারণ সম্পাদক ও নিজামপুর এগ্রোর মালিক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘পার্বত্য জেলা থেকে সরবরাহ করা ফলমূল বিক্রি করতে না পারলে মান নষ্ট হয়ে যায়। কম দামে বিক্রি করতে হয়। লোকসান গুনতে হয় কৃষক ও খামারিদের। বড় বাজার বা সংরক্ষণের গুদাম ব্যবস্থা থাকলে বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এজন্য ষোলশহর বিএডিসি’র পরিত্যক্ত জায়গায় বড় আকারের কৃষক বাজার গড়ে তোলা হলে কৃষক ও খামারিরা উপকৃত হবে। রিয়াজউদ্দিন বাজারের মতো দেশীয় ফলমূল্যের বড় আড়ত হবে। সরকার নিজস্ব উদ্যোগ অথবা কৃষকদের মাধ্যমে তা পরিচালনা করলে সরকার ও কৃষক লাভবান হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় আনারস, কাঁঠাল, কলার ব্যাপক চাষ হয়। সাম্প্রতিককালে আম চাষে বিপ্লব ঘটেছে। এছাড়াও কমলা, মাল্টা, কাজু বাদামের মতো দামি ফলের চাষাবাদও হচ্ছে।
রাঙামাটি : জেলায় ২০১০-২০১১ সালে আম উৎপাদন হয়েছে ২২ হাজার ৩২৩ টন। কাঁঠাল ৬৮ হাজার ৫৪৩ টন, লিচু ৫ হাজার ৬১৫ টন, কলা এক লাখ ১৮ হাজার ৬১৫ টন, তরমুজ ৭১৩৯ টন ও আনারস ৪৮৯৪৩.৩ টন। ২০১৯-২০২০ সালে আম উৎপাদন হয়েছে ৩৯ হাজার ৮৫৭ টন। কাঁঠাল ৯৬ হাজার ৭৪৪ টন, লিচু ১৭৪৯৮ টন, কলা দুই লাখ ৪৩ হাজার ২৭৬ চন, তরমুজ ১০ হাজার ৮৭৮ টন ও আনারস ৫৫ হাজার ৮৫০ টন।
রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, পাহাড়ে উৎপাদিত ফলমূল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ করছে। কিন্তু নানা সংকটের কারণে বাজার ধরে রাখা যাচ্ছে না। ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।
বান্দরবান : জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ২০১৫-১৬ মৌসুমে দেখা যায়, ৪৪ হাজার ২৪১ হেক্টর জমিতে ফলের আবাদ করা হয়। এতে ৮ লাখ ১৭ হাজার ১৯২ টন ফল উৎপাদিত হয়। ২০১৯-২০ মৌসুমে জমির পরিমাণ বেড়ে আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৭১ হেক্টর জমি। ফল উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৫ টন।
রপ্তানিও মৌসুমভিত্তিক : বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে সবজি রপ্তানি হয়। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে বেশি রপ্তানি করা হয়। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বেশির ভাগ সবজি মৌসুমভিত্তিক রপ্তানি করা হয়। কিছু সবজি সারাবছর রপ্তানি করা হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ি কাঁঠাল বেশি রপ্তানি হয়। এছাড়াও লেবু, কালো জাম, জলপাই, চালতা, আখও রপ্তানি করা হয়।
রপ্তানিকারকদের সংগঠন চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রটস ভেজিটেবল এন্ড প্রোডাক্টস রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি মাহবুব রানা পূর্বকোণকে বলেন, ‘বড় বাজার, গুদাম ও হিমাগার না থাকায় মৌসুম ছাড়া ফলমূল-সবজি রপ্তানি করা যাচ্ছে না’।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট