চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

সীতাকুণ্ডে করোনা-মৌসুমি জ্বরের তীব্রতায় আতংক

সৌমিত্র চক্রবর্তী

২৯ জুন, ২০২১ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে করোনা ভাইরাস ও মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ ভয়াবহ হারে বেড়েছে। এ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গত কয়েকদিনে এখানে প্রতিদিন ২৫-৩০ জন কিংবা তারও বেশি সংখ্যক মানুষ করোনা আক্রান্ত হবার পাশাপাশি শত শত মানুষ মৌসুমি জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। এতে সর্বত্র আতংক দেখা দিয়েছে। তবে এতে আতংকিত না হবার পরামর্শ দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেছেন, মঙ্গলবার (আজ) থেকে সীতাকুণ্ড হাসপাতালে দুই ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়ে দ্রুত সুচিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডে বেশ কিছুদিন ধরে মৌসুমি জ্বর ও করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহের প্রতিদিন এখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। একই সাথে বেড়েছে মৌসুমি জ্বর-সর্দি-কাশি আক্রান্তের হারও। করোনা আক্রান্তের সংখ্যার তথ্য উপজেলা হাসপাতালে থাকলেও মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তের সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় সীতাকু-ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ জন রোগী। এছাড়া প্রত্যেক ইউনিয়নে অসংখ্য মানুষ বর্তমানে জ্বর-সর্দি ও কাশিতে ভুগছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই করোনা পরীক্ষা করাতে আসছেন না। তবে করোনা আতংকের কারণে কেউ উপজেলা সরকারি হাসপাতাল আবার কেউবা বেসরকারি ক্লিনিক বা পল্লী চিকিৎসাকেন্দ্রে আসা চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলার কুমিরা সুলতানা মন্দির এলাকায় অবস্থিত রেজিস্ট্রার্ড পল্লী চিকিৎসক ডা. সন্তোষ চক্রবর্তী জানান, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কুমিরা এলাকায় মৌসুমি জ্বর ও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বড়েছে। তিনি গত রবিবারও অন্তত ১৫ জন জ্বর-সর্দি-কাশির রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন। সোমবারও (গতকাল) চিকিৎসা দিয়েছেন অন্তত ২০ জনকে। এভাবে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি জানান।
জ্বর আক্রান্ত স্থানীয় সাংবাদিক কৃষ্ণ চন্দ্র দাস। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, আমি গত তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছি। জ্বর কখনো ৯৯ আবার কখনো ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠছে। সাথে আছে সর্দি এবং হালকা কাশি। মাঝে মাঝে জ্বর কমে গেলেও খুসখুসে কাশি কিন্তু একেবারে কমে যাচ্ছে না। এজন্য তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদের সাথে ফোনে কথা বলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মঙ্গলবার (আজ) তিনি করোনার নমুনা দেবেন বলে জানান।
এদিকে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বর্তমানে উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের জ্বর আক্রান্তের সংখ্যা প্রচুর বেড়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ক’জন করোনা আক্রান্ত তা নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না। কারণ, অধিকাংশ মানুষই করোনার নমুনা দিতে আসেন না। আবার সীতাকুণ্ড হাসপাতালে এসে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলেও ৬দিনেও রিপোর্ট পাননি বলে অভিযোগ করেছেন রোগী পৌরসদরের মধ্যম মহাদেবপুর তুলাতলী মন্টু সরকারের বাড়ির রিগান দাশ। তিনি বলেন, আমি জ্বর ও কাশির কারণে গত ২২ জুন সীতাকুণ্ড হাসপাতালে নমুনা দিয়ে ২৭ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট পাইনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, করোনা ও মৌসুমি জ্বর অনেক বেড়েছে একথা সত্যি। তবে আমরা সকল রোগীকে পরামর্শ দিই যে হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ রেখে চিকিৎসা নেবার জন্য। তাহলে অবশ্যই সুফল পাবেন রোগীরা। তিনি বলেন, আগে আমরা করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে পাঠাতাম। সেখান থেকে রিপোর্ট আসা সাপেক্ষেই রোগীদের ফলাফল জানাতে পারতাম। কিন্তু মঙ্গলবার (আজ) থেকে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা সংগ্রহ করে এখানেই পরীক্ষা করা হবে, মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই রোগীরা তার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারবে। এতে রোগীদের আরো দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট