চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

হালদায় আরো ৬ আধুনিক হ্যাচারি

মোহাম্মদ আলী 

৬ জুন, ২০২১ | ১:১২ অপরাহ্ণ

হালদা পাড়ে নতুন করে আরো ৬টি আধুনিক মানের হ্যাচারি নির্মাণ এবং পুরাতন ৬ হ্যাচারিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ও রেণু উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে ডিম সংগ্রহকারীদের সুযোগ-সুবিধাও। এদিকে নির্মাণের প্রথম বছরে সুফল মিলছে বেসরকারিভাবে নির্মিত আইডিএফ’র হ্যাচারি।

হালদা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় নদীর পাড়ে ৬টি হ্যাচারি নির্মাণ করে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রায় এক যুগ আগে চালু হওয়া এসব হ্যাচারির অবস্থান হচ্ছে রাউজানের কাগতিয়া, গহিরার মোবারকখীল ও পশ্চিম গহিরা এবং হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাট বড়–য়াপাড়া।

কিন্তু নির্মাণগত ত্রুটি, সংস্কার, তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হ্যাচারিগুলো থেকে প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না ডিম সংগ্রহকারীরা। এর মধ্যে সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে কাগতিয়া হ্যাচারি। অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পশ্চিম গহিরা হ্যাচারিও। এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ডিম সংগ্রহকারীদের। বর্তমানে রাউজানের গহিরার মোবারকখীল, হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাট বড়–য়াপাড়ার হ্যাচারি চালু থাকলেও নিয়মিত সংস্কারের অভাব এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শাহ মাদারি হ্যাচারি থেকে প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না ডিম আহরণকারীরা। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৭ মে হালদা থেকে প্রথম দফায় ডিম আহরণের পর রেণু ফোটাতে গিয়ে শাহ মাদারি হ্যাচারিতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয় ডিম সংগ্রহকারীরা। হ্যাচারিতে নিজস্ব পুকুর ও গভীর নলকূপ না থাকায় হালদার লবণ পানি ব্যবহারের কারণে বেশিভাগ রেণু মরে যায়। এতে ক্ষতির শিকার হয় ডিম সংগ্রহকারীরা। এ অবস্থায় বর্তমান ৬টি হ্যাচারি সংস্কার করে আধুনিকায়ন এবং নতুন করে আরো ৬টি হ্যাচারি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় মৎস্য অধিদপ্তর।

এদিকে বর্তমান ৬ হ্যাচারি ছাড়াও হালদাতে চলতি বছর থেকে চালু হয়েছে একটি নতুন হ্যাচারি। রাউজানের পশ্চিম বিনাজুরী এলাকায় নদীর পাড়ে ৪ একর জমির উপর হ্যাচারিটি নির্মাণ করে বেসরকারি সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউ-েশন (আইডিএফ)। নতুন এ হ্যাচােিত ১০টি পাকা সিস্টার্ণ, ৮টি মাটির কুয়া এবং ৫টি পাকা সারকুলার ট্যাংক রয়েছে। রেণু ফোটানো ছাড়াও এ হ্যাচারিতে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

এদিকে সরকারিভাবে নতুন হ্যাচারি নির্মাণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার ফারহানা লাভলী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘হালদা পাড়ে নতুন করে আরো ৬টি আধুনিক মানের হ্যাচারি নির্মাণ এবং পুরাতন ৬ হ্যাচারিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ও রেণু উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক প্রফেসর ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘হালদায় নতুন হ্যাচারি নির্মাণে গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে। সাধারণত আমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমাতে হালদাতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময়ে নদীতে জোয়ারের পানিতে লবণ পানি প্রবেশ করে। তাই প্রতিটি হ্যাচারিভিত্তিক পুকুরের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যাতে ডিম সংগ্রহকারীরা রেণু ফোটানোর সময় নদীর পানির পরিবর্তে পুকুরের পানি ব্যবহার করতে পারে।’

এদিকে আইডিএফ’র জোনাল ম্যানেজার শাহ আলম বলেন, ‘পশ্চিম বিনাজুরীর আইডিএফ’র হ্যাচারিতে চলতি বছর প্রথম দফায় ৩৮০ কেজি ডিম দেওয়া হয়। এসব ডিম থেকে ১২ কেজি রেণু উৎপাদন হয়। দ্বিতীয় দফায় ২২০ কেজি ডিম দেওয়া হয়েছে। রবি ও সোমবার রেণুর পরিমাণ জানা যাবে। ডিম সংগ্রহকারীদের এ হ্যাচারিতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’

আইডিএফ’র নির্বাহী পরিচালক জহিরুল আলম বলেন, ‘হালদা দীর্ঘদিন নানামুখী কাজ করছে আইডিএফ। এর পাশাপাশি রুই জাতীয় মাছের প্রজনন বৃদ্ধিসহ হালদার সুফল বাড়ানোর লক্ষ্যে আইডিএফ’র হ্যাচারিটি নির্মাণ করে। এ হ্যাচারিতে গবেষণা, প্রশিক্ষণসহ বহুমুখী কাজ থাকবে। যাতে হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা উপকৃত হয়।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট