চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

ভেঙে গেছে শরইতলা স্কুল

সাগরের ঢেউয়ে বিলীন দুটি ওয়ার্ড

মহেশখালী জোয়ার আতঙ্কে ধলঘাটার দুই গ্রামবাসী

এ.এম হোবাইব সজীব, মহেশখালী

২৯ জুন, ২০১৯ | ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নের বনজামিরা ও শরইতলা গ্রামবাসীর দিন কাটে জোয়ারের পানি আতঙ্কে। সম্প্রতি ধলঘাটা ইউনিয়নের শরইতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জোয়ারের পানির ধাক্কায় ভেঙে যাওয়ায় আতঙ্ক বেড়েছে স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা মরিয়ম খাতুন (৬০) জানান, ঘুমের মধ্যেই জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় আতঙ্কে রাত কাটে দ্বীপবাসীর। শরইতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জোয়ারের পানির ধাক্কায় ভেঙে যাওয়ায় ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের অন্য স্কুল গিয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির ছাত্র মো. ইয়াসিন।
গত ২৩ জুন সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়নের বনজামিরা ও শরইতলা বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে গেছে। ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে মূলত ধলঘাটায় কোন টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত না হওয়ায় ক্রমাগত সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের করাল গ্রাসে ধীরে ধীরে এই দুটি ওয়ার্ড সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে গেছে। এতে এই দুটি ওয়ার্ডের লোকজন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ও প্রতিদিনের জোয়ারভাটার থাবায় বিচ্ছিন্ন হতে পারে ধলঘাটার অধিকাংশ এলাকা। এ অবস্থায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। না হয় শীঘ্রই ধলঘাটা ইউনিয়নের উত্তর সুতরিয়া ও বাজার রক্ষাবাঁধ পানির কবলে পড়ে ভেঙে গিয়ে দক্ষিণ সুতরিয়া বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের। স্থানীয় আবুল হোসেন বলেন, ক্রমান্বয়ে ধলঘাটা ইউনিয়নটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মানচিত্র থেকে।
জানা গেছে, ধলঘাটায় মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, ধলঘাটা অর্থনৈতিক অঞ্চল, সর্বোপরি বন্দরের মতো মেগা প্রকল্প স্থাপনের সুবাদে ধলঘাটার চারদিকে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হবে- এমন স্বপ্ন ধলঘাটাবাসী দেখলেও তা এখন শুধু কাল্পনিক স্বপ্ন বলে মনে করেন এলাকাবাসী। কেননা, মেগা প্রকল্পগুলো শুধুমাত্র তাদের অধিগ্রহণকৃত জমি এবং প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য যেটুকু নিরাপত্তা বেষ্টনী দরকার, সেইটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং এর বাইরে ধলঘাটার বেড়িবাঁধ বা সড়ক নির্মাণে তাদের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে জানান স্থানীয়রা। এতে ধলঘাটা ইউনিয়ন আগে যেমন বেড়িবাঁধহীন ছিল, তেমনি রয়ে যাবে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।
ধলঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, ধলঘাটার চারদিকে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বর্তমান সাংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার তদবির করা হয়েছে এবং বর্তমানেও চেষ্টা অব্যাহত আছে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য টেন্ডার হওয়ার কথা মুখে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটছে না।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জামিরুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ধলঘাটা অরক্ষিত হওয়ার বিষয়টি আমার নজরে রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট