গেল এপ্রিল মাসের শুরুতেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড শতভাগ পূর্ণ ছিল রোগীতে। ১০টি আইসিইউ শয্যার সবগুলোতেই ছিল রোগী ভর্তি। অপেক্ষা করেও অনেকেই পাননি আইসিইউ শয্যা। অথচ মাস না পেরুতেই চিত্র পাল্টেছে। গতকাল বুধবারের প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বর্তমানে ওয়ার্ডের সাড়ে ৫৭ শতাংশ শয্যাই খালি পড়ে আছে। এখনও ৬টি আইসিইউ শয্যা খালি পড়ে আছে।
শুধুমাত্র বৃহৎ এ হাসপাতাল নয়, চট্টগ্রামের কোভিড ডেডিকেটেড জেনারেল হাসপাতালের চিত্রও একই। মাসখানেক আগেও যেখানে রোগীতে কোভিড ওয়ার্ড টইটুম্বর, সেখানে বর্তমানে প্রায় অর্ধেক শয্যাই খালি। ১৮টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে রোগী আছে মাত্র আটটিতে। বাকি দশটি শয্যাই খালি পড়ে আছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মার্চ ও এপ্রিল মাসে নগরীর সরকারি বেসরকারি প্রতিটি হাসপাতালেই কোভিড রোগীদের চাপ ছিল কয়েকগুণ। অনেক হাসপাতালে শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি ছিলেন। আইসিইউ শয্যা পাওয়াটাও ছিল দুষ্কর। তবে চলতি মাসের শুরুতে এসে সেই চিত্র বদলাতে শুরু করেছে।
কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, একসময়ে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে শারীরিক অবস্থা খারাপ ছিল বেশি। বর্তমানে রোগীদের মধ্যে রোগের তীব্রতা কম। যারাই হাসপাতালে আসছেন, তাদের বেশিরভাগই জটিল রোগী। অন্য সকলেই বাসায় থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। ফলে রোগীদের চাপ অনেক কমেছে হাসপাতালগুলোতে। ফলে হাসপাতালের সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ শয্যা দুটোই ফাঁকা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি গত মাসে চেয়ে তুলনামূলক ভালো। একসময়ে সংকট থাকলেও সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতালেও কোভিড শয্যা বেড়েছে। যদিও গেল মাসে রোগী ভরপুর ছিল প্রতিটি হাসপাতালেই।
তবে চলতি মাসে এসে হাসপাতালে রোগী ভর্তি কম হচ্ছে। রোগের তীব্রতা না বাড়লে এখন আর কেউ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। বাসাতেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রামে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাগুলো মধ্যে ২৮টি হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। এদের মধ্যে সিএমপির বিদ্যান্দ হাসপাতালসহ চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে সর্বমোট ২৩ টি। যাতে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় শয্যা রয়েছে ৬৫০ টি এবং সরকারি হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৯৫০টি। সবমিলিয়ে এ ২৮ হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসায় সাধারণ শয্যা রয়েছে ১ হাজার ৬শ’টি। এছাড়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) শয্যা রয়েছে দেড় শতাধিক।
গতকালের তথ্য বলছে, ১ হাজার ৬শ’ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছেন মাত্র ৬০৯ জন। অর্থাৎ বাকি ৯৯১ টি শয্যাই রোগী শূন্য। দেড়শ’ শয্যার আইসিইউতে রোগী ভর্তি ছিল মাত্র ৭৭ জন। তাতেও অর্ধেকের বেশি শয্যা ফাঁকা।
সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিত্র তুলে ধরে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বর্তমানে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় প্রস্তুত থাকা ৬১ দশমিক ৯৩ শতাংশ সাধারণ শয্যাই ফাঁকা। পাশাপাশি একসময়ে আইসিইউ শয্যার জন্য হাহাকার থাকলেও এখন ৫১ দশমিক ৩৩ শতাংশ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না। তবে সার্বিক পরিস্থিতি ভালো রয়েছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
পূর্বকোণ/এএ