চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

উইমেন পুলিশ এওয়ার্ড প্রদান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কাঁটা তারের বেড়া হবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রিফাত হত্যায় জড়িত কাউকে ছাড় নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ জুন, ২০১৯ | ২:২২ পূর্বাহ্ণ

দেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে উইমেন পুলিশ এওয়ার্ড প্রদান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতিগত নিধনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতর্কিতভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা ঢুকে পড়বে আমাদের ধারণা ছিল না। ধারণা থাকলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম।
তিনি আরো বলেন, আপনার জানেন, সবাই দেখেছেন। সেদিন লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাফ নদীর তীরে অপেক্ষা করছিল। প্রধানমন্ত্রী ও তার বোনের চোখে অশ্রু ঝড়েছে। তিনি তাদের প্রবেশ করতে দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি বড় একটি চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেবল নিরাপত্তা নয়, ওই জায়গার বন উজাড় হয়ে গেছে। সাময়িক অনেক পরিবর্তনও এসেছে। তবে এখনও আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি। রোহিঙ্গারা যেনো ক্যাম্পের বাহিরে যেতে না পারে, সেজন্য কাঁটা তারের বেড়া করতে চেয়েছিলাম তাও করতে পারিনি। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাঁটা তার ব্যবহার করব, যাতে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাহিরে যেতে না পারে। একইসাথে ক্যাম্পের ভিতরে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার একটি পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা এতটুকু আশ্বাস দিতে পারি তারা কোনো ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডে জড়ানোর আগে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে।
বরগুনায় প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, দিন-দুপুরে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দুই জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি। এছাড়া দেশের যুবসমাজকে রক্ষায় মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দেন।
পুলিশে নারী সদস্য ৫০ ভাগ করার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা-উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী থাকে ৬০ ভাগ মেয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রেও পুরুষের সঙ্গে সমানতালে অবদান রাখছে নারীরা। কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমরা তাদের হারিয়ে ফেলছি। হারিয়ে ফেলার কারণ সামাজিক নিরাপত্তা। আর এই সামাজিক নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘তাই আমি অনুরোধ জানাবো ২০৩০ সালের মধ্যে নারী পুলিশ সদস্য যেন ৫০ ভাগে উন্নীত করা হয়।
উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী-পুরুষের ভেদাভেদ কমিয়ে আনছেন। বৈষম্য দূর করে আমরা এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল আমরা নির্দিষ্ট সময়ের আগে অর্জন করতে সক্ষম হই। বিশ্বাস করি টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রাও সময়ের আগেই অর্জন করতে পারব। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগগুলো নিচ্ছেন তা দেখে আমরা অভিভূত। মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেন নারী ক্ষমতায়নে কাজ করতে। তিনি নারী ক্ষমতায়নে যেভাবে নারী নীতিগুলো বাস্তবায়ন করছেন তা নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। নারী ক্ষমতায়নে তিনি নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন। আমরা সেই বিপ্লবকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যেসব সেক্টরে উন্নয়ন হয়েছে, সব ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে সব সূচকে পেছনে ফেলেছে। কয়েকটি সূচকে ভারতকেও বাংলাদেশ পেছনে ফেলেছে। পুলিশে বর্তমানে যারা নারী সদস্য আছেন, আপনাদের কৃতিত্বের কারণে এ বাহিনীতে নারী সদস্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, জাতিসংঘে নারী পুলিশের সদস্যের সংখ্যা ১০ শতাংশ। প্রায় এক হাজার ৪০০ নারী পুলিশ সদস্য জাতিসংঘের শান্তি মিশনে কাজ করছেন। কঙ্গো, সুদানসহ আফ্রিকা মহাদেশের ঝুঁকিপূর্র্ণ দেশে সাহসের সঙ্গে এসব সদস্য দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে শান্তি রক্ষা মিশনে পুলিশের নারী সদস্যের এক ইউনিট কাজ করছে। সামনে আরও এক ইউনিট পাঠানো হবে।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মাহাবুবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষাউপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) নুরুল আলম নিজামী, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ওয়াসিকা আয়শা খান ও বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর সভাপতি হাবিবা জাবেদ।
এওয়ার্ড পেয়েছেন দশ পুলিশ সদস্য : এর আগে বিভিন্ন প্রশংসামূলক কাজের জন্য দশ পুলিশ সদস্যের হাতে উইমেন পুলিশ এওয়ার্ড তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন র‌্যাব-৮ বরিশালের অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম, চট্টগ্রামের সীতাকু- সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শম্পা রানী সাহা, ওক্সেলেন্স ইন সার্ভিস ক্যাটাগরিতে রাজারবাগ বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার মাফুজা বেগম, পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদ, ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (সিটিটিসি) মাহফুজা লিজা ও সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফাহমিদা হক শেলী। মডেল অফ কমিউনিটি সার্ভিস ক্যাটাগরিতে এওয়ার্ড পান বরগুনার নারী সহায়তা কেন্দ্রের এসআই জান্নাতুল ফেরদৌস ও মৌলভীবাজার জেলা থেকে সংযুক্ত জরুরি সেবা ৯৯৯, টিঅ্যান্ডআইএম এর কনস্টেবল নুসরাত জাহান। পিসকিপিং ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পান পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (স্বাস্থ্য ও শিক্ষা) তাপতুন নাসরীন। ২০১৬ সাল থেকে চালু হওয়া পুলিশ উইমেন এওয়ার্ডে এবারই পুরুষ পুলিশ সদস্য হিসেবে প্রমোশন অফ জেন্ডার সেনসিটিভিটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পান চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান শেষে বিকেল তিনটায় কমিউিনিটি পুলিশিং মহাসমাবেশে যোগদেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। নগর পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমানের সভাপতিত্বে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে নগরীর ষোল থানার কমিউনিটি পুলিশের কয়েকহাজার সদস্য যোগ দেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট