চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চসিক নির্বাচন: ১৭২ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১০টিরও কম

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৯ জানুয়ারি, ২০২১ | ৩:৪১ অপরাহ্ণ

চর রাঙামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ২৫১৭। ভোট পড়েছে ৩২৮। এরমধ্যে বিএনপি প্রার্থী পেয়েছেন তিন ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী পেয়েছেন ৩২৩ ভোট। ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী পেয়েছেন দুই ভোট। ভোট পড়ার হার ১৩ শতাংশ। এই ভোটকেন্দ্রের চারটি কক্ষে বিএনপি প্রার্থী ভোট পান দুই থেকে চার ভোট করে।

শুধু তাই নয়, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ১০৮ কেন্দ্রে ভোট পেয়েছেন ৫-এর কম। দুই কেন্দ্রে তিনি শূন্য ভোট পেয়েছেন। তাছাড়াও ৫-১০ ভোটের কম পেয়েছেন ৬৪ কেন্দ্রে। অর্থাৎ ১৭২ কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর ভোট ১০ এর কম।
গত বুধবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৭৩৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ভোটার সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ ভোট। নির্বাচনে ভোট পড়েছে চার লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৩ । বাতিল হয়েছে ১০৫৩ ভোট। ভোটের হার ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

৭৩৩ কেন্দ্রের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে রামপুরার ঈদগাঁ এলাকার চিটাগাং লিবার্টি স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে। ভোটার সংখ্যা ১৯৬৯। পড়েছে ১৭৯১ ভোট। নৌকা প্রতীকে পড়েছে ১৬৮১টি। ধানের শীষ পেয়েছে ৯৯টি। হাতপাখা পেয়েছে ৯টি। চেয়ার পেয়েছে দুটি। ভোটের হার ৯০ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে হালিশহর আহমদ মিয়া সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ভোটার সংখ্যা ৩০৮২। ভোট পড়েছে ৪২টি। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী পেয়েছেন ৩৭টি। ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পান তিনটি। একটি করে ভোট পেয়েছেন আম প্রতীকের প্রার্থী আবুল মনছুর ও হাতপাখা প্রার্থী মো. জান্নাতুল ইসলাম। ভোটের হার এক দশমিক ৩৬ শতাংশ। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গোপন কক্ষে অবাঞ্চিত লোক দাঁড়িয়ে ছিল। কেন্দ্রের বাইরেও বহিরাগত লোকদের কড়া পাহারা ছিল। তাদের মারমুখী আচরণের কারণে অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সাহস করেনি। এমনকি বিএনপি ঘরনার স্থানীয় লোকজনও ভয়ে কেন্দ্রে যায়নি। ইভিএম মেশিনে অবাঞ্ছিত লোক দাঁড়িয়ে থাকায় ভোটাররা পছন্দনীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি’।

ফলাফলে দেখা যায়, নজিরিয়া নঈমিয়া মাহমুদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২৭৬৮। ভোট পড়েছে ২৮৩টি। এরমধ্যে নৌকা প্রতীক পেয়েছে ২৮২টি। আর মোমবাতি পেয়েছে একটি। এই কেন্দ্রে ধানের শীষ একটি ভোটও পায়নি। মোহরা হামিদচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলার কেন্দ্রে ভোটার ৩৩৭৮ । ভোট পড়েছে ১৭৩। তম্মধ্যে নৌকা প্রতীকে পড়েছে ১৭২টি। আর ধানের শীষ পেয়েছে মাত্র একটি। ভোটের হার ৫ দশমিক ১২ শতাংশ। আরেকটি কেন্দ্রে হামিদচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (নিচ ও দ্বিতীয়তলা) কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩৪৬৪। ভোট পড়েছে ৪৮০ । নৌকা প্রতীক পেয়েছে ৪৭৮ ভোট। ধানের শীষ পেয়েছে দুটি ভোট। চর রাঙামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (দোয়েল ভবন ৫ম তলা) মোট ভোটার ২৭৫৭। পড়েছে ২৬২ ভোট। নৌকা প্রতীকে ২৫৭ ভোট। ধানের শীষ পেয়েছে চারটি। ভোটের হার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। একটি ভোট পেয়েছে আম প্রতীক। একই কেন্দ্রের বরীন্দ্রনাথ ঠাকুর কক্ষে ভোটার সংখ্যা ২৫৯২। ভোট পড়েছে ১৫৯টি। নৌকা পেয়েছে ১৫৭ ভোট। ধানের শীষ পেয়েছে দুটি। ভোটের হার ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।

ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৭৩৩ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন দুটি কেন্দ্রে কোনো ভোট পাননি। অর্থাৎ শূন্য ভোট পেয়েছেন। ৫টির নিচে ভোট পেয়েছেন ১০৮ কেন্দ্রে। ১০টির কম ভোট পেয়েছেন ৬৪ কেন্দ্রে। ১৫ টির কম পেয়েছেন ৫৭টি কেন্দ্রে। ২০টির কম পেয়েছেন ৩৯ টি কেন্দ্রে। ২৫ এর কম পেয়েছেন ৩১ কেন্দ্রে। ৩০ এর কম ভোট পেয়েছেন ১৫ কেন্দ্রে। ৩৫ এর কম পেয়েছেন ২৮টি কেন্দ্রে। ৪০ এক কম পেয়েছেন চার কেন্দ্রে। ৫০ এর কম পেয়েছেন ১১ কেন্দ্রে।

দেখা যায়, শান্তিবাগ এলাকার আল রহমান আইডিয়েল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২৩৪২টি। ভোট পড়ে ৮৮টি। নৌকা পেয়েছে ৮৫টি। ধানের শীষ দুটি। ভোট পড়েছে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর এলাকার দরবেশীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (মূলভবন) কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১৭৮৬। ভোট পড়েছে ৩৪ ভোট। নৌকা পেয়েছে ৩৩ আর ধানের শীষ পেয়েছে একটি। ভোটের হার এক দশমিক ৯০ শতাংশ। একই কেন্দ্রের সাইক্লোন সেল্টার কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩৩০৫ ভোট। ভোট পড়েছে ৫৯টি। নৌকা পেয়েছে ৫৫ ও ধানের শীষ পেয়েছে এক ভোট। তিনটি ভোট পড়েছে হাতপাখা প্রতীক। ভোটের হার এক দশমিক ৭৯ শতাংশ। ইপিজেড এলাকার বিএন স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩৪৯৩। ভোট পড়েছে ৫৬টি। নৌকা পেয়েছে ৫৩। দুটি ধানের শীষ ও একটি পেয়েছে হাতপাখা। ভোটের হার এক দশমিক ৬০ শতাংশ।
সুজন সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘গণতন্ত্র গভীর খাদে পড়েছে। সরকারি-বিরোধী দল ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে তা ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে’।

পূর্বকোণ / আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট