চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

একের পর এক আইনি জটিলতা

নির্বাচন হচ্ছে না ১৭ বছর, ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকার জনগণ

১ নং কধুরখীল ইউপি

সেকান্দর আলম বাবর, বোয়ালখালী

১৪ জুন, ২০১৯ | ১:১১ পূর্বাহ্ণ

গত ১৭ বছর আগে ২০০৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বোয়ালখালীর ১ নং কধুরখীল ইউপি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হয়েছিল। ২০০৮ সালে ক্ষমতার পালা বদল হলেও বহাল তবিয়তে চেয়ারম্যান পদে রয়ে গেছেন বিএনপি নেতা মো. ইদ্রিচ। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে সীমানা বিরোধের সুযোগে আদালতে ঠুকে দিয়েছেন মামলা।
এলাকাটি এখন অনেকটা একতরফা শাসনের জনপদ। প্রয়োজনীয় সময়ে সেবাবঞ্চিত হয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে ওই এলাকার জনগণ। সামাজিক বিশৃঙ্খলা এখন কধুরখীলের সর্বস্তরে। এরপরও টনক নড়ছে না স্থানীয় প্রশাসনের।
পৌরসভা গঠনে সীমানা নির্ধারণের দীর্ঘসূত্রতা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের খামখেয়ালি, সবকিছু মিলিয়ে এক জটিল হিসেব। সর্বশেষ গত ২৪ মে প্রকাশিত হয় নির্বাচনী গেজেট। আইনি বাধার রিট খারিজ হয় ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর। এখন আর আইনি বাধা নেই, তবে আটকে আছে নির্বাচন। কেউ জানে না, কবে হবে নির্বাচন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন আয়োজনের সর্বশেষ কাজ ছিল ৯টি ওয়ার্ডের ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন। এটি গত ১ মাস আগে নির্বাচন অফিসে পাঠানো হয়েছে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পরেই তফসিল ঘোষণা করার কথা। তবে আজো তফসিল ঘোষণা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর পূর্ব গোমদ-ী, পশ্চিম গোমদ-ীর ৬ ওয়ার্ড ও কধুরখীলের ৩ ওয়ার্ড নিয়ে বোয়ালখালী পৌরসভা গঠিত হয়। এতে সীমানা নির্ধারণ ও অন্য জটিলতার কারণে হতে পারেনি ২০১১ সালের ২৫ জুনের দুই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।
অপরদিকে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে যথারীতি ২০১৪ সালের ২১ মে বোয়ালখালী পৌরসভার ১ম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে আটকে থাকে কধুরখীল ও পশ্চিম গোমদ-ীর ইউপি নির্বাচন। সীমানা নির্ধারণসহ বিভিন্ন আইনি জটিলতায় এ নির্বাচন না হলেও স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ধারা ২৯ (১) অনুযায়ী, নির্বাচিত পরিষদের ১ম সভা থেকে পরবর্তী ৫ বছর ওই পদে অধিষ্ঠিত থাকা যাবে মর্মে সুস্পষ্ট আইন রয়েছে। এবং এতে বলা হয়েছে, এর পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যদিকে ২০০৮ এর ধারা ২৯ (৫) অনুযায়ী কোন দৈব-দুর্বিপাকে নির্বাচন না হলে প্রশাসক নিয়োগ করবে প্রশাসন এমনও বলা আছে আইনে। দেখা গেছে এ দু’টির কোনটিই হয়নি কধুরখীল ইউনিয়ন পরিষদে। গত ১৭ বছর যাবত একইপদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন ২০০৩-এ নির্বাচিত পরিষদ। এ পরিষদের চেয়ারম্যান পরিষদে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন না। ইচ্ছে হলে নাগরিক সুবিধা দেন, নাহয় দেন না। নেই উন্নয়নের চেষ্টা, নেই জনগণের সেবার চিন্তা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে দক্ষিণ জেলা আ.লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মো. এমরান বলেন, কধুরখীলকে মনে হয় রাষ্ট্রের মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। একজন বিএনপি নেতা শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক আমলেও অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। তিনি দ্রুত ও স্বল্পসময়ে কধুরখীলের নির্বাচন দাবি করে বলেন, কালক্ষেপণ হলে এবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো। শেখ হাসিনার উন্নয়ন থেকে কধুরখীলবাসী আর কত বঞ্চিত হবে ?
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন দিতে না পারলেও ২০১৪ সালের ১৭ জুন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার নুরুল হক প্রশাসক নিয়োগ এবং সেইসঙ্গে ৬টি ওয়ার্ডকে ৯টি ওয়ার্ডে রূপান্তর করে সীমানা নির্ধারণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেয়। ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ কধুরখীল ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগের নির্বাহী আদেশ দেয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিচ মহামান্য হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করলে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন মহামান্য হাইকোর্ট। গত বছরের ১৪ নভেম্বর এ রিট খারিজ করেন মহামান্য হাইকোর্ট।
স্থানীয়রা জানান, কধুরখীলে সরকারি দলের কর্তা ব্যক্তিরা থাকলেও দীর্ঘসময় ধরে নির্বাচন না হওয়া খুবই দুঃখজনক। তারা জানান, যিনি চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন তিনি অন্যদলের লোক। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে ও প্রশাসনিক কর্মকা-ে তার প্রায়ই অনুপস্থিতির কারণে উন্নয়ন ও সেবাবঞ্চিত জনগণ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) একরামুল সিদ্দিক জানান, নির্বাচন দ্রুত সময়ে হোক এটাই এখন চাওয়া। এ ব্যাপারে নির্বাচন অফিসারকে নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট