চট্টগ্রাম শনিবার, ১১ মে, ২০২৪

ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে লাখো পর্যটক

বৃষ্টিতে বাড়তি আনন্দ উচ্ছ্বাস সাগর সৈকতে

আরফাতুল মজিদ , কক্সবাজার

৮ জুন, ২০১৯ | ২:৩২ পূর্বাহ্ণ

ঈদের টানা ছুটিতে লাখো পর্যটক ভিড় করেছেন পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে। সাগরের নীল জলরাশির সঙ্গে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠছেন তারা। পর্যটকদের এই আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। সাগরে বৃষ্টির ¯œানে মেতেছে সব বয়সী পর্যটকসহ স্থানীয়রা। আর তাদের সেবা প্রদানে ব্যস্ত সময় পার করেছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন। একই সাথে প্রস্তুত রয়েছে জেলা পুলিশও। ঈদের দিন বিকাল থেকে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে সমুদ্রের পাড়ে।
প্রতিবছরের মত এবারের ঈদেও লাখো পর্যটকের ভিড় জমেছে। তাদের উল্লাসে মুখরিত রয়েছে সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলো। আগত পর্যটকেরা সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানীর পাথুরে সেকত, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামু বৌদ্ধ বিহার, সেন্টমার্টিন ও মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলোতেও ছুটে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার কটেজ মালিক ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যানুযায়ী, কক্সবাজারের প্রায় ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে এখন লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করছেন। আগত পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে সর্তক অবস্থায় রয়েছে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ। মোতায়ন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। কেউ যাতে পর্যটকদের হয়রানি করতে না পারে সেজন্য পর্যটন স্পটগুলোকে আনা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামরার আওতায়। এছাড়া ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে সমুদ্র সৈকতে। লাইফগার্ড কর্মীরা সর্তক অবস্থায় রয়েছেন ভেসে যাওয়া পর্যটকদের রক্ষার্থে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, ছুটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের পাশাপাশি অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া বন্ধ এবং খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, ঈদের ছুটিতে দুই লাখের কাছাকাছি পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে। বর্তমানে লাখো পর্যটক অবস্থান করছে। অনেক পর্যটক এখনো আসছে। আবার অনেকেই কক্সবাজার ঘুরে চলে গেছে। আগামী রোববার পর্যন্ত পর্যটকের ভিড় থাকবে।
তিনি বলেন, বৃষ্টির মাঝেও সৈকতে পর্যটকের উপস্থিতি রয়েছে বেশি। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মাঝে আনন্দের সাথে গোসল করছে পর্যটকের পাশাপাশি স্থানীয়রা। গোসলের সময় যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক সুমাইয়া জাহান বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসে খুবই ভাল লাগছে। এখানে না আসলে বুঝতাম না এই সমুদ্র সৈকত কত সুন্দর’।
ঢাকার কাজী নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী তুষার জানায়, তারা কলেজ বন্ধুরা দলবেঁধে বেড়াতে এসেছে। শুক্রবার সকাল থেকে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলেও তাদের আনন্দের কমতি হচ্ছে না। এভাবেই তারা গতবছরও এসেছিল। তারা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখবেন।
কক্সবজার কটেজ মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহম্মদ নোবেল জানান, বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হোটেল-মোটেল জোন সিসিটিভি ক্যামরার আওতায় আনা হয়েছে। ফলে কেউ কোনো অপরাধ করে পার পাবে না। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করছেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাদের যৌথ প্রচেষ্টা থাকছে; প্রত্যেক পর্যটক যেন ভ্রমণ শেষে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার (ট্যুরিস্ট) জিল্লুর রহমান জানান, ঈদে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপদে ভ্রমণ নিশ্চিত করতে শহরসহ জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ রেসকিউ টিম, ইভটিজিং কন্ট্রোল টিম, ড্রিংকিং জোন ও দ্রুত চিকিৎসাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তায়। সমুদ্র সৈকত এলাকায় ২৪ ঘন্টা ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। বীচ বাইক নিয়ে টহল অব্যাহত রেখেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৩টি বেসরকারি লাইফ গার্ড সংস্থার অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট