চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

লবণশিল্প পার্ক হচ্ছে না সন্দ্বীপে

খাস জমি মেলেনি

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন হ

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

চর জাগা খাস জমি না পাওয়ায় লবণশিল্প পার্ক হচ্ছে না দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ২৫ হাজার একর জমির ওপর এ শিল্প পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। সন্দ্বীপ উপজেলায় ইতিমধ্যেই প্রায় ১৩ হাজার একর খাস জায়গায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা)। ইতিমধ্যেই ভূমি বন্দোবস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়েছে। বেজাকে খাস জমি বন্দোবস্তি দেওয়ার কারণে লবণশিল্প পার্ক স্থাপনে খাস জমি পাওয়া যায়নি বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন গত বছরের ১৯ মার্চ ও ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে দুটি চিঠি দিয়েছে। এতে লবণশিল্প পার্ক স্থাপনের জন্য ২৫ হাজার জমি বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেয় বিসিক। বিসিক চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সন্দ্বীপে নতুন জেগে ওঠা চর, চরে কৃষি কাজ ও শিল্প পার্ক গড়ে তোলার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এর আওতায় তা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, সন্দ্বীপ উপজেলায় এক সময়ে ব্যাপকভাবে লবণ চাষ হতো। বর্তমানে লবণ চাষ করা হয় না। লবণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আধুনিক, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব লবণ শিল্প পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এ শিল্পের উন্নয়নে প্রশিক্ষণ-ডেমোনেস্টেশন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।

এজন্য উপকূলীয় এলাকায় ২৫ হাজার জমিতে এ শিল্প পার্ক স্থাপনের উপযোগী চর জেগে ওঠা কম ফসলি ও অপেক্ষাকৃত অনুর্বর জমি চিহ্নিত করে প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জমির অবস্থা, জমির ম্যাপ, মৌজা দর, জমির শ্রেণি, স্ক্যাচম্যাপসহ তথ্য-উপাত্ত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান পৃথক চিঠিতে বলেছেন, সরকার ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ রূপায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কক্সবাজার জেলায় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ২০ হাজার একর লবণ চাষযোগ্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ফলে লবণ চাষের জমি কমে যাওয়ায় লবণ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। লবণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার আওতায় নতুন জেগে ওঠা জমি, চরে কৃষি কাজ ও শিল্প পার্ক গড়ে তোলার নির্দেশ রয়েছে।
সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সন্দ্বীপ উপজেলা ও ভূমি প্রশাসন জায়গা নির্বাচনের পদক্ষেপ নেয়। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য জমি বন্দোবস্তি দেওয়ার কারণে লবণশিল্প স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই বলে প্রতিবেদন দিয়েছে সন্দ্বীপ ভূমি অফিস।
সন্দ্বীপ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মামুন গত ১৯ জানুয়ারি এই বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। একই বিষয়ে জেলা প্রশাসনে প্রতিবেদন দাখিল করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, সন্দ্বীপ উপজেলায় আধুনিক, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব বিসিক লবণ শিল্প পার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে উপযোগী চর জেগে ওঠা কম ফসলি অপেক্ষাকৃত অনুর্বর জায়গা পাওয়া যায়নি। সন্দ্বীপ উপজেলায় ইতিপূর্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) প্রায় ১৩ হাজার একর জমি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বন্দোবস্তির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা পূর্বকোণকে বলেন, ‘সন্দ্বীপ উপজেলায় লবণশিল্প স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জমি পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে’।
সন্দ্বীপের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৭৭৬ সালের দিকে প্রতি বছর সন্দ্বীপে এক লাখ ৩০ হাজার মণ লবণ উৎপাদন হতো। নৌপথে সহজ বাণিজ্যব্যবস্থা থাকায় দেশ-বিদেশে সরবরাহ করা হত। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা লবণ আমদানি শুরু করলে প্রকৃতিজাত এই শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট