দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) দিবস আজ ১ সেপ্টেম্বর। ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নবযাত্রা শুরু করা চুয়েট গৌরবময় পথচলার ২০ তম বর্ষে পদার্পণ করছে আজ।
এ উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০ টা ৪০ মিনিটে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হবে। এরপর রয়েছে : সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে আনন্দ র্যালি, ১০ টা ৫০ মিনিটে ইএমই ভবনের উত্তর পাশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, বেলা ১১ টায় কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে চুয়েটের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, ১১ টা ১০ মিনিটে আলোচনা সভা, দুপুর আড়াইটায় মেডিকেল সেন্টারে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, বিকেল ৩ টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ এবং সাড়ে চারটায় একইস্থানে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার পাহাড়তলি ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের পাশে উনসত্তরপাড়া মৌজায় অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহরের উত্তর-পূর্বে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে এবং কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে প্রায় ২০ কিলোমটার দূরে এক মনোরম প্রাকৃতিক পাহাড়ি ভূমিতে প্রায় ১৭১ একর জায়গাজুড়ে চুয়েট ক্যাম্পাসের অবস্থান। মনোরম এই ক্যাম্পাসে একইসাথে পাহাড়, সমতলভূমি ও লেইকের অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ৫ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যেই দেশের একমাত্র খর স্রোতা কর্ণফুলী নদী বহমান। আর ঘন্টাখানেকের দূরত্বেই মাত্র ৩০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মনুষ্যসৃষ্ট স্বাদু পানির কাপ্তাই হ্রদ। বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা-গবেষণার অন্যতম সেরা হিসেবে গড়ে তোলার বহুমুখী প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্ববাজারের চাহিদা ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সাথে সমন্বয় রেখে জাতীয় ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পেশাদার প্রকৌশলীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণাকে জনকল্যাণে বিস্তৃত করতে চুয়েট প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। চুয়েটে বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ১২টি ডিগ্রিপ্রদানকারী বিভাগসহ মোট ১৮টি বিভাগের পাশাপাশি ৩টি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ৩টি গবেষণা সেন্টার রয়েছে। ১২টি বিভাগে ৯২০টি আসনের (উপজাতি কোটাসহ মোট ৯৩১টি আসন) বিপরীতে প্রায় ৬ হাজার ২০০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত রয়েছে। পাশাপাশি ১০০জন পিএইচডি ডিগ্রীধারীসহ প্রায় ৩৩৭ জন শিক্ষক, ১৬০ জন কর্মকর্তা এবং প্রায় ৪৩৩ জন কর্মচারী মিলে একটি পরিবার হিসেবে চুয়েটকে এগিয়ে নেওয়ার ব্রত নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া চুয়েটের সামগ্রিক উন্নয়নে “চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন শীর্ষক” প্রকল্পের অধীনে ৩৫৯.৯৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট নতুন একটি ছাত্রী হলের নির্মাণ, প্রায় ২১ কোটি ৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৭ হাজার ৫০০ বর্গফুট আয়তনের পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি নতুন ছাত্র হল নির্মাণ, প্রায় ২ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন ও নতুন মেডিকেল সেন্টার ভবন নির্মাণ, ১০তলাবিশিষ্ট অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন, ৫তলাবিশিষ্ট দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ও ৩য় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন, ১০তলাবিশিষ্ট সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক ও সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট এবং ৩তলাবিশিষ্ট মেডিক্যাল সেন্টার ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
চুয়েট যেখানে অনন্য:
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ৩টি গবেষণা সেন্টার ও একটি কেন্দ্রীয় ব্যুরো অফ রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেন্সি রয়েছে। সেন্টারটির মাধ্যমে সারাদেশে বিবিধ শিল্প এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তি সংক্রান্ত সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের ক্যাম্পাস চুয়েট:
দেশের প্রথম ও একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে প্রায় ১১৭.৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত “শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর” চুয়েটের দৃশ্যমান সাফল্যের ধারায় নতুন পালক যুক্ত করেছে। যা মাননীয় প্রধানমনন্ত্রী গত ৬ জুলাই ২০২২ খ্রি. আনুষ্ঠানিকভাবে শুভ উদ্বোধন করেন।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে চুয়েট:
প্রকৌশল শিক্ষা অন্যান্য শিক্ষা পদ্ধতির চেয়ে ব্যতিক্রম হওয়ায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সারাবছরই আঁটসাঁট একাডেমিক শিউিউলের মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু তাই বলে চুয়েটিয়ানরা সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দমে থাকতে পারে না। শুনে অবাক হতেও পারেন যে, চুয়েটের ১৭১ একরের ভূমিতে নিবন্ধনকৃত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা অন্তত ২০টি।
পূর্বকোণ/আর