রবিবার (৭ জুন) সকাল ১০টার দিকে শুরু হলো শ্বাসকষ্ট। ১১টায় আসলো এম্বুলেন্স। সিএনজি চালকরা জানালো অস্বীকৃতি। অথচ দুই মিনিটের একটা পথ ছিলো এম্বুলেন্স পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। এগিয়ে আসতে অনীহা আত্মীয় স্বজনের। কষ্ট করে হেঁটেই এম্বুলেন্স পর্যন্ত যেতে হলো। একরাশ কষ্ট নিয়ে ভর্তি হলো হাসপাতালে। দুপুর আড়াইটার দিকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে চলে যেতে হল পরপারে।
বলছিলাম মুক্তিযোদ্ধা জালাল আহমেদের (৮০) কথা। গত কয়েকদিন ধরে জ্বর-শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর এলাকার এ বাসিন্দা। গতকাল রবিবার (৭ জুন) বেলা ১১টার দিকে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
মৃত্যুর পরও কি নির্মমতার শেষ হয়েছে? না! মুক্তিযোদ্ধা যিনি দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে দেশ স্বাধীন করলেন, অথচ উনাকে গোসল দেয়ার মত কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার ভয়ে এগিয়ে আসতে অনীহা আত্মীয় স্বজনের।
তবে এ নির্মমতার মধ্যেও বেঁচে ছিল কিছু মানবিকতা। করোনার ভয়ে এলাকাবাসী যেখানে তটস্থ সেখানে এ মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফন করে সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ৷ উত্তর বগাচতর গ্রামে রাত ২টায় এই লাশ দাফন করা হয়।
জানা যায়, সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার লাশ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসলে ভয়ে এলাকার অনেকে লাশের কাছে আসতে অস্বীকৃতি জানান। লাশ দাফন ও কবর খোড়ার জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনায় উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শায়েস্তা খান ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মেজবা উদ্দিন রানা মৃত ব্যক্তির সন্তানকে নিয়ে দাফনের সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেন ৷
এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শায়েস্তা খান বলেন, ‘করোনা সন্দেহে লাশ দাফনে কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে সাহসিকতার সঙ্গে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্দেশনায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মেজবা উদ্দিন রানা ও মৃত ব্যক্তির সন্তানকে নিয়ে আমরা গোসল ও দাফন সম্পন্ন করি।’
তিনি বলেন, ‘এখন ক্রান্তিকাল চলছে। ভয়ে সবাই তটস্থ। ইচ্ছা থাকলেও অনেকে ভয়ে সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে পারছে না। আমরাও চেষ্টা করেছি মানবিকতাকে বাঁচিয়ে রাখতে।’
পূর্বকোণ/ রায়হান উদ্দিন-এএ