চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

চীনে থেকে ভোরে ফিরছেন ৩৬১ জন

রাখা হবে আশকোনা হজ ক্যাম্পের আইসোলেশন ইউনিটে

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ

করোনা আক্রান্ত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ৩৬১ বাংলাদেশি ফিরিয়ে আনতে ঢাকা থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট রওনা হয়েছে। আজ শনিবার ভোর নাগাদ এ ফ্লাইটটি বাংলাদেশিদের নিয়ে ঢাকায় এসে পৌঁছুবে। জানা গেছে, এ ফ্লাইটটিতে চীনে শিক্ষারত কয়েকশ শিক্ষার্থীসহ তাদের পরিবারের সদস্যরাও ফিরছেন। ঢাকায় পৌঁছানোর পর এসব বাংলাদেশিদের বিমান বন্দরের অদূরে হজ ক্যাম্পে ‘কোয়ারেনটাইন’ ইউনিটে রাখা হবে। চীনের উহান প্রদেশের ২২টি সিটিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের বেশি বসবাস। তাই, শুধুমাত্র উহানে যারা বসবাস করছেন সরকার শুধুমাত্র তাদের ফিরিয়ে আনছে। বাকি শহরগুলোতে থাকা নাগরিকদের এখন দেশে আনা হবে না। বিমান কর্তৃপক্ষের সূত্র জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েই

ফ্লাইটের পাইলট ও ক্রুরা রওনা হয়েছেন। তাদের সঙ্গে চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও চীন গিয়েছেন। বিমানটিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর ৪ থেকে ৫ জন ডাক্তার আছেন। বিমানে রাখা হয়েছে- মাস্ক, গাউন, মেডিসিনসহ যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে চীনের উহান থেকে শিক্ষার্থীসহ ৩৬১ জন বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার পরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, চীন থেকে যারা ফিরছেন তাদের কেউই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, উহান থেকে ৩৩৯ জন শিক্ষার্থী ও দু’জন শিশুসহ মোট ৩৬১ জন ফিরছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্য রয়েছেন ১৮ জন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা এখন শুধু উহান সিটিতে যারা থাকে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার কাজ করছি। বাকি শহরগুলোতে যারা আছে তাদেরকে আপাতত ফিরিয়ে আনার কোনো পরিকল্পনা নেই।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর গত একমাসে প্রায় গোটা চীনে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২১৩ জন মারা গিয়েছেন। বিশ্বের আরও ১৮টি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে এই ভাইরাস ঘিরে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
রাখা হবে আশকোনা হজ ক্যাম্পের আইসোলেশন ইউনিটে :

চীন থেকে আসা ৩৬১ জন বাংলাদেশিকে রাখা হবে আশকোনা হজ ক্যাম্পের আইসোলেশন ইউনিটে। আজ ভোরে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন তারা। পরবর্তী ১৪ দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবেন তারা। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হাজী ক্যাম্পের ৩ তলার ৪টি ডরমেটরিতে ৩৬১ জনকে রাখা হবে। প্রতিটি ডরমেটরিতে ১০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। সেখানে বিছানা, চাদর, বালিশ, মশারি, মেডিসিন, পানি, লাইট, টয়লেট থাকবে। সকাল ও বিকেলের নাস্তাসহ ৫ বেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। শিশু ও নারীদের জন্যও থাকবে আলাদা খাবার ও থাকার ব্যবস্থা।

তারা যেন বাইরে বের হতে না পারেন, সেজন্য তৃতীয় তলার সিঁড়ির প্রবেশ পথে কলাপসিবল গেইট লাগিয়ে দেওয়া হবে। যাতে ১৪ দিনের মধ্যে কেউ বাইরে যেতে না পারেন। আর যারা সেবা দেবেন তাদেরকেও বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিয়ে তারা ৩৬১ জনকে সেবা দেবেন। এছাড়া হজ ক্যাম্পে একটি অফিস থাকবে যার মাধ্যমে সবকিছু পরিচালিত হবে।

পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি থাকবে। এছাড়া ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরাও দায়িত্ব পালন করবেন। আর হজ ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় কেউ অসুস্থ হলে তাদের কুর্মিটোলা হাসপাতাল, সিএমএইচ বা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হবে। সেখানে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট