চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

দেশের প্রথম মিয়াওয়াকি ফরেস্ট যেন গাছের রাজ্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, মিরসরাই

২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১২:০০ অপরাহ্ণ

চার হাজার ৪০০ বর্গফুট এলাকায় গড়ে উঠেছে সুপরিকল্পিত বনায়ন। ১২০ প্রজাতির গাছ ও লতা-গুল্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে এই বন। তুলসী থেকে কদম, বাঁশ থেকে বেত সবধরনের প্রজাতির গাছের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে এই বনে। যার সবই স্থানীয়ভাবে পাহাড় ও সমতল জায়াগা থেকে সংগ্রহ করা।

 

দূর থেকে দেখলে ১৬ মাস বয়সী কৃত্রিম বনটিকে মনে হয়ে যেন এক যুগ বয়স। ছোট এ বনের ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়ে শত প্রজাতির গাছ আর লতা-গুল্মের সমারোহ। দেখে মনে হয়, এ যেন গাছের রাজ্য। বনের ভেতরে কেউ প্রবেশ করলে এক মুহূর্তের জন্য হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির রাজ্যে। একসাথে এত প্রজাতির গাছ-লতাপাতাঘেরা এই কৃত্রিম বনকে বলা হয় মিয়াওয়াকি ফরেস্ট।

 

জানা গেছে, জাপানের বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ আকিরা মিয়াওকি হচ্ছেন এই ‘মিয়াওয়াকি ফরেস্ট’ ধারণার প্রবক্তা। এ পদ্ধতিতে ছোট ছোট জায়গায় অল্পসময়ে বয়স্ক বনের আদল তৈরি করা যায়। তার উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি অনুসরণ করে মাত্র ৩০ বর্গফুটের মধ্যেও বন তৈরি করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে লাগানো গাছ সাধারণ বনের গাছের চেয়ে ১০ গুণ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বছরে অন্তত এক মিটার বাড়ে।

 

মিয়াওয়াকি উদ্ভাবিত এই বন তৈরির পদ্ধতি ব্যবহার করে কোন স্থানে ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে গভীর বন তৈরি করা সম্ভব। আর এই বনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অন্য সাধারণ বন থেকে এই বন ৩০ গুণ বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। বর্তমানে আকিরা মিয়াওয়াকির এই ধারণা কাজে লাগিয়ে নেদারল্যান্ড ও ভারত তাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘মিয়াওয়াকি ফরেস্ট’ গড়ে তুলে সুফল পাচ্ছে।

 

বাংলাদেশে মিরসরাই উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকায় ‘প্রকল্প সোনাপাহাড়ে’ প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকবে এই ‘মিয়াওয়াকি ফরেস্ট’ ধারণার বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যেটির বয়স এখন ১৬ মাস। ‘প্রকল্প সোনা পাহাড়’ নামের একটি ব্যক্তি উদ্যোগের প্রকল্পে এই কৃত্রিম বন তৈরি করা হয়।

 

উদ্যোক্তারা জানান, পরীক্ষামূলকভাবে দেশের প্রথম এ কৃত্রিম বন তৈরিতে সফল হয়েছেন তারা।

 

প্রকল্পটির উদ্যোক্তা আমজাদ হোসেন বলেন, মূলত মিয়াওয়াকি ফরেস্ট তৈরিতে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন প্রাকৃতিক কৃষি কেন্দ্রের উদ্যোক্তা ও পরিচালক দেলোয়ার জাহান। আমরা সেটি বাস্তবায়ন করেছি। অল্পসময়ে বন সৃষ্টির দারুণ এক পদ্ধতি ‘মিয়াওয়াকি ফরেস্ট’। আমার জানামতে, মিরসরাইয়ের উদ্যোগটি দেশের প্রথম সফল ‘মিয়াওয়াকি ফরেস্ট’।

 

প্রকল্পের পরামর্শক দেলোয়ার জাহান জানান, মাটি প্রস্তুত, জৈব উপাদান সংযোজন এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে বনায়ন করা হয়েছে। সাধারণ বন থেকে এই বন ১০ গুণ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ৩০ গুণ বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। এই প্রকল্পে স্থানীয় গাছের প্রজাতি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি গভীর সর্ম্পক রেখে বন তৈরি করা হয়েছে।

 

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের মিরসরাই রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহেনশাহ নওশাদ বলেন, কৃত্রিম বনটি পরিদর্শন করেছি। এটি দেশের প্রথম কৃত্রিম বন কিনা আমার জানা নেই। তবে দেশজ প্রজাতির গাছ রক্ষার পাশাপাশি এই বনটি পরিবেশ সংরক্ষণের দৃষ্টান্ত।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট