‘সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম যেতে প্রতিদিনই অসহনীয় যানজটের কবলে পড়ছি। অবস্থা এমন যে এখান থেকে কখনো দুই ঘণ্টা কখনো তিন ঘণ্টা লেগে যায়। এর ফলে ডিউটি শেষে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১১টা কিংবা আরো বেশি। এসময়ে ছেলে মেয়েরা ঘুমিয়ে পড়ে। দিন শেষে বাসায় গিয়েও ছেলে মেয়েদের সাথে একটু কথাও হয় না। সকালে আবার দ্রুত চলে আসতে হয়। এ অবস্থায় আমরা চরম বিরক্ত হয়ে গেছি। এ যানজট থেকে মুক্তি চাই। কথাগুলো বলছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. উন্মে কুলসুম সুমি। একই অবস্থা সীতাকুণ্ডের কুমিরা সুলতানা মন্দির এলাকার বাসিন্দা পতেঙ্গা মহিলা কলেজের অধ্যাপক কৃষ্ণ চন্দ্র দাসের।
কৃষ্ণ চন্দ্র দাস বলেন, আমি পতেঙ্গায় শিক্ষকতা করার কারণে প্রতিদিন সীতাকুণ্ড থেকে পতেঙ্গা যাতায়াত করি। আমি দেখেছি নানান কারণে সীতাকুণ্ড উপজেলাধীন মহাসড়কের নানা স্থানে যানজট নিত্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এতদিন যানজট বেশি সৃষ্টি হতো ভাটিয়ারির উত্তর বাজারে একটি ব্রিজের উপরে গতিরোধক নির্মাণের কারণে। এই যানজট এখান থেকে সৃষ্টি হয়ে চট্টগ্রামের অলংকার, বন্দরের রানী রাসমনি ঘাটসহ বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে কয়েকটি সড়কে হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে যাত্রী, গাড়ি চালক, রোগি, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হন। কিন্তু গত দুই দিন আগে এই গতিরোধকের একটি রেখে বাকিগুলো তুলে নেয়া হয়। এরপরও প্রতিদিন মহাসড়কে তীব্র যানজট রয়েছে। মঙ্গলবার, বুধবার দুই দিনই আমি পতেঙ্গা থেকে সীতাকুণ্ডে আসতে ৪০-৪৫ মিনিটের পথ ২ ঘণ্টা বা তারও বেশি লেগেছে।
কৃষ্ণ বলেন, আমি দেখলাম ভাটিয়ারী বাস স্ট্যান্ড এলাকায় বেশ কিছু গাড়ি সড়কের উপর দাড়িয়ে থাকা, পোর্ট লিংক এলাকায় লজেস্ট্রিক ডিপো থেকে অসংখ্য পণ্যবাহী গাড়ি মহাসড়কে আসা যাওয়া করে এবং সড়ক দখল করে দাড়িয়ে থাকে এগুলো ছাড়াও ফৌজদারহাট থেকে গাড়ি বন্দর লিংক রোডে প্রবেশ করার সময়ও ক্রসিংয়ে যানজট সৃষ্টি হয়। আসলেই এ যানজট অসনীয় বলে মন্তব্য করেন বারআউলিয়ার ব্যবসায়ী শিপব্রেকার্স মো. ফরিদুল আলম। তিনি বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমি অলংকার থেকে সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছেছি। প্রতিদিনই এ তীব্র যানজট দেখছি। কারোরই যেন কিছু করার নেই। এদিকে এ যানজটের কারণে এখন দুপুরের পর থেকে রাতে সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াত করতে ভয় পান সাধারণ মানুষ। যারা বাধ্য হয়ে যাচ্ছেন তারা অবর্ণনীয় যানজটে পড়ছেন।
এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে বুধবার সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড সদর থেকে একে খাঁন পর্যন্ত এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অলংকার থেকে কুমিরা পর্যন্ত অংশে যানজট ছিলো। এতে যাত্রীরা খুবই অস্বস্তি নিয়ে চলাচল করেছে। গাড়ি এক জায়গায় দাড়িয়ে থাকতে থাকতে অনেক সময় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যাত্রীরা। এ অবস্থায় হাইওয়ে পুলিশ থাকলেও তীব্র যানজটে তারাও যেন অসহায় হয়ে পড়েন।
বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি মো. বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, আসলে নানান কারণে যানজট হচ্ছে। যার অন্যতম কারণ ছিলো ভাটিয়ারির গতিরোধক। এখানে গাড়িগুলো ধীরগতির হলে পেছনে বহু গাড়ি দাড়িয়ে পড়ে। ফলে যানজট সৃষ্টি হয়। তবে এখন ৫টি গতিরোধকের মধ্যে ৪টি তুলে দিয়েছে সওজ। একটি এখনো আছে। এখানে যানজট কমে যাবে বলে আমরা আশা করছি। এছাড়া ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগে গাড়ি প্রবেশের সময় এবং উল্টো পথে গাড়ি আসা যাওয়ায় যানজট বেড়ে যায় বলে জানান তিনি। এ যানজট নিরসনে জেলা পুলিশের ফৌজদারহাট ফাঁড়ির সাথে সমন্বয় করে একটি পথ বের করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান।
পূর্বকোণ/পিআর