চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও মেলেনি মুক্তি

মানিকছড়ি সংবাদদাতা

৪ এপ্রিল, ২০২৩ | ১০:০৪ অপরাহ্ণ

গতবছরের ৫ এপ্রিল খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি থেকে অপহরণ হয় চা শ্রমিক ঠিকাদার ব্যবসায়ী মো. আবদুল কাদের (৪৫)। অপহরণের পর দুইদফায় ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ প্রদান করলেও কাদেরকে মুক্তি দেয়নি অপহরণকারীরা। গত একবছর বাবার জন্য তিন সন্তান, স্বামীর জন্য স্ত্রী আর ভাইয়ের জন্য পথ চেয়ে আছে ভাই।

 

মো. আবদুল কাদের উপজেলার ৩ নম্বর ইউনিয়ন যোগ্যাছোলা ইউনিয়নের খাড়িছড়া এলাকার মো. তোফায়েল আহমেদের ছেলে। দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। কয়েকবছর ধরে কাদের নেপচুন চা বাগানে শ্রমিক সরবরাহ করত। তার নিজস্ব একাধিক জিপগাড়ি শ্রমিক আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার হতো। ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় খাড়িছড়া বাজার থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণের শিকার হন আবদুল কাদের।

 

পরে সকালে খাড়িছড়া ক্যায়াং ঘর সংলগ্ন জঙ্গল থেকে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও কাদেরকে মুখবেঁধে নেওয়ার উপকরণের অংশ বিশেষ উদ্ধার করে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। এরপর তাকে অক্ষত ফিরে পেতে মামলায় না গিয়ে নানা কৌশলে অপহৃতের পরিবার চালায় দেন-দরবার। একপর্যায়ে ইউপিডিএফ পরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। তাতে পরিবার সাড়া না দেওয়ায় তা নেমে আসে ৩০ লাখে। এভাবে সর্বশেষ ৭ লাখ টাকা। দফারফায় প্রথমে অগ্রিম বাবদ বিকাশে ৫০ হাজার টাকা ও পরে এক জনপ্রতিনিধি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাদেরের পরিবার) ও অপহৃতের ছোট ভাই গুইমারা উপজেলার গহীনবনে নিয়ে মুক্তিপণের বাকি সাড়ে ৬ লাখ টাকা দেন। কিন্তু তাতেও কাদেরের মুক্তি মেলেনি। পরে এক মাস ৬ দিন পর ১১ মে স্থানীয় এক যুবকের তথ্যে কাদের অপহরণের সূত্র উদঘাটন করে স্থানীয়রা।

 

বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে ওই যুবকের সহযোগিতায় পুলিশ থোয়াইংপ্রু মারমা নামক এক ইউপিডিএফ কর্মীকে আটক করেন। পরে অপহৃতের মামা মো. কবির হোসেন বাদি হয়ে মূলপরিকল্পনা ও অপহরণকারী ইউপিডিএফ সদস্য অলুয়ে মারমাকে প্রধান করে থোয়াইংপ্রু মারমাসহ অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার ২ নম্বর আসামি থোয়াইংপ্রু মারমা ১৬৪ ধারায় অপহরণের বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।

 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. আশিকুল ইসলাম বলেন, মামলার ২ নম্বর আসামি থোয়াইংপ্রু মারমা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করলেও কাদের কোথায় আছে এ বিষয়ে কিছুই বলেনি। প্রধান আসামি অলুয়ে মারমাকে গ্রেপ্তার করা গেলে কাদের অপহরণের জট খুলতে পারে। যদিও গত অক্টোবর মাসে মামলাটি পুলিশের তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই এর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনসারুল করিম বলেন, মো. আবদুল কাদের অপহরণ মামলাটি এখন পিবিআই তদন্ত করছে।

 

মামলার বাদি মো. কবির হোসেন বলেন, পিবিআই থেকে একবার ফোন করে কিছু তথ্য নিয়েছিল। এরপর আর কিছু জানি না। এ বিষয়ে পিবিআই’র বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

এদিকে অপহৃত কাদেরের ছোট ভাই মো. ইউছুফ জানান, আমার ভাইয়ের কী অপরাধ ছিল? তাকে অপহরণের পর সব ধনসম্পদ বিক্রি করে অপহরণকারী চক্রের দাবিকৃত ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও তাকে ফেরত পাইনি। এখন তার স্ত্রী, তিন শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এখনও তাদের বাবা আসার অপেক্ষায় প্রতিনিয়ত জিজ্ঞেস করে বাবা কখন আসবে?

 

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপহৃতের এক নিকটাত্মীয় বলেন, কাদের দীর্ঘদিন চা বাগানে শ্রমিক সরবরাহের কাজটি আয়ত্তে রাখায় স্থানীয় একটি পক্ষের সাথে কিছুটা মতবিরোধ ছিল। অন্যদিকে পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন প্রসিত খীসার ইউপিডিএফের সাথে একদশকের সখ্যতায় হঠাৎ চির ধরে কাদেরের। ইউপিডিএফ মূল দলের সঙ্গ ছেড়ে ইউপিডিএফ সংস্কারের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে সে। এ নিয়ে ইউপিডিএফ কাদেরের প্রতি কিছুটা অসন্তোষ ছিল। যদিও এ বিষয়ে পরিবারের কেউই মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট