চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আটকে গেছে ক্ষতিপূরণ-মজুরি

মোহাম্মদ আলী, মহেশখালী থেকে ফিরে

২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের কারণে বসতঘর হারায় ৫০ পরিবার। কিন্তু ৪৪ পরিবারকে কর্তৃপক্ষ বসতঘর তৈরি করে দেয়। অবশিষ্ট ৬ পরিবার এখনো বাড়ি পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের শুরুতে সরকার ২১ ক্যাটাগরির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল। পর্যায়ক্রমে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের ৩ ক্যাটাগরির টাকা প্রদান শুরু হলেও নানা জটিলতায় সম্প্রতি আটকে গেছে এককালীন ক্ষতিপূরণ ও শ্রমিকের মজুরির টাকা। তালিকাভুক্ত প্রতি শ্রমিক ২ লাখ ৮৫ হাজার এবং জমির মালিক চেক প্রতি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ছিল।

 

 

প্রসঙ্গত, সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ (সিপিজিসিবিএল) মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। একইসাথে নির্মাণ করা হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দরও। এজন্য ২০১৪ সালে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ও ধলঘাট ইউনিয়নের ১৪১৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সর্ব উত্তরে ৬০০ মেগাওয়াটের আরো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১২০০ একর। এ নিয়ে সরকারি দুইটি প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ হয় প্রায় ২৬০০ একর।

 

 

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মালিক হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ জমি মালিক চেক প্রতি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পান। অবশিষ্ট ৪২০০ জন জমির মালিক চেক প্রতি ক্ষতিপূরণ পাননি।

 

 

এছাড়া একই প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির শ্রমিকের সংখ্যা তালিকাভুক্ত করা হয় ১০৪৯ জন। এর মধ্যে ক্ষতিপূরণ পান এক হাজার শ্রমিক। অপরদিকে সিংগাপুরভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির শ্রমিক ছিল ১২ শতের অধিক। এর মধ্যে অনুমোদন পান ৯৭০ জন শ্রমিক। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন শ্রমিকই ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

 

জানতে চাইলে বসতঘর ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত মহেশখালী মাতারবাড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাইরার ডেইল এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুল জব্বার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘কয়লা বিদ্যুতের এক নং এলাকায় আমার বসতভিটা ছিল। বর্গা জমি নিয়ে বর্ষাখালে চিংড়ি ঘের ও শুষ্ক মওসুমে লবণ মাঠ করতাম। কিন্তু কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্য আমাদের জমি অধিগ্রহণ করে। শুরুতে গাছপালা ও বসত ঘরের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা পাই। অধিগ্রহণের পর ৪৪ বসতঘর মালিককে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে প্রতি পরিবারকে মাত্র আড়াই হাজার টাকা খরচ দেয়।

 

 

তখন সরকার থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বসতঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রথম পর্যায়ে ১৪ পরিবারকে পাকা ঘর দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৭ পরিবার ও তৃতীয় পর্যায়ে আরো ১৩ পরিবার মিলে ৪৪ পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণ করে পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া আমরা ৬ পরিবার কোন বসতঘর পাইনি। এ ব্যাপারে কেউই আমাদের কথা শুনছে না।’

 

 

অধিগ্রহণকৃত জমিতে দীর্ঘদিন চাষাবাদ করা শ্রমিক মাতারবাড়ির সিকদার পাড়ার মুজিবুর রহমান জানান, ‘এখন আমাদের কোন কাজকর্ম নেই। তবে সরকার শ্রমিকদের যে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার কথা ছিল তা এখন বন্ধ রয়েছে। তাতে পরিবার নিয়ে চরম বেকায়দায় আছি। বিভিন্ন অফিসে ঘোরাঘুরি করেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছি না। কোল পাওয়ারের যারা কর্মকর্তা আছেন তাদের সাথে কথা বলার কোন সুযোগই দেন না। এছাড়া তারা আমাদের পাওনার ব্যাপারে কিছুই বলেন না।’

 

 

মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘আলোচ্য প্রকল্পগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক, বসতঘর হারানো ভুক্তভোগী পরিবার, শ্রমিক ক্ষতিপূরণ, জমির মালিক চেক প্রতি ক্ষতিপূরণের কোন টাকাই এখনো পুরোপুরি পরিশোধ করা হয়নি। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে।’

 

 

মাতারবাড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম আবু হায়দার জনান, এখনো পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক মানুষ এককালীন ক্ষতিপূরণ ও শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। দ্রুত ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

পূর্বকোণ/আরএ

 

 

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট