চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

ক্যান্সার প্রতিরোধী কমলা আর বেগুনী রঙের ফুলকপির খোঁজে

পূর্বকোণ ডেস্ক

৩ জুলাই, ২০২২ | ১২:৩২ অপরাহ্ণ

নেত্রকোনার এক চাষি এবছর উজ্জ্বল হলুদ আর গাঢ় বেগুনী রঙের ফুলকপি চাষ করে রীতিমত তারকা বনে গেছেন। শীত মৌসুমের জনপ্রিয় সবজি ফুলকপি সাদা রঙে দেখেই আমরা অভ্যস্ত। শহরের মানুষ বড়জোর কাছাকাছি জাতের সবুজ রঙের ব্রকলি চেনেন। জানা যায়, বর্ণিল এই ফুলকপিগুলোতে বেটা ক্যারোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্থোসায়ানিন্সের পরিমাণ বেশি থাকায় এগুলোর রয়েছে ক্যান্সারসহ আরো নানা রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা।

প্রান্তিক এই চাষি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, তিনি বাইশ বছর ধরে কৃষিকাজ করেন। এটাই তার ও তার পরিবারের রুটিরুজি। কিন্তু এবার এই হলুদ আর বেগুনি ফুলকপি চাষ করার পরই প্রথম তাকে নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে।

“এত ফোন পাচ্ছি, এত কৃষক আমার সাথে যোগাযোগ করেছে, যে আমি রীতিমত অভিভূত”, বলছিলেন নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার দূরের গ্রাম রসুলপুরের কৃষক সন্তোষ বিশ্বাস।

মি. বিশ্বাস এখন পরিকল্পনা করছেন, আসছে শীত মৌসুমে তিনি নিজের পুরো জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ করবেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, এর বীজ বা চারা তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনকি গত শীতে, যখন ফুলকপি চাষের মৌসুম ইতিমধ্যেই শেষ, তখন যাদের কাছে এই চারা পেয়েছিলেন মি. বিশ্বাস, তারা নাকি জানতেনই না এটা ফুলকপির চারা।

জামালপুরের যে নার্সারি থেকে চারাগুলো সংগ্রহ করেছিলেন ওই নার্সারির লোকজনই “জানতো না এগুলো ফুলকপির চারা”, বলছিলেন মি. বিশ্বাস। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে কৃষি অধিদপ্তর আয়োজিত ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তাকরণ’ প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনার জনা ত্রিশেক কৃষকের সাথে জামালপুর, শেরপুর আর টাঙ্গাইলের বিভিন্ন কৃষি খামার পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন সন্তোষ বিশ্বাস। জামালপুর সদরের এক খামারে চারাগুলোর সন্ধান পান তিনি।

“ওরা বলছিল এগুলো ব্রকলির চারা। রঙটাও ঠিকঠাক বলতে পারেনি। বলছিল লাল আর গোলাপি হতে পারে। শ’তিনেক চারা ছিল ওদের কাছে। যদিও সিজন শেষ, কিন্তু আমি যেহেতু ব্রকলি আর ফুলকপি করি, তাই রঙিন দেখে বললাম, যতগুলো চারা আছে সবগুলো দিন।

মৌসুম যদিও শেষ তারপরও বাড়িতে এনে কাঠা তিনেক জমিতে চারাগুলো পুঁতে দেন মি. বিশ্বাস। তারপর খুব করে যত্ন করেন। বেশি করে ভার্মিকম্পোস্ট সার দেন জমিতে। চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ দিনের মধ্যে তার ক্ষেতটি বর্ণিল হয়ে ওঠে। ভরে যায় উজ্জ্বল হলুদ আর গাঢ বেগুনী রঙের ফুলকপিতে। বেগুনি ফুলকপিগুলোর এক একটির ওজন হয় দেড় কেজির ওপরে। আর হলুদগুলো হয় বারোশ থেকে চৌদ্দশ গ্রামের।

মি. বিশ্বাসের ক্ষেতে হওয়া উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের ফুলকপিটি মূলত কমলা বর্ণের হয়, জানা যাচ্ছে কৃষি বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও নিবন্ধ ঘেঁটে। তার ক্ষেতে উৎপাদিত ফুলকপি প্রদর্শিত হয়েছে সরকারের আয়োজিত উদ্ভাবনী মেলা আর কৃষি প্রদর্শনীগুলোতে।

বিভিন্ন জায়গা থেকে সবজি চাষিরা তার সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন – কোথায় পাওয়া যাবে এই ফুলকপির বীজ বা চারা? কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, জামালপুরের যে খামারটি থেকে তিনি চারাগুলো এনেছিলেন, তখন তাড়াহুড়োয় তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি। এমনকি খামারটির নামও তার মনে নেই। শুধু জায়গাটা মনে আছে।

কোথায় পাওয়া যাবে এর বীজ বা চারা?
ঢাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছিলেন, তারাও খবর দিতে পারেনি তেমন। শুধু বলেছে, এই বীজ ভারতে পাওয়া যায়। এখন তিনি পরিকল্পনা করছেন সশরীরে জামালপুরের ওই খামারটিতে যাবেন, তথ্য সংগ্রহ করতে এবং সম্ভব হলে তাদের কাছ থেকে বীজ বা চারা সংগ্রহ করবেন।

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট