চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ্বাসীদের স্পর্শ করে না হতাশা

৩ জুন, ২০২১ | ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যখন কোনো বান্দার কল্যাণ চান, তখন দুনিয়ায় তার দুঃখ-কষ্ট বাড়িয়ে দেন। কিন্তু যখন তিনি কারও জন্য অন্য কিছু চান, তখন তিনি তার দুর্ভোগ উঠিয়ে নেন, যাতে বিচার দিবসে দুর্ভোগের বোঝা পুরোপুরি তার ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন।’ তিরমিজি

বিশ্বাস, আশা ও ভালোবাসা মুমিনের জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বিশ্বাসী, আশাবাদী, ভালোবাসায় পরিপূর্ণ মানুষ ব্যর্থ হয় না এবং হতাশাগ্রস্তও হয় না। হতাশা আসে ব্যর্থতার গ্লানি থেকে। সাধারণত মানুষ প্রাপ্তিতে তৃপ্ত ও অপ্রাপ্তিতে অতৃপ্ত হয়। তাৎক্ষণিক লাভ-ক্ষতিকে মানুষ সফলতা ও ব্যর্থতার মানদণ্ড মনে করে এবং সেভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। মানুষের প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে সুখ মিশে আছে। ধৈর্যশীল মানুষ সেই সুখের অপেক্ষা করেন। তারা জানেন, জীবনে যত ঘোর আসুক না কেন, এক সময় তা কেটে যাবে। কষ্টের এ সময়গুলোতে ধৈর্যের সঙ্গে অবিচল থাকাই মুমিনের গুণ।

আয়-উপার্জনের সমস্যা, পারিবারিক জটিলতা ও বন্ধুমহলে ভুল বোঝাবুঝিসহ নানা কারণে মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়। হতাশায় আনন্দঘন জীবন হয় ছন্দ ছাড়া। মনে যখন হতাশা আধিপত্য বিস্তার করে, তখন মানুষ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে; তখন শয়তান আনন্দ অনুভব করে। কিন্তু প্রকৃত মুমিনরা কখনো হতাশ হয় না। মুমিন বান্দা জানে আল্লাহর সব সিদ্ধান্ত কল্যাণকর। তাই তারা যেকোনো অবস্থা ও পরিস্থিতিতে ধৈর্যের পরিচয় দেয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার সাহায্য প্রার্থনা করো। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।’ সুরা বাকারা : ৪৫

আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, শয়তান মানুষকে আশাহত করে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করার জন্য। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট।’ সুরা তালাক : ২-৩

নিত্য-নতুন সংকট মানুষকে প্রায়ই তাড়া করে। কখনো অবস্থা এমন হয় যে, অর্থ আর ক্ষমতা ছাড়া মুক্তির সব রাস্তা অবরুদ্ধ মনে হয়, সামনে শুধুই অন্ধকার। এ অবস্থায়ও হতাশ হওয়া যাবে না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে, আল্লাহতায়ালা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুঃশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ আবু দাউদ

বিপদের বিষাদময় সময়ে ন্যায়ের ওপর অবিচল থেকে নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। যারা এই কাজ করবে, তাদের জন্য সুসংবাদ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘যে মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করবে হোক সে পুরুষ কিংবা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। এবং তারা যা করত, তার তুলনায় অবশ্যই আমি উত্তম প্রতিদান দেব।’ সুরা নাহল : ৯৭

বিপদ যত কঠিনই হোক, সংকট যত মারাত্মক হোক, নির্যাতনের মাত্রা যত তীব্র হোক, কোনোভাবেই হতাশ হওয়া যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।’ সুরা আলে ইমরান : ১৩৯

হালসময়ের অনেক তরুণ স্বজাতির বিপর্যয় দেখে দুঃখে-কষ্টে-হতাশায় ফেইসবুকে নানা প্রশ্ন আওড়ায়। অন্যকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে, সব বিষয়েই শুধু সমালোচনা করে। কিন্তু কখনো কোরআন-হাদিস অধ্যয়ন করে দেখে না। নিজে কিছু করার চেষ্টা করে না। মুসলিম জাতির মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে কাঁদে না। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেব।’ সুরা আল মুমিন : ৬০

যখন কারও ওপর কোনো বিপদ আসে, তখন সে বিষন্ন স্বরে বলতে থাকে, আল্লাহ একের পর এক বিপদের জন্য আল্লাহ আমাকেই কেন বাছাই করছেন? হঠাৎ করেই আল্লাহ আমার পরিবারের ওপর এত বড় সমস্যা কেন দিলেন? পরীক্ষার আগের রাতেই জ্বর দিতে হবে! আজকে যদি বাড়ি থেকে বের না হতাম তবে বিপদটা হতো না। কেন জীবনে এত কাটাছেঁড়া? সত্তর বছরের জীবনে সুখ কী জিনিস দেখলাম না। সারাজীবন নামাজ-কালাম করে কী পেলাম। আমার চেয়ে খারাপ মানুষরাও তো জীবনটা অধিক উপভোগ করছে। অথচ সে একবারও চিন্তা করে না, আল্লাহ আমাদের ওপর কোনো অকল্যাণ চাপিয়ে দেন না। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না।’ সুরা বাকারা : ২৮৬

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যেকোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন বলে আবু দাউদের হাদিসে উল্লেখ আছে। কিন্তু এখন বিপদ থেকে মুক্তির জন্য মানুষ নানা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। এটা ভীষণ অন্যায়। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা মোচন করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ পরিবর্তন করারও কেউ নেই।’ সুরা ইউনুস : ১০৭

সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া। আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া।’ মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ১৯৭০১

বিপদ-আপদের সময় শয়তান মানুষকে নানাভাবে প্ররোচিত করে মুমিনদের হতাশাগ্রস্ত করতে চায়। মুমিনদের বুঝাতে চায়, আল্লাহ দুনিয়াতে সারাজীবন তোমাকে কষ্টের পর কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে।’ সুরা আল ইনশিরাহ : ৬

লেখক: মাসুম আলভী

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট