চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভয়ঙ্কর অনলাইন জুয়া

সারোয়ার আহমদ

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এখনো যুক্ত হয়নি অনলাইনভিত্তিক জুয়ার আসরগুলো। অথচ এই অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে শুধু নগরী থেকে প্রতিদিন লেনদেন হয় কয়েক কোটি টাকা। নগরীর প্রায় প্রতিটি পাড়া মহল্লার অনেকেই এই অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষেরা ঝুঁকছে এই জুয়ার দিকে। আর হারাচ্ছে তাদের শেষ সম্বলটুকু।

দেশি-বিদেশি প্রিমিয়ার লীগ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব খেলা নিয়ে চলে ভয়ঙ্কর অনলাইন জুয়া। বেট৩৬৫, বেটএশিয়া৩৬৫, ১এক্সবেট, বেটইন৭৭ নামের এসব এপ ব্যবহারের মাধ্যমে জুয়ায় লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। খেলাপ্রেমীদের টার্গেট করে এক অসাধু চক্র মানুষেকে লোভ দেখিয়ে প্রতিনিয়তই হাজার হাজার টাকার ফলাফল বাজি, ওভার বাজি, রানবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলছেন। এ জুয়াচক্রের ফাঁদে পড়ে কেউ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে আবার কেউ তার সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসছে। টাকার লেনদেন নিয়ে অনেক সময় ঘটে নানা ধরনের বিপত্তির ঘটনা। এমনকি বাজিতে হেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এসব এপ-এ প্রতিনিয়ত কোন না কোন খেলাকে ঘিরে জুয়া চলমান রয়েছে। খেলা চলাকালীন নগরীর অলি গলিতে ছোট ছোট দোকানে দর্শকের ভিড় দেখা যায়। যা প্রায় ছোট খাটো জুয়ার আসর। ম্যাচে জয় পরাজয়, এক ওভারে কত রান, এক বলে কি হবে, কোন খেলোয়ার কেমন খেলবে, কোন বলে ছক্কা হাঁকাবে, কোন বলে উইকেট পড়বে, এমন সব কিছুর উপর বাজি ধরা হয়। প্রতি বলে দাম উঠে ৫০ থেকে ১০০০ টাকা। আর এক ওভারে তা গড়ায় ২০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। জুয়াবাজরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নিয়ন্ত্রকের কোন লোকসান নেই। তারা প্রতি বাজির এপিট ওপিট দুই পিটে ৫০ টাকা করে পান। একেক জন ৯/১০ টি বাজি ধরে। এইভাবে এক এলাকায় ৫০/৬০ জন জুয়া বা বাজিতে অংশ নেন। তারা ডলারের বিপরীতেও টাকা পেয়ে থাকেন। জুয়াতে মেতে উঠা অধিকাংশই বেকার তরুণ যুবক ও কিশোর। এদের সাথে যোগ দিয়েছে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। নগরীর বহদ্দারহাট, ফরিদের পাড়া, বাকলিয়া, ডিসি রোড, চকবাজার, খাতুনগঞ্জ, খুলশী, সিএন্ডবি, খতিবের হাট, জিইসি মোড়, ঝাউতলা, টেকনিক্যাল মোড়, সদরঘাট, ইপিজেড, পতেঙ্গাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন জুয়ার আসর চলছে প্রতিনিয়ত। জানাযায়, অনলাইন জুয়ায় নীরবে ভূমিকা রেখে চলছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রীড়া বাজির সাইট ‘বেট৩৬৫ডটকম’। ‘বেট৩৬৫’ মূলত ক্রীড়াবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক বেটিং (বাজি ধরার) সাইট যেখানে বিশ্বে যেকোন

স্থানের ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সের যে কেউ যে কোনো খেলা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে বাজি ধরতে পারেন। বিশ্বব্যাপী এই জনপ্রিয় বেটিং সাইট গতবছর ২.৭ বিলিয়ন পাউন্ড আয় করেন। যেহেতু এ ব্যবসায় ১৮ বছরের নিচে কেউ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না, তাই অন্যের একাউন্ট কিনে জুয়া বা বাজিতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের অনেকেই। তাছাড়া অর্থ দেনেদেন করতে হয় স্ক্রিল ও নেটেলার নামের দুটি আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সেকশন কোম্পানির মাধ্যমে। বাংলাদেশ থেকে ডুয়েল কারেন্সির একাউন্ট ব্যবহার করে নেটেলার ও স্ক্রিল একাউন্টে ডলার ট্রান্সফার করে জুয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। এসব জানাজানির পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেটেলার ও স্ক্রিল একাউন্টে ডলার ট্রান্সফার বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ফ্রিলেন্সারদের অর্থও নেটেলার ও স্ক্রিল একাউন্টে লেনদেন হতো। তাদের কথা মাথায় রেখে আর সেটি পুনরায় চালু করা হয়। ফলে আবার এই জুয়ার ব্যবসা জমে উঠেছে। এইসব অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আমেনা বেগম পূর্বকোণকে জানান, ‘অনলাইন জুয়া যে কোন জায়গা থেকেই চলতে পারে। তাই তাদের মনিটরিং করা কঠিন। ঢাকা থেকে ট্রাকিং করে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। আর আমরা নগরীর কোথায় এসব জুয়া চলে সেরকম তথ্য পেলে আমাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল প্রতিনিয়ত অপরাধীদের সনাক্ত করার চেষ্টার করছে। অপরাধী চিহ্নিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট