চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চন্দনাইশে পাহাড় জুড়ে আবাদ

ফুলেফলে নুয়ে পড়েছে ড্রাগনের ফলের গাছ

মো. দেলোয়ার হোসেন হ চন্দনাইশ

১০ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:১০ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশের জঙ্গল হাশিমপুর পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে ভিন্নদেশি ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছে অনেকে। উপজেলার পাহাড়ি এলাকাজুড়ে ড্রাগন ফলের আবাদ চলছে। বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের চাষাবাদ করে অনেকে লাভবান হচ্ছে। এ সকল বাগান ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি ড্রাগন ফলের গাছ। কোন কোন গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল সাদা লম্বাটে এবং অনেকটা নাইট কুইনের মতো। কিছু কিছু গাছে ফলও এসেছে। চাষিরা জানালেন, বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস ড্রাগন গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বাগান থেকে ৪শ থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক ড্রাগন ফল বিক্রি করেছে চাষিরা। মিষ্টি ও হালকা টক জাতীয় স্বাদের নানা পুষ্টিগুণে ভরা ড্রাগন ফল। গাছ লাগানোর ১ বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু করে। ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। সঠিকভাবে গাছের পরিচর্যা করলে দীর্ঘ সময় ধরে ফল পাওয়া যায়। ড্রাগন ফলে ভেষজ ও ঔষধিগুণ থাকায় ক্যান্সার, ডায়াবেটিকস্সহ বিভিন্ন জটিল রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ফল চাষের জন্য জৈব সার ছাড়া অন্য কোন সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না।

দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে ড্রাগন ফলের জন্ম। প্রায় এক শতাব্দী আগে থেকে শুরু হয় ড্রাগন ফলের চাষ এবং প্রসার। বাংলাদেশের ফুলপুরের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী। প্রায় সব ধরনের উঁচু মাটিতেই ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। তবে পাহাড়ের মাটি এই ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এপ্রিল-মে মাসে ফুল আসে, ২০-২৫ দিনে ফুল ফলে পরিণত হয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা ও ফল ধরা অব্যাহত থাকে।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা বলছেন, ড্রাগন ফল চাষ খুব সহজ। বর্তমানে ভিয়েতনামে এই ফল বেশি চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনাম ছাড়াও তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইসরাইল, অস্ট্রেলিয়াতেও ড্রাগন ফলের চাষ হয়। এছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকায় দিন দিন এ ফলের চাহিদা বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশও ড্রাগন ফল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম এ রহিম ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের প্রবর্তন করেন। তিনি এ ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে।

সেইসব গাছ এখন ফল দিচ্ছে। এরই মধ্যে এ ফলের বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ও বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল) জাত বাংলাদেশে চাষাবাদ হচ্ছে। বীজ ও কাটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। ড্রাগন চাষের জন্য কাটিংয়ের চারাই বেশি উপযোগী। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। ড্রাগন ফলের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হলো জুন-জুলাই মাস। আমাদের দেশে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়।

শীতকালে এই গাছ ফুল দেয়া বন্ধ করে দেয়। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেন, পাহাড়ি এলাকা ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। চন্দনাইশের হাশিমপুর, লট-এলাহাবাদ, দোহাজারী লালুটিয়া, ধোপাছড়িসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ড্রাগনের চাষ শুরু করেছে অনেকে। ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ করার জন্য চাষিদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান। সেসাথে ড্রাগন চাষের সকল রকম পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন মাঠকর্মীরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট