চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র শেকড় রামগড়ে

মো. নিজাম উদ্দিন লাভলু হ রামগড়

২০ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১০ পূর্বাহ্ণ

সপ্তদশ শতকের শেষভাগে চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায় দেখা দেয় লুসাই বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহ দমনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৫ সালের ২৯ জুন মাত্র ৪৮৬ জন সৈন্যের সমন্বয়ে গঠন করে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ নামে একটি সশস্ত্র বাহিনী। ছয় পাউন্ড গোলার ৪টি কামান, দুটি অনিয়মিত অশ্বারোহী দল আর উপযোগী যানবাহন ছিল এ বাহিনীর সম্বল। ২২৪ বছর আগের সেই রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়নই সম্প্রসারিত হয়ে আজকের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।

অর্থাৎ বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী এ বাহিনীর শেকড় ঐতিহ্যবাহী রামগড়েই।
রামগড় উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন স্থানে অপরূপ প্রকৃতির মাঝে বিজিবির দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। ২০০৫ সালে তৎকালীন ৩৩ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আতিকের উদ্যোগে এটি স্থাপন করা হয়।

বিডিআর সদর দপ্তরের অর্থায়নে নির্মিত বৃহদাকারের স্মৃতি স্তম্ভটির প্লাটফরম সাজানো হয়েছে বিজিবির বিভিন্ন প্রতীকী অংশ দিয়ে। বিশাল দেয়ালে শ্বেত পাথরে বাহিনীর সুদীর্ঘকালের গৌরবোজ্জল সংক্ষিপ্ত জন্ম ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে। এছাড়াও বাহিনীটির বিবর্তনের পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি ৮টি অবয়ব বা ম্যুরাল রয়েছে। প্লাটফরমে স্থাপন করা হয়েছে ৪টি পিলার, যা সীমান্ত পিলারের প্রতীকরূপ। পিলারের গায়ে ধাতব অক্ষরে খচিত রয়েছে বাহিনীটির জন্মস্থান হিসেবে ‘রামগড়’ ও জন্মসাল ১৭৯৫।

বেদীর ওপর সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি সৈনিকের ব্যক্তিগত অস্ত্র বা রাইফেলের প্রতীক হিসেবে একটি দীর্ঘ ধাতব স্তম্ভ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন সমতল জেলা থেকে আগত পর্যটকরা দৃষ্টিনন্দন এ বিশাল স্মৃতিস্তম্ভ ঘুরে দেখেন আর জেনে নেন বাহিনীটির সুদীর্ঘকালের গৌরবময় জন্ম ইতিহাস। ২০০৫ সালের ৬ জুন বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে এ স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করেন।

এর আগে ১৯৯৫ সালের জানুয়ারিতে বিডিআরের তৎকালীন খাগড়াছড়ির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. ওয়ালী উল্লাহ ও রামগড়স্থ ১৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোসাদ্দেক হোসেনের উদ্যোগে ‘স্বার্থক এ জন্ম’ নামে সর্বপ্রথম রামগড়ে স্থাপন করা হয় বিডিআরের জন্ম স্মৃতিস্তম্ভ। বাহিনীটির দুশো বছরপূর্তিতে ছোট আকারের এ স্মৃতিস্তম্ভটি স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে এটি ভেঙে একই স্থানে নির্মাণ করা হয় বৃহদাকারের রাইফেলস স্মৃতিস্তম্ভটি।

১৭৯৫ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে বাহিনীটির গোড়াপত্তন হওয়ার পর কালের বিবর্তনে পরিবর্তন হয় বাহিনীটির নামও। সাথে পরিবর্তন হয় অস্ত্রশস্ত্র ও পোশাকেরও। জনবল, শক্তি সামর্থ্যও বৃদ্ধি পায় সময়ের প্রয়োজনে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) নাম বদল করে বাহিনীটির নাম দেয়া হয় বাংলাদেশ রাইফেলস্ বা বিডিআর। সর্বশেষ ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিডিআর নাম পরিবর্তন করে এ বাহিনীর নামকরণ হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।

বাহিনীটির ইতিহাস: চট্টগ্রামের পার্বত্যাঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দিলে রামগড়কে রক্ষার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৫ সালে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ গঠন করার পর ১৮৬০ সাল পর্যন্ত এ নামেই বাহিনীটির কার্যক্রম চলে। ১৮৬১ সালে পূর্বাঞ্চলে নিয়মিত, অনিয়মিত পুলিশ বাহিনী পুনর্গঠিত করে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়নের নামকরণ করা হয় ফ্রন্টিয়ার গার্ডস।
১৭৯৫ সালের ২৯ জুন মাত্র ৪৮৬ জন সৈন্যের সমন্বয়ে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ এর যাত্রা শুরুর পর ১৮৬১ সালে ফ্রন্টিয়ার গার্ডস’র সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪৫৪ জনে। ওই সময় এ পার্বত্য এলাকায় লুসাই বিদ্রোহ চরম আকার ধারণ করলে ১৮৭১ সালে সৈন্য সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করে এ বিদ্রোহ দমন করে বাহিনীটি। ১৮৯১ সালে বাহিনীর নতুন নামকরণ হয় বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ ব্যাটালিয়ন। প্রচলিত অস্ত্র ছিল ব্রিচ লোডার রাইফেল।

ব্যাটালিয়নকে চারটি কোম্পানিতে ভাগ করে ইউরোপীয় সুবেদারদের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ১৯২০ সালে বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ ব্যাটালিয়নকে পুনঃনামকরণ করে ‘বেঙ্গল ব্যাটালিয়ন অব ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস্’ করা হয়। ১৬টি প্লাটুনে বিভক্ত করে প্লাটুনগুলোকে সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার কাজে নিয়োজিত করা হয়।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলসকে নতুন নাম দেয়া হয় ‘ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস’ বা ইপিআর। ১৯৭১ সালে মহান মুিক্তযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ ইপিআর নাম পরিবর্তন করে বাহিনীটির নামকরণ করা হয়েছিল বাংলাদেশ রাইফেলস বা সংক্ষেপে বিডিআর।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট