চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রমজানে দ্রব্যমূল্য ও ইসলাম

মুফতী ফয়জুল্লাহ আমান

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র রমজানুল মুবারক অত্যাসন্ন। রমজান মাস আত্মশুদ্ধি ও সংযমের মাস। ইবাদতের বসন্তকাল বলা হয় রমজানুল মুবারককে। রমজানের রোজার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করতে হবে। বরং রজব মাসের চাঁদ দেখা গেলেই রাসুল (সা.) সাহাবিদের এই দোয়া শিক্ষা দিতেন, হে আল্লাহ তুমি আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দাও। অর্থাৎ আর একটি রমজান যেন আমরা আমাদের জীবনে লাভ করতে পারি সেই তাওফিক দাও।

রমজান মাস আসার আগ থেকেই রোজার প্রস্তুতি শুরু হয়। সাথে সাথে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী রোজার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো স্টক করে রেখে সাধারণ রোজাদারদের ভোগান্তিতে ফেলতে প্রস্তুতি শুরু করেন। প্রত্যেক বছরই আমাদের দেশের সাধারণ মানুষদের এই ভোগান্তির শিকার হতে হয়। প্রতিদিন ইফতারে যে খাবারগুলো প্রয়োজন হয় যেমন ডাল, ছোলা, চিনি, খেজুর, বেসন, পেঁয়াজ, বেগুন প্রভৃতি পণ্যগুলোর দাম অনেক বৃদ্ধি পায়। সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষদের নাগালের বাইরে চলে যায় অনেক পণ্য।

অথচ বিশ্বের অন্য কোথাও রমজানে এমন সংকট তৈরি হয় না। আরব দেশগুলোতে বরং রমজান উপলক্ষে পণ্যমূল্যে অনেক ছাড় দেয়া হয়। পশ্চিমা দেশগুলো বা কোরিয়া চীন জাপানের হালাল ফুডের ব্যবসায়ীরা রমজান উপলক্ষে বিশেষ ছাড় দেন। কারণ রমজানে এমনিতেই বেশি কেনা বেচা হওয়ায় ব্যবসায়ীরা লাভবান হন, তাই তারা স্বল্প লাভেই পণ্য ছেড়ে দেন। আমাদের দেশের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। খেজুর, ছোলা বা চিনি যে পরিমাণ বিক্রি হয় তাতে কেজি প্রতি সামান্য লাভ করলেও অনেক মুনাফা হয়ে যায়। কিন্তু সাধারণ ভোক্তাদের চাহিদার সুযোগকে আমাদের ব্যবসায়ীরা অসৎভাবে কাজে লাগান।

অনেক ব্যবসায়ী আছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, দাড়ি টুপি আতর ব্যবহার করেন। কয়েকবার হজও করেছেন। সব ঠিক আছে কিন্তু পণ্য স্টক করে রেখে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেন। সাধারণ মানুষকে এভাবে কষ্টে ফেলানো যে ইসলামে সম্পূর্ণ অবৈধ তা তারা যেন জানেন না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘ন্যায্যমূল্যে জিনিস সরবরাহকারী রিজিকপ্রাপ্ত আর মজুত করে সংকট সৃষ্টিকারী অভিশপ্ত’। (বোখারি : ৩৭১২)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মজুতদার খুবই নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। যদি জিনিসপত্রের দাম হ্রাস পায় তবে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। আর যদি মূল্য বেড়ে যায় তবে আনন্দিত হয়।’ (মিশকাত)

মজুতদারি পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কখনো পণ্যদ্রব্যের দাম তাদের ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দেয়। যখন মাহে রমজান আগত হয়, তখনই মুনাফাখোর চক্রটি তৎপর হয়ে পড়ে। ফলে জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। তাই রমজান মাসে বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতার আওতায় সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত আবশ্যক। যেহেতু মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ক্রয়-বিক্রয়ে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মজুতদারি সম্পর্কে ইসলামি দৃষ্টিকোণ রয়েছে,সেহেতু খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি করতে পারেন না।

যদি কেউ এমনটি করে থাকে, তবে ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মসাতকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। মাহে রমজানের প্রাক্কালে যখন অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্যের স্ফীতি ঘটাতে চান, তখন সরকার দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। ইসলামি ফিকহে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। তবে সরকার ইচ্ছা করলেই আইন দিয়ে সব কিছু ঠিক করে ফেলতে পারে না, আমাদের প্রত্যেকের নীতিবোধ জাগ্রত হওয়া আবশ্যক। ব্যবসায়ীরা কেবল অস্বাভাবিক লাভ না খুঁজে সেবার মানসিকতা লালন করা একান্তভাবে কাম্য। রাসুল (সা.) বলেন, সর্বসাধারণের জন্য আন্তরিকতাই দ্বিনদ্বারি। (বুখারি শরিফ)।

কেবল নামাজ রোজাই ইসলাম নয়। প্রকৃত মুসলিম হতে হলে অবশ্যই অন্য মুসলিমদের প্রতি সদয় হতে হবে। বিশেষত পবিত্র রমজান মাসকে সহমর্মিতার মাস বলা হয়েছে, এ সময় আমাদের প্রত্যেককেই হামদর্দি ও সহমর্মিতার শিক্ষা ধারণ করতে হবে। নিজের লাভের সাথে অন্য মানুষের সাধ ও সাধ্যের দিকটি খেয়াল রাখতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক: দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী ইসলামী চিন্তাবিদ

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট