চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস

অনলাইন ডেস্ক

২৬ মার্চ, ২০২৪ | ১২:০১ পূর্বাহ্ণ

আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের দিন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। দীর্ঘ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

 

এই দিন উপলক্ষে সারা দেশে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারিভাবে এবং দলীয় ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি রেখেছে। যথাযোগ্য মর্যাদা ও স্মরণে দিনটি পালিত হবে।

 

১৯৭১ সালের এই দিনে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু মাতৃভূমিকে মুক্ত করার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার আহ্বান জানান।

 

এরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, ধ্বংস ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ৯ মাসের মরণপণ লড়াইয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। গোটা জাতি আজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

 

অত্যাচার-নিপীড়নে জর্জরিত বাঙালি জাতির সামনে আলোকময় ভবিষ্যতের দুয়ার খুলে দেওয়ার দিন ২৬ মার্চ। গৌরব ও স্বজন হারানোর বেদনার এই দিনে বীর বাঙালি সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা করেছিল। মাতৃভূমিকে হিংস্র মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রগতি, কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে অর্জন করা হয় স্বাধীনতা। দেশের সার্বভৌমত্ব সংহত করার নতুন শপথে বলিয়ান হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার অঙ্গীকার করে বীর বাঙালি।

 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরুর পর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে দেশবাসীকে নির্দেশ দেন। তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে বঙ্গবন্ধুর সেই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের সর্বত্র। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণায় সেদিনই ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা জাতি। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ।

 

প্রথমে ২৬ মার্চ দুপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হান্নান বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পাঠ করেন। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন।

 

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার নিভৃত আমবাগানে শপথ নেয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে এই সরকারের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক কাঠামো লাভ করে। একটি সুশৃঙ্খল ও অত্যাধুনিক সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালিদের রুখে দাঁড়ানোর নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী প্রাণপণ যুদ্ধের সফল পরিণতিতে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার আকাশে ওড়ে বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা। মরণপণ লড়াই ও একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় এই বিজয়। স্বাধীনতা তাই বাংলাদেশিদের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন।

 

প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে জাঁকজমকপূর্ণভাবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করছে। বিটিভি, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের কর্মসূচি নিয়েছে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। আজ সরকারি ছুটির দিন।

 

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপরই একাত্তরের হানাদারদের সহযোগী হিসেবে গণধিক্কৃত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করে। জাতির প্রাণের দাবি ও সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে শুরু হওয়া এই বিচারপ্রক্রিয়ায় শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শেষ করে কয়েকজনের রায় কার্যকর হয়েছে। শিগগিরই বাকি মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মামলার রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতির পাঁচ দশকের বয়ে বেড়ানো কলঙ্ক ও দায় মোছনের কাজটি শেষ হতে যাচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট