চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। যাদের মধ্যে ১৯৪ জনই ছিল স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী। আর কলেজপড়ুয়া ৭৬ জন এবং ৫০ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ৪৪ জন মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীও আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনাবসানের পথ বেছে নিয়েছে। শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে এক প্রেস কনফারেন্সে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন।
১৫০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার তথ্য থেকে জরিপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। এর আগে ২০২১ সালে সারা দেশে মোট ১০১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিল বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
জরিপে দেখা গেছে, গত আট মাসে মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ৬০ শতাংশ এবং মেয়ে শিক্ষার্থী ৪০ শতাংশ। কলেজপড়ুয়াদের মধ্যে ৭৬ জন এই পথ বেছে নেয়, যাদের মধ্যে ৪৬.০৫ শতাংশ ছেলে এবং ৫৩.৯৫ শতাংশ মেয়ে। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী গত আট মাসে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩২.৯৯ শতাংশ ছেলে এবং ৬৭.০১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। মাদ্রাসাপড়ুয়া ৪৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনাবসানের পথ বেছে নিয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৯.২৯ শতাংশ ছেলে এবং ৬০.৭১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি ডিভিশন) আজিজুল হক মামুন এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।
আত্মহত্যার ঘটনা অনুসন্ধানে আঁচল ফাউন্ডেশনের তরুণ গবেষকরা আত্মহননের পেছনের বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে জানতে পারেন। এরমধ্যে যে কারণগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো— অভিমান, প্রেমঘটিত কারণ, সেশনজট, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, পড়াশোনার চাপ, পরিবার থেকে কিছু চেয়ে না পাওয়া, পারিবারিক কলহ, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি, চুরি বা মিথ্যা অপবাদ, মানসিক সমস্যা, বিয়েতে প্রত্যাখ্যাত, স্বামী পছন্দ না হওয়া, বাসা থেকে মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়া ইত্যাদি।
আরও রয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, বিষণ্নতা, বন্ধুর মৃত্যু, আর্থিক সমস্যার মতো বিষয়ও। প্রাপ্ত উপাত্ত অনুসারে, সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ২৫.২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেন। অভিমান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ২৪.৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে চাওয়া পাওয়ার অমিল হওয়ায় ৭.৪২ শতাংশ এবং পারিবারিক কলহের কারণে ৬.৫৯ শতাংশ আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে যৌন হয়রানির কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ৪.৬৭ শতাংশ। মানসিক সমস্যার কারণে এই পথে ধাবিত হন ৬.৫৯ শতাংশ। তাছাড়া পড়াশোনার চাপে ০.৮২ শতাংশ, সেশনজটের কারণে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে ০.৮২ শতাংশ এবং পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ১.৯২ শতাংশ আত্মহননের দিকে যান। ১.৬৫ শতাংশ চুরির মিথ্যা অপবাদে, ১.৯২ শতাংশ আর্থিক সমস্যায়, ০.৫৫ শতাংশ বন্ধুর মৃত্যুতে বিষাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়াও বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এবং স্বামী পছন্দ না হওয়ায় ১.১০ শতাংশ। তবে ১৫.৯৩ শতাংশের আত্মহননের কারণ জানা যায়নি।
পূর্বকোণ/রাজীব/পারভেজ