গত সংখ্যার পর
হল : ওয়েস্ট ল্যান্ড-এর মূল, অসংশোধিত পা-ুলিপি আপনার কাছে আছে?
এলিয়ট : সেকথা জিজ্ঞেস করবেন না। সেটা আমি জানি না। এটা একটা অমীমাংসিত রহস্য। আমি সেটা জন কুইন-এর কাছে বিক্রি করেছিলাম। আমি তাকে আমার একটা অপ্রকাশিত কবিতার নোটবুকও দিয়েছিলাম, কারণ তিনি আমার বিভিন্ন কাজে খুব সহযোগিতা করেছেন। পরে তিনি মারা যান, সেগুলো আর বাজারে আসেনি।
হল : পাউন্ড দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড থেকে কী ধরনের জিনিস বাদ দিয়েছেন? কোনো পুরো অধ্যায় কেটে দিয়েছেন কি?
এলিয়ট : পুরো অধ্যায়? হ্যাঁ। জাহাজডুবি নিয়ে একটা দীর্ঘ অধ্যায় ছিল। আমি জানি না সেটার কী প্রয়োজনীয়তা ছিল, সেটা, আমার মনে হয়, দ্য ইনফার্নো-এর ইউলিসিস সর্গের অনুপ্রেরণার ফল। আর একটা পরিচ্ছেদ ছিল যেটা রেপ অফ দ্য লক-এর অনুকরণে লেখা। পাউন্ড বলেছিলেন, ‘এমন কিছু করার কোনো মানে নেই যা অন্য কেউ করেছে, তা যদি তার চেয়ে ভালো করা যায়। করো আলাদা কিছু।’
হল : এই অস্ত্রোপচার কি কবিতার বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামোর কোনো পরিবর্তন ঘটিয়েছে?
এলিয়ট : না। আমার মনে হয় এটা দীর্ঘ আকৃতিতে যে রকম কাঠামোহীন ছিল সে রকমই রয়েছে, কেবল কিছুটা নিরর্থকভাবে।
হল : এই কবিতা নিয়ে আমার একটা প্রশ্ন আছে, সেটা তার সংগঠন বিষয়ে। সমালোচকরা বলেছেন, আপনি দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড-এ ‘একটা প্রজন্মের মোহমুক্তি’র কথা প্রকাশ করেছেন বা এটা যে আপনার পরিকল্পিত সে কথা আপনি অস্বীকার করেছেন। আপনি আপনার থটস আফটার ল্যাম্বেথ-এ সমালোচকদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এখন এফ. আর. লেভিস, আমার বিশ্বাস, বলছেন যে এই কবিতায় কোনো ক্রমোন্নতি দেখানো হয়নি; তাছাড়াও, অন্যদিকে, আরো সাম্প্রতিক সমালোচকরা আপনার পরবর্তীকালের কবিতা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ডকে খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কিত বলে চিহ্নিত করছেন। আমার জানতে ইচ্ছে করে এটা আপনার পরিকল্পিত কিনা।
এলিয়ট : না, এটা আমার সচেতন পরিকল্পনার অংশ নয়। আমি মনে করি যে থটস আফটার ল্যাম্বেথ-এ আমি যে পরিকল্পনার কথা বলেছি তা ইতিবাচকতার চেয়ে নেতিবাচক অর্থে বেশি বলেছি, কী আমার পরিকল্পনা ছিল না সেকথা বলার জন্য। আমি জানতে উৎসুক ‘পরিকল্পনা’ বলতে কী বোঝায়! একজন চাচ্ছে তার বুকের মধ্যে যা আছে তা বের করতে। অথচ সে পুরোপুরি জানে না তার বুকের মধ্যে থেকে সে কী বের করতে চায়, যতক্ষণ না তা বের হচ্ছে। তবে আমি ‘পরিকল্পনা’ শব্দটিকে আমার কবিতার ক্ষেত্রে বা কোনো কবিতার ক্ষেত্রেই, ইতিবাচক অর্থে প্রয়োগ করতে পারিনি।
হল : আপনি এবং পাউন্ড এবং আপনার প্রথম জীবন সম্পর্কে আমার আর একটা প্রশ্ন আছে। আমি কোথাও এক জায়গায় পড়েছি যে, আপনি এবং পাউন্ড, আপনাদের টিন-এজের শেষ দিকে, চতুষ্পদী লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কারণ মুক্তছন্দ নিয়ে অনেক হয়েছে।
এলিয়ট : আমার মনে হয় পাউন্ড সে রকম কিছু একটা বলেছিলেন। চতুষ্পদী রচনার পরামর্শ তারই। তিনি আমাকে এমঁক্স এত্ কামিস-এর (থিয়োফিল গোতিয়ের-এর কবিতা) দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন।
হল : আমার জানতে ইচ্ছে করছে আঙিক এবং বিষয়ের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে আপনার ধারণা কী। আপনি কি তাহলে কী লিখতে যাচ্ছেন সেটা পুরোপুরি জানার আগেই আঙিক বাছাই করবেন?
এলিয়ট : হ্যাঁ, একদিক থেকে তা-ই। একজন মূলটা পড়েছে। আমরা গোতিয়ের-এর কবিতাগুলো পড়লাম এবং ভাবলাম, ‘আমি কি এমন কিছু বলতে চাই যা এই আঙ্গিকের জন্য উপযুক্ত?’ আমরা পরীক্ষা করলাম। আঙিকটা কথ্যবস্তুকে শক্তি জোগাল।
হল : আপনি আপনার প্রথম দিককার কবিতায় মুক্তছন্দকে আঙ্গিক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কেন?
এলিয়ট : আমার প্রথম দিককার কবিতায় মুক্তছন্দের ব্যবহার শুরু হয়েছিল লাফর্জের আঙ্গিক অনুশীলনের প্রচেষ্টা হিসেবে। এর অর্থ ছিল অনিয়মিত দৈর্ঘ্যরে মিলযুক্ত পঙ্ক্তি এবং যত্রতত্র মিলযুক্ত শব্দের ব্যবহার। এটা ঠিক পুরোপুরি মুক্তছন্দ ছিল না, বিশেষ করে যে ধরনকে এজরা ‘অ্যামিগিজম’ বলেন (এমি লাওয়েল প্রসঙ্গে)। তারপর অবশ্য, পরবর্তী পর্যায়টা ছিল অনেক বেশি মুক্ত, যেমন ‘র্যা প্সডি অন এ উইন্ডি নাইট’। আমি জানি না এটা করার সময় আমার মনের সামনে কোনো রকম মডেল বা অনুশীলন ছিল কিনা। এটা এইভাবে এসে গেছে আরকি।
হল : আপনার কি মনে হতো যে, সম্ভবত, আপনি কোনো কিছুর বিরুদ্ধে লিখছিলেন, যা কোনো মডেল থেকেও বেশি কিছু? সম্ভত কোনো প্রতিষ্ঠিত কবির বিরুদ্ধে গিয়ে?
এলিয়ট : না, না, না। আমি মনে করি না কেউ অবিরাম প্রত্যাখ্যানের চেষ্টা চালিয়ে যাবে, বরং তার জন্য সঠিক কোনটা তার সন্ধান করতে হবে। কেউ কেউ সত্যি-সত্যিই রবার্ট ব্রিজেস-এর মতো কবি-ব্যক্তিত্বদের অবজ্ঞা করতে চেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি না কতকগুলো প্রতিষ্ঠিত আঙিককে ছুঁড়ে ফেলার রাজনৈতিক প্রয়াস কোনো ভালো কবিতার জন্ম দিতে পারে। আমি মনে করি এটা কেবল অবস্থান বদল। লোকেরা তাদের নিজেদের কথা বলার জন্য উপায় খোঁজে। ‘আমি বলতে পারি না এটা সেই পথ, আমি সেই পথ খুঁজছি যেটা আমার কাজে লাগবে।’ প্রচলিত রীতি নিয়ে কারো প্রকৃতপক্ষেই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়।
হল : আমার মনে হয় ‘প্রুফ্রক’-এর পরে এবং ‘জেরোনটিওন’-এর আগে আপনি ফরাশি ভাষায় কিছু কবিতা লিখেছিলেন, সেগুলো আপনার কালেক্টেড পোয়েমস-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমার জানতে ইচ্ছে হয় কী কারণে আপনাকে ওগুলো লিখতে হয়েছিল। তারপর কি আর লিখেছেন?
এলিয়ট : না, এবং আর কখনো লিখব না। সেটা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার যার কোনো ব্যাখ্যা আমি দিতে পারি না। সেই সময় আমি চিন্তা করেছিলাম আমি পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে গেছি। আমি কিছুকাল কিছুই লিখিনি এবং হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ফরাশি ভাষায় লিখতে শুরু করলাম এবং দেখলাম আমি পারি, সেই সময়। আমার মনে হয় আমি যখন ফরাশি ভাষায় লিখছিলাম তখন কবিতাকে ততটা গুরুত্ব দেইনি, এবং গুরুত্বের সঙ্গে না নেয়ার কারণে, আমি যে লিখতে পারছিলাম না সেজন্য ততটা উদ্বিগ্ন হইনি। আমি এসব করেছিলাম আমি যে পারি সেটা দেখার জন্য এক ধরনের দুঃসাহসিক অভিযাত্রা হিসেবে। কয়েক মাস এটা চলে। তার মধ্যে সবচেয়ে ভালোগুলো ছাপা হয়েছে। আমাকে অবশ্যই বলতে হবে যে এজরা পাউন্ড সেগুলো পড়েছেন এবং এডমন্ড ডুলাক, আমাদের পরিচিত লন্ডনবাসী ফরাশি, এ ব্যাপারে কিছু সাহায্য করেছেন।
কিছু কিছু আমরা বাদ দিয়েছি, সেগুলো মনে হয় সম্পূণরূপে লুপ্ত হয়েছে। তারপর হঠাৎ আমি আবার ইংলিশে লিখতে শুরু করি এবং ফরাশি ভাষায় লেখার সকল উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। আমার মনে হয় কোনো কিছু আমাকে আবার লেখা শুরু করতে সাহায্য করে থাকবে।
সমাপ্ত