চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজহার মাহমুদের প্রবন্ধগ্রন্থ প্রশান্তির পথ

শাহরিয়ার আদনান শান্তনু

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২২ পূর্বাহ্ণ

“সমালোচনা করা তাদের সাজে, যাদের উৎসাহ দেয়ার ক্ষমতা আছে। কারো মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য সমালোচনা করা তো কারো অধিকারে পড়ে না। সমাজে এমনও কিছু ব্যক্তি রয়েছে যারা অন্য মানুষের উন্নতি সহ্য করতে পারে না। উৎসাহ দেয়াটা যতটুকু ভালো তার চাইতে ভালো মনোবল ভেঙে না দেয়া। এটাই যেন আমাদের শিক্ষা হয়।” একজন মানুষ তার জীবনের পথ চলার শুরুতেই আশাব্যঞ্জক কিছু না পায়, কিংবা ইতিবাচক সাড়া না পায়, তাহলে ব্যক্তিটি কিভাবে সামনে এগুবে? একজন মানুষকে অবশ্যই বেড়ে উঠতে হলে তার পারিপাশির্^ক অবস্থা জেনে এগুতে হবে। শুরুতেই যদি মানুষটি নেতিবাচক সমালোচনার মুখোমুখি হয়, তাহলে তো তার যাত্রাপথ মসৃণ হবে না। যেকোন সৃষ্টিশীল কাজ করতে অবশ্যই অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহের বিষয় আছে। এমনই আশংকার কথা উল্লেখ করেছেন প্রাবন্ধিক আজহার মাহমুদ। সম্প্রতি তার প্রকাশিত প্রবন্ধ গ্রন্থের ‘প্রেরণার অন্যতম চাবিকাঠি উৎসাহ’ শীর্ষক প্রবন্ধে এই বিষয়ে আলোকপাত করেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আজহার মাহমুদের প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘প্রশান্তির পথ’। মোট চব্বিশটি প্রবন্ধ রয়েছে এই বইয়ে। প্রবন্ধগুলো হচ্ছে- ‘সংস্কৃতির ইতিহাস এবং বাঙালির সংস্কৃতি’, ‘আমাদের বাংলা সাহিত্য’, ‘প্রেরণার অন্যতম চাবিকাঠি উৎসাহ’, ‘লেখকদের কথা কি কেউ ভাবে?’, ‘মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়’, ‘মা-একটি ভালোবাসার শব্দ’, ‘কাদের জন্য এই বৃদ্ধাশ্রম?’ ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) এবং কিছু শিক্ষা’, ‘নারীর প্রতি সম্মান ফেসবুকেও চাই’, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের দায়িত্ব’, ‘একজন মহান ব্যক্তি : আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী (রহ.)’, ‘শিশুশ্রম বন্ধ ও শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’, ‘মনুষ্যত্ব আর মানবতা কই’, ‘আসুন দূষণ মুক্ত দেশ গড়ি’, ‘ছাত্র রাজনীতির হাতিয়ার হতে হবে কলম’, ‘চাই পারিবারিক শিক্ষা’, ‘তরুণদের সুযোগ দিতে হবে’, ‘তিনি সোনার বাংলার কারিগর’, ‘ভালো লেখার মূল্যায়ন’, ‘বাবা মাকে ভালোবাসতে শিখি’, ‘শুনবেন, বঙ্গবন্ধুর ঈদ কেমন ছিলো?’, ‘সড়ক নিয়ে কিছু কথা’, ‘মাদকসন্ত্রাস থেকে মুক্তি চাই’ এবং ‘আসুন, নিজেরা সচেতন হই’।

বয়সে নবীন আজহার মাহমুদ। চিন্তাধারা এবং লেখনীতে তা কিন্তু প্রকাশ পায় না। যেসব বিষয়গুলো নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন, তা কিন্তু আমাদের সমাজের বিদ্যমান সমস্যা নিয়েই। বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে, তার মূলে রয়েছে আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়। প্রবন্ধকার তাঁর ‘মনুষ্যত্ব আর মানবতা কই’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘এখন মানুষ অপরাধ করলেও তা তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। বড় জোর কেউ কেউ এই অপরাধটা ভিডিও করতে পারে। এখন মানুষ এতেই আনন্দ পায়। মানুষের পরিচয় এখন এভাবেই পাওয়া যায়। তাই আমাদের ভেতর জাগিয়ে রাখতে হবে নিজেদের মনুষ্যত্ব। পরিষ্কার করতে হবে নিজেদের বিবেক। মনুষ্যত্ব ছাড়া যেমন মানুষ হওয়া যায় না তেমনি বিবেকহীন ব্যক্তিও মানুষ হতে পারে না।’ প্রবন্ধকারের এই লেখাতেই বর্তমানের অস্থিরতার ছবি আমরা দেখতে পাই। সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন মর্মান্তিক ঘটনা যেভাবে ঘটছে, কেন ঘটছে, তার জন্য বেশি গবেষণার প্রয়োজন নেই। মনুষ্যত্ব বোধ যখন লোপ পায়, মানবতা যখন ধ্বংস হয়, তখন সমাজে এই রকম ঘটনা ঘটবেই। তাই আমাদের বিবেক জাগ্রত করার জন্য লেখক-পাঠক সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রবন্ধকার আজহার মাহমুদকে ধন্যবাদ। সময়োপযোগী প্রবন্ধ লিখে পাঠক সমাজকে সচেতন করার কাজে এগিয়ে এসেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট