পৃথিবী গোলাকার, তথ্যটা স্কুলের বিজ্ঞান বই পড়ে তোমরা আগে থেকেই হয়তো জানো। শুধু পৃথিবী না, চাঁদ, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র সবই গোলাকার।
অনেক আগে মানুষ মনে করতো পৃথিবী সমতল। কারণ, তখন মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক থেকে ছিল পিছিয়ে। ধীরে ধীরে মানুষ পুরো দুনিয়াটা ঘুরে দেখার সুযোগ পায়। অভিযাত্রীরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে গিয়ে দেখেন পৃথিবীটা আসলে গোল।
তবে মজার বিষয় হলো, এখনও কিছু মানুষ রয়েছে যারা বিশ্বাস করে পৃথিবী সমতল। ‘ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি’ নামে এদের আলাদা একটা আন্তর্জাতিক সংগঠনও রয়েছে। পৃথিবীজুড়ে এদের প্রায় কয়েক লাখ অনুসারী।
সে যাই হোক, আজ আমরা জানবো, পৃথিবী যদি গোলাকার না হয়ে সমতল হলে কী কী অস্বাভাবিকতা দেখা যেত? তার আগে জেনে নেওয়া দরকার, পৃথিবীটা গোলাকার কেন?
পৃথিবী গোলাকার হওয়া মূল কারণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। নিউটনের সূত্র অনুযায়ী মহাবিশ্বের যেকোনো বস্তু অপর বস্তুকে আকর্ষণ করে। মহাবিশ্বের সৃষ্টির শুরুতে যেসব যেসব বস্তুকণা কাছাকাছি অবস্থান করছিলো, সেগুলো পরস্পকে আকর্ষণ করে এবং একত্রিত হয়ে গোলাকার আকৃতি ধারণ করে। এগুলো আবার দূরে অবস্থিত বড় আকৃতির বস্তুর প্রভাবে ঘুরতে থাকে। এভাবে মহাবিশ্বে সৃষ্টি হয় ঘুরতে থাকা গোলাকার বস্তু। পৃথিবীর সৃষ্টিও এভাবেই।
এবার কল্পনা করা যাক, পৃথিবীটা একটা চাকতির মতো চ্যাপ্টা ও সমতল। পৃথিবীর অভিকর্ষ সবসময় এর কেন্দ্রের দিকে সব বস্তুকে টানতে থাকে। তাই পৃথিবীর আকৃতি চাকতির মতো হলে সবগুলো সমুদ্র অবস্থান করতো পৃথিবীর একদম মাঝ বরাবর, গঠন করতো অত্যন্ত বিশাল এক সমুদ্রের।
পৃথিবীর এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ভ্রমণ করাও খুব কষ্টকর হয়ে যেত। কারণ চাকতির কেন্দ্রের কাছাকাছি অনেক বেশি অভিকর্ষ টান অনুভব হবে, সামান্য নড়াচড়াও হয়ে যাবে কষ্টকর।
আবার কেন্দ্র থেকে যতো দূরে যাওয়া যাবে, অভিকর্ষ টান ততো কমতে থাকবে। এভাবে পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন অভিকর্ষ টান অনুভব করতে পারতো।
চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের উপর যে ছায়াটা তোমরা দেখতে পাও তা গোলাকার। পৃথিবী সমতল হলে এ ছায়াটা দেখাত পুরোপুরি সরু এবং লম্বা আকৃতির।