বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা সত্ত্বেও গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে জানান, যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে। সেখানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর কথা জানিয়ে ট্রাম্প দাবি করেন, ফিলিস্তিনিদের নিরাপদ ও আধুনিক আবাসন দেয়া হবে এবং এ কাজে মার্কিন সেনাদের প্রয়োজন হবে না। এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। কিন্তু এই বক্তব্য ট্রাম্পের আগের মন্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ৪ ফেব্রুয়ারি মি. ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ ( অবকাশযাপন কেন্দ্র ) বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের পাশ্ববর্তী দেশে স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে। হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং আমরা এটির পুনর্গঠনে কাজ করব।’ তিনি দাবি করেন, গাজার ১৮ লাখ মানুষ ধ্বংসস্তূপে থাকতে চায় না। বরং, তারা অন্য দেশে চলে যেতে চায়। এ জন্য গাজাবাসীদের আশ্রয় দিতে মিশর ও জর্ডানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু এই ধারণাকে ‘উল্লেখযোগ্য’ বলে অভিহিত করেন এবং এটি নিয়ে কাজ করা যায় বলে জানান। তিনি বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব ইতিহাস পাল্টে দিতে পারে এবং এটি মনোযোগ আকর্ষণের মতো।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে যেসব দেশ ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে, তাদের গাজাবাসীকে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গাজা দখলের পরিকল্পনার কথা জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা তাঁর ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টাদেরও বিস্মিত করেছে। কারণ, এ বিষয়ে কোনো সুসংগঠিত পরিকল্পনা ছিল না।বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ট্রাম্প প্রশাসন কিছুটা সুর নরম করেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেন, যদি (গাজার) জনগণকে সরাতেই হয়, তবে তা হবে সাময়িক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ট্রাম্প কেবল গাজার ধ্বংসস্তূপ সরাতে চান। আর তা করতে হলে উপত্যকাটির মানুষদের অন্য জায়গায় সরে যেতে হবে।
এদিকে, ট্রাম্পের বক্তব্যের পর গাজা থেকে বাসিন্দাদের ‘স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রস্তুতি নিতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৬ জানুয়ারি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এ নির্দেশ দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে কাৎজ বলেন, ‘প্রেসিডেন্টে ট্রাম্পের সাহসী পরিকল্পনাকে আমি স্বাগত জানাই। গাজার বাসিন্দাদের এলাকাটি ত্যাগ করা ও অভিবাসী হওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। সারা বিশ্বে এ ধরনের চর্চা আছে।’
গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চল থেকে গাজা সিটিতে নেতজারিম করিডোর দিয়ে প্রবেশ করছে বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী।
রিপাবলিকান দলে মতপার্থক্য : গাজা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবে তাঁর দলের মধ্যেও মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা আইনপ্রণেতারা বলছেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের জন্য তাঁরা দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান সমর্থন করেন। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের কূটনীতির ভিত্তি। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের করের অর্থ কিংবা সেনা পাঠানোর বিরুদ্ধে তাঁদের কেউ কেউ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে রিপাবলিকান সিনেটর রেন্ড পল বলেন, ‘আমার তো মনে হয় আমরা আমেরিকা ফার্স্টের জন্য ভোট দিয়েছি। আমাদের সম্পদ খরচ করে এবং আমাদের সেনাদের রক্ত ঝরিয়ে আরেকটি দখলদারত্বের কথা চিন্তা করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।’
কংগ্রেসে সামান্য ব্যবধানে ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে এগিয়ে আছে রিপাবলিকানরা। ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। সিনেটর ক্রিস ভন হোলেন বলেন, এটি হলো অন্য নামে জাতিগত নিধন। রিপাবলিকান সিনেটর জেরি মোরান বলেন, চাইলেই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ধারণা ছুড়ে ফেলে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, এটি এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়।
অবশ্য ট্রাম্পের গাজা দখলের প্রস্তাবের প্রশংসা করেছেন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে শান্তি নিশ্চিতের চেষ্টায় এটি সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ।
বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় : ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে গাজা দখলের পরিকল্পনা প্রথম ঘোষণার পর বিশ্ব নেতাদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন তার বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে ফিলিস্তিনিদের বৈধ আকাঙ্ক্ষার ওপর আঘাত এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছে দেশগুলো।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিন ও ইসরাইলে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রক্রিয়ায় তার দেশের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই তাদের ঘরে ফিরতে দিতে হবে।
গাজার ফিলিস্তিনি জনগণকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করার বিরোধিতা করেছে ফ্রান্সও। ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিষয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তার এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এটি ফিলিস্তিনিদের বৈধ আকাঙ্ক্ষার ওপর আঘাত এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য একটি বড় বাধা। গাজাকে ফিলিস্তিনিদের ভূমি আখ্যা দিয়ে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বলেন, অঞ্চলটি ভবিষ্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ, যা স্পেন সমর্থন করে এবং ইসরাইলের নিরাপত্তা ও উন্নতির নিশ্চয়তা দিয়ে গাজা পাশাপাশি অবস্থানে থাকতে হবে।
গাজাবাসীকে নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছে চীন, রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা আশা করে, সব পক্ষই যুদ্ধবিরতি ও সংঘাত পরবর্তী শাসনকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করবে যাতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনের বিষয়টিকে রাজনৈতিক সমাধানের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়া মনে করে, মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মীমাংসা কেবল দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ভিত্তিতেই সম্ভব।
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশকে চটিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র সৌদি আরব, যারা কি না ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল, তারা ফিলিস্তিনের পক্ষ অবস্থান নিয়েছে। তারা বলে দিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জর্ডান বলেছে, ইসরায়েলি বসতি বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া, তা অবশ্যই থামাতে হবে। মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ধ্বংস করবে এবং নতুন করে সংঘাত তৈরি করবে।
গাজায় যেকোনো ধরনের জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও। আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিগুলো মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নীতি সুনিশ্চিত করতে হবে। ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সামাজিক মাধ্যমে দেয়া পোস্টে সংস্থাটি বলেছে, গাজা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য বেআইনি ও ভয়ংকর। জোরপূর্বক উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেয়াকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
ফিলিস্তিনিরা কি মেনে নেবে : ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জোর দিয়ে বলেছেন, আমরা আমাদের জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন হতে দেব না। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রেরই অংশ। সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হবে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।
গাজায় ইসরায়েলের সঙ্গে ১৫ মাস ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া হামাস বলছে, ট্রাম্পের প্রস্তাব হবে আগুনে ঘি ঢালার মতো।
হামাসের সিনিয়র নেতা ইজ্জাত এল-রেশিক বলেন, ‘গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের নির্বাসন এবং গাজা উপত্যকার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের (ডোনাল্ড ট্রাম্প) বিবৃতিকে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’
যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে বসবাসকারীদের ‘একটি সুন্দর, নতুন, মনোরম ভূমিতে’ পুনর্বাসনের ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন, সে বিষয়ে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর মিশনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার)-এ একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
সেই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘যারা তাদেরকে (গাজাবাসী) একটি সুখী, চমৎকার জায়গায় পাঠাতে চায়, তাদের উচিত তাদেরকে (গাজাবাসী) ইসরায়েলের ভেতরে তাদের (গাজাবাসী) আদি বাড়িতে ফেরত পাঠানো। তিনি তার বক্তব্যে যোগ করেছেন যে ফিলিস্তিনিরা গাজায় তাদের বাড়িঘরে ফিরতে চায়। আমাদের মাতৃভূমি হলো আমাদের মাতৃভূমি…।
গাজার ধ্বংসস্তূপ সরাতে ২১ বছর লাগবে : গত ১৫ মাসের সংঘাতে মাত্র ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০ কিলোমিটার চওড়া গাজা উপত্যকা বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। একসময় কৃষিজমি ও সবুজ ঘরবাড়িতে পরিপূর্ণ গাজা এখন বালি ও ধ্বংসাবশেষের ভাগাড় যেন। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) জানিয়েছে, এই বিপুল ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলতে ২১ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, গাজার পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে। শরণার্থীশিবির ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর আশপাশে আবর্জনার স্তূপ জমছে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত সৌর প্যানেল ও ব্যবহৃত গোলাবারুদের রাসায়নিক পদার্থ মাটি ও পানির দূষণ ঘটাতে পারে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ধ্বংসযজ্ঞের ফলে গাজায় ৫০ মিলিয়নেরও বেশি টন ধ্বংসাবশেষ জমেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক নজিরবিহীন সীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল সামরিক অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৭ হাজার ৫৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ১১ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে বলে অঞ্চলটির হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও ৩৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্ত করা হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজায় ফিরে আসছেন দলে দলে বাসিন্দারা। ধ্বংসস্তূপে তাদের নিজেদের ঘরবাড়ি খুঁজতে দেখা গেছে। তারা বলছে, ‘আমরা আমাদের মাতৃভূমিতেই বাঁচব, এখানেই মরব। যুদ্ধ এবং বোমাবর্ষণ আমাদের গাজা থেকে সরাতে পারেনি, তাই ট্রাম্পও তা করতে পারবে না।’
গাজার ভবিষ্যৎ কি : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণায় ফিলিস্তিনিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায় যদিও তারা ইতোমধ্যে বিধ্বস্ত হলেও গাজা ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ট্রাম্প আবার আরেক দিক থেকে ফিলিস্তিনিদের চাপে ফেলেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ট্রাম্প। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘ পরিচালিত শরণার্থী সংস্থাকে (ইউএনআরডব্লিউএ) তহবিল দেওয়া বন্ধ করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এরপর পেছনেও রয়েছে ইসরায়েলের চাওয়া। দেশটির অভিযোগ, এই সংস্থা হামাসকে সাহায্য করে থাকে। হামাসের বাতাবরণ হয়েছে তাদের হাত ধরে। অর্থাৎ ইসরায়েলেরে চাওয়া অনুসারেই হাঁটছেন ট্রাম্প। পশ্চিম তীরের পর গাজাও ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে কি না, সে শঙ্কা বাড়ছেই। পাশাপাশি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা রয়েছে, সেটার ওপরও প্রভাব ফেলবে।
ভূরাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ইসরায়েল পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন করেছে। আর ট্রাম্পের নতুন এই সিদ্ধান্তের কারণে ফিলিস্তিনের সব এলাকাতেই অবৈধ বসতি স্থাপনের সুযোগ পাবে। তখন গাজায় জাতিগত নিধনের ঘটনা ঘটবেই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট ডাস বলেছেন, সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হলো ট্রাম্প এটাই বলে দিয়েছেন, ফিলিস্তিন নিয়ে ইসরায়েল তার শেষ লক্ষ্যে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র তার নীতি দিয়ে সমর্থন করবে। ফলে পশ্চিম তীরের মতো গাজা বেদখল হয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তথ্যসূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি ও গার্ডিয়ান।
লেখক: মুহাম্মদ মোরশেদ আলম, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক
পূর্বকোণ/এএইচ