চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিখোঁজ বাংলাদেশির লাশ মিলেছে স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ৬:৪৮ অপরাহ্ণ

স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে পাওয়া গেছে নিখোঁজ হওয়া ফরিদ উদ্দিন আহমেদের (৩৫) লাশ । গত ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। পরে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে ফরিদের স্বজনেরা তার লাশ শনাক্ত করেন।

ফরিদের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামে। তার লাশ বাংলাদেশে নিয়ে আসার প্রস্তুতি চলছে।

ফরিদ উদ্দিনের স্বজনরা জানান, ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে যান ফরিদ। খেলা শেষ হওয়ার পর বেশ কয়েকমাস রাশিয়ায় থাকেন তিনি। সেখান থেকে ইউক্রেনে যান। ইউক্রেনে মাস খানেক অবস্থান করার পর সম্প্রতি ফ্রান্স যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে থাকা দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তাদের সঙ্গে ফ্রান্সে যাওয়ার একটি চুক্তিও হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী দেশে থাকা মধ্যস্থতাকারী এক ব্যক্তির কাছে ৭ লাখ টাকা রাখে ফরিদের পরিবার। কথা ছিল গাড়িতে করে ফরিদকে ফ্রান্স পৌঁছে দেবেন দালালরা। এরপর জমাকৃত ৭ লাখ টাকা হস্তান্তর করা হবে তাদেরকে। চুক্তির পর ইউক্রেনে দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ফরিদ।

সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন ফরিদ। সে সময় তিনি জানান, পরদিন (২৮ আগস্ট) ফ্রান্সের উদ্দেশে রওনা দেবেন। এরপর পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি তার।

গত ২ সেপ্টেম্বর ফরিদ উদ্দিনের এক সঙ্গী (ফ্রান্স যাত্রাপথের) তার ছোট ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী কাওছার আলীকে জানান, একজন দালালের সঙ্গে ফরিদ উদ্দিনসহ তারা ৬ জন ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশে যাত্রা করেন। পায়ে হেঁটে ফ্রান্স পৌঁছাতে তাদের পাঁচ দিন সময় লাগে। কিন্তু তাদের সঙ্গে খাবার ছিল মাত্র দুদিনের। খাবার শেষ হওয়ার পর তাদেরকে শুকরের মাংস খেতে দেয় দালালরা। সেই খাবার খেতে অপারগতা জানান ফরিদ। তার সঙ্গে থাকা খেজুর খেয়ে আরো একদিন পার করেন তিনি। দুই দিন পায়ে হেঁটে তারা পৌঁছান স্লোভাকিয়ার একটি জঙ্গলে। সেখানে পৌঁছানোর পর খেজুর শেষ হয়ে যায় ফরিদের। এরপর শুকরের মাংস খেতে বাধ্য হন তিনি। এই খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে তার। প্রচণ্ড বমি আর ডায়রিয়া শুরু হলে একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি।

ওই জঙ্গলে সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে একটি বিকট শব্দ পেয়ে সবার ঘুম ভেঙে যায়।  এ সময় তারা ঘুম থেকে উঠে ফরিদকে পাশে দেখতে না পেয়ে জঙ্গলে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কোথাও ফরিদকে না পেয়ে একপর্যায়ে তাকে ছাড়াই ফ্রান্সের উদ্দেশে দালালদের সঙ্গে রওনা দেন তারা।

এ ঘটনা জানার পর আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি আমার ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে স্লোভাকিয়ার ওই জঙ্গলে তাকে ফেলে রেখে অথবা তাকে হত্যা করে দালালরা। এরপর তারা ফ্রান্সে চলে যায়।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফরিদ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর ছেলে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে ফরিদ সবার বড় ছিলেন। তার স্ত্রী সেলিনা সুলতানা উপজেলার রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তাদের তিন বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান আছে। ফরিদ বিদেশ যাওয়ার আগে স্থানীয় ইস্টার্ন ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।

ফরিদের ভাই গিয়াস উদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে  জানান, দালালরা তার ভাইয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং হত্যা করেছেন। তারা এ ঘটনার বিচার চান।

সব ধরনের প্রস্তুতি শেষে আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে তার ভাইয়ের মরদেহ বাংলাদেশ আসবে বলেও জানান তিনি ।

পূর্বকোণ/তাসফিয়া

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট