চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

মেটাভার্স কি আসন্ন বাস্তবতা?

ওয়াহিদ জামান

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ৪:১৯ পূর্বাহ্ণ

আপনি যদি ‘মেটাভার্স’ সম্পর্কে না শুনে থাকেন তবে এ কথাগুলো পড়ে দেখুন : ফেসবুক হলো বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান যার রয়েছে প্রতিদিন ২ বিলিয়নেরও বেশি এর বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী। গত বছর এটি নিজেকে ‘মেটা’ হিসাবে রি-ব্রান্ডিং করেছে। এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ একে ‘পরবর্তী প্রযুক্তি সীমান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। বিখ্যাত ‘টাইম ম্যাগাজিন’
এ বিষয়ের উপর একটি ‘নিউজলেটার’ বের করছে, যার শিরোনাম ‘Into the Metaverse : Your guide to the future of internet’। এই ফেব্রুয়ারির শুরুতে Microsoft (এ কোম্পানির বর্তমান বাজার মূল্য অন্তত ২ ট্রিলিয়ন ডলার) ৭৫ বিলিয়ন ডলারে বিখ্যাত গেমিং কোম্পানি ‘অ্যাক্টিভিশন’ কিনে নিয়ে নিজেকে সর্বকালের বৃহত্তম প্রযুক্তি অধিগ্রহিতা হিসেবে প্রমাণ করেছে। মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা বলেছেন, এটা আসলে এমন একটা বিনিয়োগ যার মাধ্যমে এমন একটা গেমিং কোম্পানির ‘বিকাশ সাধনের’ চেষ্টা চলবে যেটা ইতোমধ্যেই মেটাভার্সকে তার গেমিং প্ল্যাটফর্ম উন্নয়নের সহায়ক শক্তি হিসেবে গ্রহণ করেছিল।
সুতরাং স্পষ্টতই গুরুতর কিছু একটা প্রযুক্তি-জগতে চলছে। এটা এমন কিছু যা আমাদের সকলকেই প্রভাবিত করবে। এখানে প্রশ্ন হলো ‘মেটাভার্স কী? এবং ‘কেন এতে এতো ‘মনোযোগ’, কেন এর উন্নয়নে এতো ‘বিনিয়োগ’?
প্রথমে আসা যাক ‘মেটাভার্স কী’-এর উত্তরে। মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলার কথায়, মেটাভার্স মূলত গেম তৈরি সম্পর্কিত।
এটি এমন একটা কিছু যার মাধ্যমে মানুষ, স্থান, জিনিস ইত্যাদিকে একটা পদার্থবিদ্যার ইঞ্জিনের ভেতরে কোনোওভাবে প্রবেশ করিয়ে দেয়া গেলেই হলো- তারা নিজেদের ভেতরে ভাবের আদান-প্রদান নিজেরাই করে নিতে সক্ষম হবে।
অর্থাৎ মেটাভার্সের কারণে ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতকে মনে হবে বাস্তব জগতের মতো যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে বহুমাত্রিক। মেটাভার্স প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি কোন কিছু শুধু দেখতেই পাবেন না, তাতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতেও সক্ষম হবেন। এটাকে থ্রি-ডি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডও বলা যাবে। স্ক্রিনে এখনকার বেশিরভাগ স্পেস হচ্ছে টু-ডি বা দ্বিমাত্রিক। কিন্তু মেটাভার্স জগতে আমাদের অভিজ্ঞতা হবে থ্রি-ডির মতো।
এক প্রযুক্তি পরামর্শবিদ গার্টনার মেটাভার্সকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে- এটি এমন একটা ‘সম্মিলন জগত’ যেখানে ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল বাস্তবতাকে অভিন্নভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। এর চালক শক্তি হবে একটা ভার্চুয়াল অর্থনীতি, যেটা সক্রিয় থাকবে ডিজিটাল মুদ্রা আর নন-ফাঞ্জিবল টোকেন (এনএফটি) দ্বারা। মেটাভার্স দ্রুত বুঝতে, অনলাইন গেম বা কনসোল ভিত্তিক গেমের কথা ভাবতে পারেন। অনলাইন টাইটেল এই যেমন, Fortnite, Minecraft, League of Legends অথবা পুরানো কনসোল গেম, যেমন সুপার মারিও ব্রোস কিংবা হ্যালো’র কথা মাথায় আনতে পারেন। পুরো হলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তুলনায় গেমিংয়ের জগত আয় এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটাই বড়। ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতা কেবল খেলার সময়ই একজন ব্যবহারকারী যথার্থভাবে পেয়ে থাকে। তাদের এই অভিজ্ঞতা ক্রমবর্ধমান গ্রাফিক্স এবং উন্নততর কম্পিউটিং শক্তির সাহায্যে ক্রমেই আরো পরিশীলিত হয়ে উঠে।
নাদেলা, জুকারবার্গ এবং এমন অন্যদের দ্বারা পরিকল্পিত বিশ্ব হল এমন একটি বিশ্ব যেখানে ব্যবসা, যোগাযোগ পণ্য, পরিষেবা এবং এমনকি সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ও হবে ভার্চুয়ালি। আপনি যদি আমার মতোই একজন হন, তবে, এই সব আসলে যে গতিতে বিকশিত হবে বলে মনে হচ্ছে সে সম্পর্কে আমি কিছুটা সন্দিহান। কিন্তু মেটাভার্সের অনেক বৈশিষ্ট্যই ক্রমবর্ধমানভাবে তেমন রূপই নিচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, মাইক্রোসফট’র আসন্ন ‘পণ্য’, ইতোমধ্যেই ডিজিটাল মুদ্রা আর নন-ফাঞ্জিবল টোকেন’র (এনএফটি) মাধ্যমে মিলিয়ন ডলারে কেনা এবং বিক্রি করা হচ্ছে। এমন একটি জগতের কথা চিন্তা করুন- যেখানে আমাদের দৈনন্দিন অনেক কর্মকা- সম্পূর্ণরূপে ভার্চুয়াল বাস্তবতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা ভৌত জগতে যেমন দেখি- এই যেমন দোকানে হেঁটে যাওয়া বা কারো সাথে মুখোমুখি বসে কথা বলা, মেটাভার্সে এই সবই কার্যত ঘটতে চলেছে ভার্চুয়ালি!
কিন্তু এই মুহূর্তে মেটাভার্স নিয়ে এত আলোচনা কেন? ইতিহাস আমাদের জানাচ্ছে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে
সর্বদাই ‘পরবর্তী বড় জিনিস’টার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে থাকে। ক্লাউড কম্পিউটিং-নির্ভর সোশ্যাল মিডিয়া, ই-ইমার্স এবং ডিজিটাইজেশন- এগুলো নিশ্চিতভাবেই বড় প্রযুক্তি যাকে অনেকেই সম্মিলিতভাবে ওয়েব ২.০-ও বলে থাকে। একই ধারায় প্রযুক্তি জায়ান্টরা সকলেই মেটাভার্সকে পরবর্তী ‘বড় জিনিস’ হিসাবেই দেখছেন।
অপেক্ষাকৃত আগের প্রযুক্তিগুলোর অনেকক’টিই এখনো স্ব-মহিমায় টিকে রয়েছে। যেমন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর)। তবে মেটাভার্সের উপর ফোকাস আরও ‘সামগ্রিক এবং সর্বাঙ্গীণ’।
বিল গেটস একবার বলেছিলেন যে ভবিষ্যতের একটি ‘দর্শন’ কখনই ততটা কাছের নয় যতটা এটিকে প্রচার করা হয়, তবে একই সময়ে এটি ততটা দূরেরও নয়, যতটা অন্যদের কাছে মনে হয়। সম্ভবত মেটাভার্সের ক্ষেত্রে এটিই সত্যি।

লেখক : সিইও, ডব্লিউএন্ডএ কনসাল্টিং : প্রাক্তন প্রধান কৌশলী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হারেশ (Hershey)
ফার্মার ব্রাদার্স’র পরিচালনা পরিষদের সদস্য
এছাড়াও ‘ফরচুন ফাইভ হানড্রেড’ কোম্পানির বেশ ক’টি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে উদ্যোক্তাদের পরামর্শ আর সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট