চট্টগ্রাম বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

উচ্চশিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বদলে যাচ্ছে শিক্ষার অবয়ব
এআই

উচ্চশিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বদলে যাচ্ছে শিক্ষার অবয়ব

আমির সোহেল রাব্বী, প্রিয়া দাশ

২৫ মে, ২০২৫ | ১০:০৩ অপরাহ্ণ

উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এখন আর ভবিষ্যতের কোনো কল্পনা নয়,বরং বর্তমানের বাস্তবতা। গবেষণা, লেখালেখি, উপস্থাপনা কিংবা বিশ্লেষণ প্রতিটি ধাপে শিক্ষার্থীরা এখন ChatGPT, Grammarly, DALL·E, ChemDraw, Python-এর মতো AI টুল ব্যবহার করে এগিয়ে নিচ্ছেন নিজেদের একাডেমিক পথচলা। কলা থেকে শুরু করে বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় AI হয়ে উঠছে জ্ঞানের সহযাত্রী। তবে এর সঙ্গে এসেছে নৈতিকতা, নির্ভরযোগ্যতা ও মৌলিকতার প্রশ্নও। প্রযুক্তির এই ঢেউ কেবল শিক্ষার্থীদেরই নয়, শিক্ষক ও প্রশাসনের কাছেও তৈরি করছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দ্বার। প্রশ্ন উঠছে, এই প্রযুক্তি কি শিক্ষার মান বাড়াচ্ছে, নাকি ভাবনাশক্তিকে স্থবির করে দিচ্ছে?

 

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছি—উচ্চশিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ফলে কিভাবে বদলে যাচ্ছে শিক্ষার অবয়ব।

 

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের মতামত দিয়েছে। তাদের মতামতগুলো প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো:

চারুকলা অনুষদের একজন শিক্ষার্থী জানান, Midjourney এর মতো টুল ব্যবহার করে তারা থিম ও ভিজ্যুয়াল কনসেপ্ট তৈরি করে। এটি সময় বাঁচায় এবং নতুন ভাবনার পথ উন্মুক্ত করে ।

 

রসায়ন বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, “ChemDraw AI ও ChatGPT দিয়ে গবেষণাপত্রের খসড়া তৈরি ও তথ্য বিশ্লেষণ করি। তবে যাচাই ছাড়া AI-র তথ্য নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।”

 

ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, Grammarly ও Quillbot-এর সহায়তায় তিনি লেখার মান উন্নত করেছেন। “AI শুধু সহায়ক—মূল চিন্তা ও গঠন এখনো আমাদেরই করতে হয়,” তিনি জানান।

 

পরিসংখ্যান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, “Python ও AI দিয়ে ডেটা বিশ্লেষণ এখন অনেক সহজ হয়েছে। Visualization এবং প্যাটার্ন খোঁজার কাজ আগের চেয়ে অনেক দ্রুত হয়।”

অন্যদিকে, আইন বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, “AI টুল ব্যবহার করে আমরা আইনি আর্টিকেল বা কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করি। কিন্তু প্রশ্ন উঠে যায় — এই বিশ্লেষণ কি সবসময় সঠিক নাকি পক্ষপাতদুষ্ট?”

 

ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের একজন শিক্ষার্থী বলেন, “Excel, Power BI বা AI বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট বিশ্লেষণ এখন অনেক সহজ হয়েছে। তবে আমাদেরকেও শিখতে হচ্ছে কীভাবে তথ্য যাচাই করতে হয়।”

 

সুবিধা ও আশঙ্কা:

AI শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কাজ সহজ করছে, বিদেশি কনটেন্ট বুঝতে সাহায্য করছে, এমনকি প্রেজেন্টেশনের স্ক্রিপ্ট তৈরি করতেও সহায়তা করছে। তবে অপব্যবহার, যেমন কপি-পেস্ট বা একদম নিজে না ভেবে জেনারেটেড কনটেন্ট সাবমিট করা — এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগও তৈরি হয়েছে।

 

শিক্ষকদের ভূমিকা ও ভবিষ্যতের ভাবনা:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, “AI কে পুরোপুরি বাদ দেয়া সম্ভব নয়। বরং আমাদের উচিত শিক্ষার্থীদের শেখানো কীভাবে এটি নৈতিকভাবে ব্যবহার করতে হয়।”

 

AI হয়তো শিক্ষাকে বদলে দিচ্ছে, কিন্তু শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য — চিন্তা করার, প্রশ্ন করার, এবং নতুন কিছু জানার — তা কখনোই বদলাবে না।

 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ পরিবর্তন উপলব্ধি করছে। ICT সেলের একজন কর্মকর্তা জানান, “AI ব্যবহারে দিকনির্দেশনা ও সচেতনতা বাড়াতে কাজ চলছে। ভবিষ্যতে ‘Responsible AI Use’ নিয়ে ওয়ার্কশপের পরিকল্পনা রয়েছে।”

 

শেষ কথা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর ভবিষ্যতের কল্পনা নয়, বরং আমাদের শিক্ষার বাস্তব অংশ। তবে এর ব্যবহার যেন হয় জ্ঞানের সহায়ক, বিকল্প নয় — সেই দিকেই নজর দেওয়া উচিত।

AI যেমন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে, তেমনি অনৈতিক ব্যবহার ও তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। শিক্ষার্থীদের মতে, সচেতন ব্যবহারের মাধ্যমেই AI হতে পারে উচ্চশিক্ষার শক্তিশালী সহায়ক।

 

লেখকদ্বয়: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট