কলা এমন একটি ফল, যেটি সারাবছরই পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফল সাধারণ রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সহায়তা করে। কলায় রয়েছে প্রচুর শর্করা, ভিটামিন (এ, বি ও সি), ক্যালসিয়াম, আয়রন বা লোহা ও পর্যাপ্ত খাদ্যশক্তি। অন্যান্য ফলের তুলনায় কলা সহজলভ্য। দামেও সস্তা। তাই যে কোনো পেশার মানুষ সহজে এই ফলটি খেতে পারেন। উৎপাদন, স্বাদ ও সুগন্ধের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় কলাকে অনেকে ফলের রানি বলেন।
আসুন জেনে নিই কলার কিছু উপকারিতা। কলায় থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম। এই পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। কলা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ ও শর্করা সমৃদ্ধ। কলা খেলে পেট ভরা ভরা লাগে, খিদেও কমে যায়। ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া কমে এবং ওজন বাড়তে পারে না।
এছাড়া কলা আমাদের রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে ফেলে এবং ইনসুলিন হরমোনের প্রতি শরীরের সংবেদনশীলতা বাড়ায়। শরীর যদি ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীল না থাকে, তাহলে গ্লুকোজ ঠিকভাবে শোষিত হয় না। শরীরে বেশি ইনসুলিন থাকলে মানুষের ওজন বেড়ে যায়। রক্তে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে গিয়ে বা হিমোগ্লোবিন কমে গিয়ে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগ হয়। অ্যানিমিয়া হলে শরীর ফ্যাকাশে লাগে, ক্লান্তিবোধ ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। কলায় থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আয়রন রক্তে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে। এছাড়া কলায় থাকে ভিটামিন বি৬, যা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
কলা আমাদের গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল অঙ্গগুলোয় কোনো রকম প্রদাহ তৈরি না করে সহজেই পরিপাক হতে পারে। কলায় থাকে এক ধরনের প্রতিরোধী স্টার্চ, যা পরিপাক না হয়ে বৃহদন্ত্রে গিয়ে অবমুক্ত হয়। বৃহদন্ত্রে এই স্টার্চ স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার খাদ্যে পরিণত হয়। ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে যেসব খনিজ পদার্থ বের হয়ে যায়, সেসব পূরণে কলার জুড়ি মেলা ভার।
কলায় থাকে যথেষ্ট পরিমাণে ট্রিপ্টোফ্যান। ‘হাসি-খুশির হরমোন’ বা সেরোটোনিন তৈরিতে প্রয়োজন এই ট্রিপ্টোফ্যান। এছাড়া প্রতিটি কলায় গড়ে ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম থাকে। মন ভালো রাখতে ও ভালো ঘুমের জন্য এই ম্যাগনেশিয়াম খুবই প্রয়োজন। কলায় থাকা পটাশিয়াম আমাদের মাংসপেশিতে ক্র্যাম্প হওয়া থেকে রক্ষা করে ও কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে।
আগেই বলা হয়েছে, কলা ভিটামিন বি৬-সমৃদ্ধ। গড়ে একটি কলা আমাদের ভিটামিন বি৬-এর দৈনন্দিন চাহিদার পাঁচ ভাগের এক ভাগ পূরণ করতে পারে। দেহে সুস্থ কোষ তৈরিতে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন, হিমোগ্লোবিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপাদনে এই ভিটামিন বি৬ খুবই দরকার। আবার আমাদের ভিটামিন সি’র দৈনন্দিন চাহিদার ১৫ শতাংশ কলাই পূরণ করে।
পূর্বকোণ/ইবনুর