প্রতি বছর ২৫ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব থাইরয়েড দিবস। থাইরয়েড গ্রন্থি ও এর বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়। থাইরয়েড শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা গলার সামনের অংশে অবস্থিত। এটি হরমোন উৎপাদনের মাধ্যমে আমাদের শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থির অসামঞ্জস্যপূর্ণ কাজের ফলে শরীরে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে জীবনের মান খারাপ করে দিতে পারে।
২০২৫ সালের বিশ্ব থাইরয়েড দিবসের থিম হলো ‘থাইরয়েড রোগ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’। এই থিমটি অত্যন্ত সময়োপযোগী, কারণ আধুনিক প্রযুক্তির মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন স্বাস্থ্যসেবায় এক বিশাল বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এআই এখন এমন সফটওয়্যার ও ডিভাইস তৈরি করছে, যা সহজেই থাইরয়েডের মতো জটিল রোগের আগাম উপসর্গ শনাক্ত করতে পারছে। চিকিৎসকরা রোগীর পূর্ববর্তী চিকিৎসা ইতিহাস ও নানা ধরণের পরীক্ষার রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে এখন আরও দ্রুত ও নিখুঁত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন, যা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক বড় অগ্রগতি।
থাইরয়েডের সমস্যা সাধারণত দুইভাবে প্রকাশ পায়, হাইপোথাইরয়ডিজম এবং হাইপারথাইরয়ডিজম। হাইপোথাইরয়ডিজমে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ শরীরে কমে যায়, ফলে মানুষ দুর্বলতা, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, বিষণ্ণতা ও ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভোগে। অন্যদিকে, হাইপারথাইরয়ডিজমে হরমোনের উৎপাদন বেড়ে যায়, ফলে ওজন হ্রাস, ঘাম, নার্ভাসনেস এবং হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যায়। এছাড়া গলার সামনের অংশে ফোলাভাব, চুল পড়া বা ত্বকের শুষ্কতা দেখা গেলে তা থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম এই আধুনিক ধারাকে অনুসরণ করে রোগীদের বিশ্ব মানের থাইরয়েড চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। এ হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি এবং সার্জারি বিশেষজ্ঞ দল অভিজ্ঞ ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি রোগীকে ব্যক্তিগতভাবে মূল্যায়ন ও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রামে হাসপাতালে রয়েছে থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, থাইরয়েড স্ক্যান, এফএনএসি এবং থাইরয়েড বায়োপ্সির মতো উন্নত ডায়াগনস্টিক সুবিধা। রোগ নির্ণয়ের পর থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত ওষুধ, লাইফস্টাইল গাইডলাইন এবং প্রয়োজনে অপারেশনাল ব্যবস্থার সুযোগ রয়েছে।
বিশ্ব থাইরয়েড দিবস শুধু একটি দিন নয়। নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন হওয়ার এবং পরিবারের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবার আরও একটি উপলক্ষ এই দিনটি। আমাদের উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং শরীরে অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। থাইরয়েড রোগ অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য, শুধুমাত্র প্রয়োজন সচেতনতা ও সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা।
লেখক:
এমবিবিএস, এফআরসিপি (গ্লাসগো)
ডিইএম (বারডেম)
কনসালটেন্ট, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ