প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১৭ এপ্রিল পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য ‘মহিলা এবং মেয়েদেরও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ জনিত রোগ হতে পারে’।
হিমোফিলিয়া মূলত পুরুষদের রোগ হলেও মহিলা ও মেয়েদের মধ্যেও অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণজনিত রোগ হতে পারে। হতে পারে এটি হিমোফিলিয়া বা অন্যান্য বিরল রক্তক্ষরণ জনিত রোগ। ভুল ডায়াগনসিস, পরীক্ষার অপ্রতুলতা, অত্যধিক ব্যয়, সমাজে অনগ্রসর শ্রেণি হিসেবে মহিলা ও মেয়েরা এর ভুক্তভোগী। তাই তাদের রক্তক্ষরণ জনিত এই রোগের চিকিৎসা সচেতনতার জন্য এই প্রতিপাদ্য।
রক্তের হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠী মূলত পুরুষরা হলেও মেয়েরা এর বাহক বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু বাহক শ্রেণীর মধ্যে রক্তের ফ্যাক্টর-৮ এর ঘাটতি মাত্রা হিমোফিলিয়া স্তরে (<৪০%) পৌঁছালে হিমোফিলিয়ার বাহক মহিলারাও পুরুষের মত আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া ‘ভন উইলিব্র্যান্ড’ নামক রক্তক্ষরণ জনিত রক্তরোগটিও মূলত উত্তরাধিকার সূত্রে পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
এইসব রক্তক্ষরণজনিত রোগ সঠিকভাবে নির্ণয়ের জটিলতার কারণে নারীরা এগুলো সাধারণ স্ত্রী রোগ হিসেবে প্রতিনিয়ত ভুল চিকিৎসার শিকার হন এবং বেশিরভাগ সময় অস্বাভাবিক জরায়ু রক্তপাত হিসেবে অপ্রয়োজনীয় শল্য চিকিৎসারও মুখোমুখি হন। এই বিষয়ে ‘উইম্যান ইউথ হিমোফিলিয়া এন্ড ভন উইলিব্যান্ড ডিজিজ’ সম্পর্কে চিকিৎসাকর্মী যথা ডাক্তার, রোগী ও সহায়ক সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
হিমোফিলিয়া সেক্স ক্রোমোজম সংশ্লিষ্ট হলেও ‘ভন উইলিব্র্যান্ড ডিজিজ’ হল অটোজোম সংশ্লিষ্ট উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রক্তক্ষরণ জনিত রক্তের আর একটি রোগ। যা সাধারণ জনসংখ্যায় আনুমানিক প্রাদুর্ভাব ০.১ শতাংশ। সহজে এই রোগটি শনাক্ত করা কঠিন। শিশু, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই এ রোগে আক্রান্ত হয়। তবে এ রোগের ডায়াগনসিসে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। দীর্ঘ সূত্রতার কারণে এর ডায়াগনসিস বিলম্বিত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে রোগীদের জটিলতায়ও পড়তে হয়। শিশুদের সাধারণত নাকে বা অস্বাভাবিক স্থানে রক্তক্ষরণ ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের অস্বাভাবিক ঋতুস্রাব ও প্রসব পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ‘ভন উইলিব্র্যান্ড’ রোগ নির্ণয়ের সহায়ক উপসর্গ হলেও পুরুষদের শল্য চিকিৎসা পরবর্তী সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ও প্রলম্বিত রক্তক্ষরণের মাধ্যমে এর ডায়াগনসিস্ হয়।
আবার কিছু ব্যক্তিদের মধ্যে ‘ভন উইলিব্র্যান্ড’ ফ্যাক্টরের (ভিডব্লিউএফ) উৎপাদন মাত্রা সাময়িক হ্রাস বা ধ্বংসের ফলে স্বল্পতার সৃষ্টি হতে পারে। ফলে এটি সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে। আবার কিছু রক্তরোগ রক্তের মায়েলোপ্রোলিফারেটিভ ডিসর্ডার, ভাল্ব জনিত হৃদরোগ, হাইপোথাইয়েডিজম বা অন্যান্য রোগে ও ভন উইলিব্র্যান্ড ফ্যাক্টর মাত্রা কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ‘ভন উইলিব্র্যান্ড’ রোগ হিসেবে ভুল ডায়াগনসিস হতে পারে।
‘ভন উইলিব্র্যান্ড’ রোগের উপসর্গ বেশির ভাগ সময় হিমোফিলিয়া সদৃশ না হলেও কিছু বিরল মারাত্মক শ্রেণী হিমোফিলিয়া হিসেবে ভুল হতে পারে, সেক্ষেত্রে লিংঙ্গ রোগ নির্ণয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শরীরের উপরিভাগের অস্বাভাবিক স্থানে শিশুদের যেমন নাক, কান, দাঁতের মাড়ি নরম কোষ কলায় মেয়েদের ঋতুস্রাবের শুরুতে মহিলাদের প্রসব পরবর্তী এবং পুরুষদের শল্য চিকিৎসাকালীন অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ ‘ভন উইলিব্র্যান্ড’ রোগের প্রধানতম উপসর্গ।
লেখক: অধ্যাপক (ডা.) মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, প্রাক্তন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, হেমাটোলজি (রক্ত ও রক্তরোগ বিভাগ) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
পূর্বকোণ/ইব