এমন ভ্যাপসা গরমে তরতাজা মানুষই যেখানে নাকাল হয়ে পড়েন, সেখানে শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক মানুষ ও রোগীদের অবস্থা হয় আরো বেগতিক ৷ কাজেই এমন গরমে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে৷ না হলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন৷
নিজেকে সুস্থ রাখতে ও অসুখ এড়াতে তাই কিছু সাবধানতা নিতেই হবে। সতর্ক থাকতে হবে বাড়িতে কোনো বিশেষ রোগে আক্রান্ত সদস্য থাকলেও। অসুস্থতার ধরন ও তার প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা থাকলে রোগ সামলানো সহজ হয়।
ভ্যাপসাগরমেরঅসুস্থতা
এমন গরমে অতিরিক্ত কাজ, খেলা বা ব্যায়াম করলে পেশিতে তীব্র ব্যথা হতে পারে৷ একে বলে হিট ক্র্যাম্প৷
ঘাম ও চড়া রোদের যুগলবন্দিতে র্যাশ বেরোতে পারে চামড়ায়৷
রান্নারান্না সেরেই এসি চালিয়ে বিশ্রাম নিলে, বাইরে থেকে এসে ঘাম না শুকিয়ে ঠান্ডা জল খেলে বা ঠান্ডা ঘরে বসে পড়ার মতো অনিয়ম করলে জ্বর–সর্দি–কাশি এড়ানো কঠিন৷
ভাদ্রের রোদের দিন হিট এক্সারসানে খুব বেশি ঘাম হয়৷ রোগী ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েন৷ দ্রুত শ্বাস পড়ে৷ তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা না নিলে এখান থেকে হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা প্রবল৷
হিট সিনকোপ নামের সমস্যায় রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান৷
হিট স্ট্রোকে তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমজোরি হয়ে হঠাৎ শরীরের তাপ বেড়ে যায়৷ ১০৫ ডিগ্রির উপর৷ এটা কিন্তু জ্বর নয়৷ এর সঙ্গে ঘাম হয় না বলে শরীরের তাপ বেরোতে পারে না৷ বিপদ বাড়ে৷
ভাদ্রে সারাদিন খুব ভ্যাপসা গরমের পর সন্ধ্যের দিকে ঝড়বৃষ্টি এলে হঠাৎ ৭–৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমে যায়। এজমার রোগীদের এই সময় যত্নে রাখুন। তাপমাত্রার ওঠানামায় এঁদের অ্যাটাক হতে পারে৷
বিপদঠেকাতে
হলদেটে ইউরিন হলে বা ইউরিনের পরিমাণ কমে গেলে অধিক পরিমাণে পানি পান করুন৷পানি খাওয়ার বিধিনিষেধ থাকলে অবশ্য আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷
ডিহাইড্রেশন এড়াতে মদ–কফি–কোলা খাওয়া কমান৷ হালকা খাবার খান, পেট একটু খালি রেখে৷ বেশি খেয়ে রোদে বেরোবেন না বা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না৷
চড়া রোদ এড়ানো সম্ভব না হলে বেরুনোর আগে এক গ্লাস পানি পান করুন৷ প্রেশার–সুগার না থাকলে নুন–চিনির জল বা ওআরএস খেতে পারেন৷ এক–আধবার ডাবের জল, টাটকা ফলের রস বা ঘোলও খেতে পারেন৷ রাস্তার জল, শরবত বা কাটা ফলের রস খাবেন না৷
রোদে বেরুলে ছাতা/টুপি, সানগ্লাস ও হালকা সুতির পোশাক পরুন।
রোদে বা গরমের মধ্যে অনেক ক্ষণ টানা কাজ করবেন না৷ কাজের ফাঁকে ঠান্ডা জায়গায় বসে বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজে ফিরুন৷
হাঁপানি রোগীরা এই সময় দিনের শেষে আকাশে মেঘ দেখলে প্রিভেন্টার ইনহেলারের একটা পাফ নিন৷ বা যদি মনে হয় কষ্ট শুরু হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধের ডোজ বাড়ান৷
সমস্যাহলে
পেশিতে ব্যথা হলে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় গিয়ে ব্যথা না কমা পর্যন্ত বিশ্রাম নিন৷ ওআরএস খেতে হবে৷ ছাতা, টুপি ও সানস্ক্রিনে সান বার্ন ও র্যাশ ঠেকানো না গেলে দিনে দু’তিন বার ঠান্ডা জলের ঝাপটায় মুখ ধুয়ে ক্যালামাইন লাগান৷ এন্টিএলার্জিক ওষুধ খেতে হতে পারে৷
হিট এক্সারশন হলে গরম থেকে সরে গিয়ে বিশ্রাম নিন৷ কষ্ট না কমা পর্যন্ত লবণ–চিনির শরবত বা ওআরএস খেতে থাকুন৷ ডাবের পানিও খেতে পারেন৷ কষ্ট কমতে শুরু করার পর হাত–মুখ ধুয়ে ফ্যান বা এসি চালিয়ে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিন৷