চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কিছু বিতর্কিত খাবারের মীমাংসা

সু স্থ থা কু ন

২০ জুলাই, ২০১৯ | ২:০০ পূর্বাহ্ণ

কিছু কিছু খাবার রয়েছে যা খেতে গেলে আপনার মনে সন্দেহ উঁকি মারতে পারে যে এ খাবার কি আমার জন্য ভালো হবে? কেবল আপনি নন, অনেকের মনেই এ ধরনের প্রশ্নের উদয় হয়। আপনার মনের দ্বিধা দূর করতে এ প্রতিবেদনে কিছু বিতর্কিত খাবারের স্বাস্থ্য মীমাংসা দেয়া হলো।
* ডিম : কয়েক বছর আগেও হৃদপি- বিশেষজ্ঞরা কোলেস্টেরল কনটেন্টের কারণে ডিমকে মন্দ তালিকায় রাখত। কিন্তু এরপর গবেষকরা গবেষণায় পেয়েছেন যে, ডিমের কুসুম রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রায় তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। সম্প্রতি একটি গবেষণায় ডিম ও হৃদপি-ের সমস্যার মধ্যকার যোগসূত্র আবারও ডিমপ্রেমীদের মনে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করেছে। এ গবেষণার ফলাফল সত্ত্বেও ডায়েটিশিয়ানরা বলছেন যে আমাদের ডিম এড়িয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু সীমার বাইরে যাবেন না। রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশন কোচ এমিলি টিলস বলেন, ‘আমাদের ডায়েটে ডিমের সংযোজন নিয়ে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। ডিমকে প্রোটিনের একটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডিমে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা আমাদের শরীর উৎপাদন করতে পারে না এবং অন্যান্য খাবারের সঙ্গে আমরা অবশ্যই ডিম খেতে পারি। ডিমের কুসুম ও সাদা অংশে বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে।’ আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অংশ হিসেবে দিনে একটি করে ডিম খেতে পরামর্শ দিচ্ছে।
* ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং : ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং হচ্ছে সপ্তাহে বা দিনে একটা নির্দিষ্ট সময় না খেয়ে থাকার ডায়েট। নারী ও পুরুষভেদে এই না খেয়ে থাকার সময়সূচি আলাদা। সহজ কথায় বললে এটি সপ্তাহে এক দিন, দুই দিন বা কখনো কখনো টানা তিন দিন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শুধু পানি আর ফলের রস পান করে থাকার ডায়েট। যেমন সপ্তাহে দুই দিন মানে ৪৮ ঘণ্টা শুধু পানি বা চিনি ছাড়া ফলের রস পান করা আর পাঁচ দিন স্বাভাবিক খাবার খাওয়া। ওই দুই দিন সারা দিনে ৫০০-৬০০ ক্যালরি খাওয়া যাবে। আবার এক দিন (২৪ ঘণ্টা) না খেয়ে পরদিন স্বাভাবিক খাবার খাওয়া যায়। গবেষকরা এখনো ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের উপকারিতা সম্পর্কে গবেষণা করছেন। রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান ও ভাইভ নিউট্রিশন ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রেস ই. আয়েস্তা বলেন, ‘এটির সবকিছু নির্ভর করছে আপনি কোন ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনা করেন ও কতক্ষণ উপবাস থাকেন তার ওপর। যারা ওজন কমাতে চায়, তাদের জন্য ১৬ ঘণ্টা উপবাস এবং ৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ভোজন দৈনিক ক্যালরি গ্রহণ তুলনামূলক ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কিছু প্রাণী গবেষণায় এ ডায়েট আয়ু বাড়াতে পারে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং দেখা যায় যে এটি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। আপনাকে একটি বিষয় বুঝতে হবে যে ওজন কমানোর জন্য ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কোনো জাদুকরী সমাধান নয়। আপনার মোট ক্যালরি গ্রহণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, কারণ উপবাসের পর শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালরি গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে পারবেন না, যার নেতিবাচক প্রভাব শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যের ওপর পড়বে।’
* প্রাণীজ ডায়েট বনাম উদ্ভিজ্জ ডায়েট : আয়েস্তা বলেন, ‘কোন ধরনের খাবার কতটুকু খাওয়া হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে গবেষণায় উদ্ভিজ্জ ডায়েট ও প্রাণীজ ডায়েটের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া গেছে। উদাহরণস্বরূপ, কেটোজেনিক ডায়েট হলো প্রাণীজ ডায়েট, যেখানে উচ্চমাত্রায় ফ্যাট ও নিম্নমাত্রায় কার্বোহাইড্রেট থাকে- গবেষণায় দেখা গেছে যে এ ডায়েট স্বাস্থ্য মার্কার ও ইনসুলিন সেনসিটিভিটি উন্নত করে। অন্যদিকে প্রাণীজ ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফল খাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা ফাইবার গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য উপকারিতার ক্ষেত্রে উভয় ডায়েটের মধ্যে উদ্ভিজ্জ ডায়েট বেশি কার্যকর, কারণ উদ্ভিজ্জ খাবার মানুষের প্রায় সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে। মাংসভিত্তিক ডায়েটের (বিশেষ করে বেশি পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত মাংস ভোজন) সঙ্গে ক্যানসারের বর্ধিত ঝুঁকির সম্পর্ক পাওয়া গেছে।’ আপনার জন্য যেটা সবচেয়ে কার্যকর সেটা অনুসরণ করতে পারেন।
* নারকেল তেল : গতবছর হার্ভার্ডের একজন অধ্যাপক বলেছেন যে, নারকেল তেল হলো পিউর পয়জন। তার এ দাবি নারকেল তেল ব্যবহারকারীদের কনফিউশনে ফেলে দেয়। কিন্তু তার এ কথাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না, কারণ নারকেল তেলে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে- যার মানে হলো, আপনার উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে সবসময় নারকেল তেল ব্যবহার করা উচিত নয়, এক্ষেত্রে অন্যান্য তেল ব্যবহার করতে হবে, কিন্তু মাঝেমাঝে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। নিউ ইয়র্ক সিটির ডায়েটিশিয়ান র‌্যাশেল লার্কি বলেন, ‘নারকেল তেলের কিছু উপকারিতা হলো- এটি খাবারে ভালো স্বাদ আনে, এটিতে অলিভ অয়েলের তুলনায় উচ্চ স্মোক পয়েন্ট রয়েছে এবং এটিতে মিডিয়াম চেইন ট্রাইগ্লিসেরাইড (এমসিটি) থাকে। অন্যান্য কিছু ফ্যাটের তুলনায় এমসিটি সহজে হজম হয়- যার মানে হলো, এ তেল সেসব লোকদের উপকার করতে পারে যাদের হজম বা পুষ্টি শোষণ সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। নারকেল তেল মস্তিষ্কের ফাংশনেও সহায়ক হতে পারে।’
* কৃত্রিম সুইটেনার : এ প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো ‘না’ এবং আপনি সাধারণত কতটুকু চিনি খাচ্ছেন তা সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত, বলেন ইউনাইটেড ফর হারের নিউট্রিশন ম্যানেজার ইরিন পেলিগ্রিন। কৃত্রিম সুইটেনার সমস্যা তৈরি করে, কারণ এটি সাধারণ চিনির চেয়ে শত শত গুণ মিষ্টি হতে পারে। পেলিগ্রিন বলেন, ‘আমাদের আসলেই কৃত্রিম সুইটেনার এড়িয়ে চলা উচিত অথবা যতটা সম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের পক্ষে এটি সম্ভব হতে পারে, কারণ মানুষের সহজাত প্রবণতা হলো কৃত্রিম জিনিস এড়িয়ে চলা। যখন আপনি ৭০০ গুণের বেশি মিষ্টি জাতীয় কিছু খাবেন, আপনার মুখ এ প্রশিক্ষণ পায় যে আরো মিষ্টি খেতে হবে।’
ন থাকে এবং এতে বি-১২ ও প্রোটিনও রয়েছে।
* লবণ : ২০১৫-২০২০ ডায়েটারি গাইডলাইন্স ফর আমেরিকানসের পরামর্শ হচ্ছে, প্রতিদিন ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট