চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

হাসপাতালে চাপ, ফাঁকা পড়ে আছে আইসোলেশন সেন্টার

ইমরান বিন ছবুর 

২৭ এপ্রিল, ২০২১ | ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

আইসিইউ ছাড়া সব ধরণের জরুরি সুবিধা থাকার পরও করোনা রোগীদের জন্য অতিসম্প্রতি স্থাপিত চট্টগ্রামের দুটি আইসোলেশন সেন্টার ফাঁকা পড়ে আছে। অন্যদিকে, করোনা রোগীর চাপে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলতঃ দুটি কারণে করোনা রোগীরা আইসোলেশন সেন্টারমুখী হচ্ছেন না। প্রথমত, প্রচারণার অভাবে আইসোলেশন সেন্টার সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা এবং দ্বিতীয়ত, আস্থার অভাব। জনগণকে ব্যাপকভাবে এই দুই আইসোলেশন সেন্টার সম্পর্কে জানানো গেলে অপেক্ষাকৃত কম জটিলতায় ভোগা করোনা রোগীরা অযথা হাসপাতালে গিয়ে চাপ সৃষ্টি না করে নিজেরা এসব সেন্টার থেকে ভাল সেবা নিতে পারতেন। এতে হাসপাতালের উপরও চাপ কমতো।

খবর নিয়ে জানা গেছে, গত ৬ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার চালু হয়েছে। নগরীর লালদিঘির দক্ষিণ পাড়ে চসিক লাইব্রেরি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে এ আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়।

চসিকের আইসোলেশন সেন্টার সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যার মধ্যে বর্তমানে সাত জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। অন্যদিকে, এ পর্যন্ত মোট ১৮ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সর্বমোট ২৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চসিক আইসোলেশন সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. মুজিবুল আলম চৌধুরী বলেন, এখন অধিকাংশ মানুষ বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের অবস্থা কিছুটা খারাপ তারা শুধুমাত্র হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। তবে যেসব করোনা রোগী সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের বড় একটি অংশ চাইলে চসিকের আইসোলেশন সেন্টার বা বিদ্যানন্দের মত হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন। এখানে আইসিইউ সুবিধা ছাড়া সব ব্যবস্থা রয়েছে। সব করোনা রোগীর তো আইসিইউ প্রয়োজন হয় না। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত সেবা ও সুবিধা রয়েছে।

জানতে চাইলে আইসোলেশন সেন্টারের ফার্মাসিস্ট বিধান বড়–য়া জানান, লাইব্রেরি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আইসোলেশন তৈরি করা হয়েছে। সেখানে মোট ১৩ জন ডাক্তার রয়েছেন। রুটিন মাফিক তারা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। এখানের চিকিৎসা সেবা এবং পরিবেশ অনেক ভালো।

এদিকে, গত ১৩ এপ্রিল বিদ্যানন্দ হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়। নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন সাগরিকায় বিটাক মোড় এলাকায় প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৭০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতাল চালু করা হয়।

জানতে চাইলে বিদ্যানন্দ হাসপাতালের সমন্বয়ক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, একজন রোগী ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে  চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। দুইজন অভিজ্ঞ কনসালটেন্ট এবং ১০ জন ডাক্তার সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল সোমবার নতুন করে আটজন রোগী ভর্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৪০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

তিনি আরো বলেন, অনেকেই শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হতে যান। খুব খারাপ অবস্থা না হলে সেখানে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই। এরফলে একদিকে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ পড়ে। অন্যদিকে আমাদের মত আইসোলেশন সেন্টারে সিটগুলো খালি পড়ে থাকে। জামাল উদ্দিন বলেন, কোন রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আমরা নিজেদের উদ্যোগেই রোগীকে চমেকে পাঠিয়ে দিই। আমাদের সার্বক্ষণিক এম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও রয়েছে।

বিদ্যানন্দ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা প্রদানের সুবিধা সম্পর্কে জানা যায়, ৭০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে সার্বক্ষণিক দুইজন অভিজ্ঞ কনসালটেন্ট, ১০ জন ডাক্তার, ৮ জন নার্স, ৩০ জন ভলান্টিয়ার সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা, ওষুধ, ল্যাব, টেস্ট, খাবার, এম্বুলেন্স সবকিছুই বিনামূল্যে রোগীরা পাচ্ছেন। অবস্থাপন্ন হলে তাদেরকে কিছু খরচ বহন করার প্রস্তাব দেয়া হয়। তারা রাজি থাকলে খরচ নেয়া হয়।

বিদ্যানন্দ হাসপাতালে বিদ্যমান চিকিৎসা সুবিধার মধ্যে রয়েছে হাইফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা ও অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর। ২৮০ স্কোয়ার ফুটের প্রতিটি কক্ষে তিনটি বেড রয়েছে। কোভিড টেস্ট, ল্যাব টেস্ট ও এক্সরে করানোর জন্য রোগীকে বাইরে কোথাও যেতে হয় না।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট