চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে চাই সমন্বিত স্ক্যানিং প্রোগ্রাম

ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১:১৪ অপরাহ্ণ

ক্যান্সারের কথা শুনলেই আমরা সবাই ধরে নেই মৃত্যু অতি সন্নিকটে। কিন্ত সঠিক সময়ে আধুনিক চিকিৎসা পেলে ক্যান্সারের মতো রোগ নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। মহিলা ও পুরুষ ভেদে বাংলাদেশের লোকজন বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। মহিলারা প্রধানত স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু মুখের ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। পুরুষেরা বেশির ভাগ ফুসফুসের ক্যান্সার ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য পৃথিবীর অনেকগুলো দেশে ক্যান্সার স্ক্যানিং প্রোগ্রাম চালু আছে। স্ক্যানিং এর মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার, জরায়ু মুখের ক্যান্সার, কোলোন ক্যান্সার (মলাশয়ের ক্যান্সার), পুরুষদের প্রোস্টেট (মূত্রস্থলীর গ্রীবা সংলগ্ন গ্রন্থিবিশেষ) ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা যায়। বাংলাদেশে সীমিত আকারে জরায়ু মুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিং শুরু হয়েছে। কিন্তু একটি সমন্বিত স্ক্যানিং প্রোগ্রাম চালু করতে পারলে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাময় করা সহজ হয়।

আমরা যদি স্তন ক্যান্সারের কথা চিন্তা করি তাহলে বর্তমানে চট্টগ্রাম এবং সমগ্র বাংলাদেশে কোন ‘স্ট্রাকচার্ড ব্রেস্ট ক্যান্সার কেয়ার প্রোগ্রাম’ নেই। যে কোন ক্যান্সারের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ। অনেক বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্যকর্মীর সম্মিলিত চেষ্টা ছাড়া ক্যান্সারের চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমাদের কোন ক্যান্সার কেয়ার প্রোগ্রাম গড়ে উঠেনি। কোভিডের আগে চট্টগ্রামে কারো ক্যান্সার হলে সামর্থ অনুযায়ী সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, মুম্বাই, চেন্নাই, ঢাকায় যেতো চিকিৎসার জন্য। যাদের সামর্থ কম তারা চট্টগ্রামেই চিকিৎসা নিতো। কিন্ত কোভিড এর সময় চট্টগ্রামেই বেশির ভাগ মানুষকে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

এজন্যই আমাদের প্রয়োজন একটি সম্মিলিত ক্যান্সার কেয়ার প্রোগ্রাম। আমরা স্তন ক্যান্সার নিয়েই এই ধরনের একটি প্রোগ্রামের কথা চিন্তা করতে পারি অথবা শুরু করতে পারি। এখন প্রশ্ন আসতে পারে কি ধরনের প্রোগ্রাম এবং কে শুরু করবে। সোজা বাংলায় বললে বলা হবে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

তবে ব্যাপারটা একটু খোলাসা করে বলি। এই ধরনের প্রোগ্রাম সাধারণত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরফ থেকে হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী মিলে একটি টিম পুরো প্রোগ্রামের দেখভাল করে থাকেন। স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রোগ্রামের নাম হতে পারে ‘চিটাগাং ব্রেস্ট ক্যান্সার কেয়ার প্রোগ্রাম’। ডাক্তারদের মধ্যে থাকে ব্রেস্ট সার্জন, রেডিওলোজিস্ট, প্যাথলজিস্ট, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, নার্স, মেডিকেল অনকলোজিস্ট, ম্যামোগ্রাফিক টেকনোলজিস্ট এবং এডমিন সাপোর্ট কম।

শুরুটা হয় স্ক্রিনিং ম্যামোগ্রাম দিয়ে। মূলত ম্যামোগ্রাম মেশিন দিয়ে ব্রেস্ট জিআই এক্সরে ছবি তোলা হয়। যদি কোন সন্দেহজনক গোটা পাওয়া যায়, রেডিওলোজিস্ট বাইওপসির মাধ্যমে টিস্যু স্যাম্পল নিয়ে আসেন। তারপর প্যাথলজিস্ট মাইক্রোস্কোপে দেখে বলে দেন ক্যান্সার আছে কিনা। যদি থাকে তখন ব্রেস্ট সার্জন অপারেশনের ব্যবস্থা করেন।

সার্জারি হলো ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসার প্রথম ধাপ। তারপর রোগী যাবে অনকোলজিস্টের কাছে। দুই ধরনের অনকোলজির ডাক্তার আছে। একজন চিকিৎসা করেন কেমোথেরাপি দিয়ে। তিনি হলেন মেডিকেল অনকোলজিস্ট। অন্যজন করেন রেডিয়েশন দিয়ে। তিনি হলেন রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট। ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রকারভেদ ধরনের উপর ভিত্তি করে কেউ শুধু রেডিয়েশন পায়, কেউ কেমো ও রেডিয়েশন দুটোই পায়। আবার কেউ কেউ কেমো অথবা রেডিয়েশনের পর ৫ থেকে ১০ বছর হরমোন থেরাপি পেয়ে থাকেন।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া একজন নার্স সমন্বয় করে থাকেন। তাকে বলা হয় ব্রেস্ট ক্যান্সার নেভিগেটর।

আমাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এইধরনের একটি প্রোগ্রাম শুরু করা দরকার। কিন্ত দুর্ভাগ্যবশত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নূতন ম্যামোগ্রাম মেশিনটি ৬ মাসের মাথায় খারাপ হয়ে অচল অবস্থায় পড়ে আছে।

এই ধরনের প্রোগ্রামে কর্পোরেট স্পন্সরশিপ অথবা ব্যক্তিগত অর্থ সহায়তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ পুরো প্রোগ্রামের জন্য দরকার ভালো আইটি সাপোর্ট, কিছু সফটওয়ার এবং ডাক্তার ও স্টাফদের প্রশিক্ষণ। ব্যক্তিগত অথবা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পুরো প্রোগ্রামকে চলমান রাখা যায়।

আশা করি বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে চট্টগ্রামে ‘চিটাগাং ব্রেস্ট ক্যান্সার কেয়ার প্রোগ্রাম’ এর সূচনা করার ব্যাপারে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন।

লেখক : কানাডায় কর্মরত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, [email protected]

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট