চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

পাইকারিতে কমলেও খুচরায় কমেনি চালের দাম

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৮ আগস্ট, ২০২১ | ১২:৫১ অপরাহ্ণ

চালের শুল্কহার কমানোর ঘোষণায় পাইকারি বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সরকারিভাবে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এখন শুল্ক কমানোর পর বেসরকারিভাবেও চাল আমদানি বাড়বে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মজুত বাড়ানোর ফলে বাজারে প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় দাম কমিয়েছেন মিলার ও মজুতদাররা। তবে, আগের বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে খুচরা বাজারে। চালের পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মিলার, মধ্যস্বত্বভোগী ও বড় বড় শিল্প-ব্যবসায়ী সি-িকেট। তাদের কাছে প্রচুর পরিমাণ ধান-চাল মজুত রয়েছে। সরকার চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর ঘোষণায় অস্বস্তিতে পড়েছেন মজুতদার সি-িকেট। আমদানি বাড়ানোর ফলে বাজারে ধস নামার শঙ্কায় দাম কিছুটা কমাতে শুরু করেছেন মিলার ও মজুতদার সি-িকেট। প্রতি বস্তা চাল একশ থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে।’ পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুচরা বাজারে কমেনি। এখনো আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। ২নং গেট ষোলশহর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারের সভাপতি এয়াকুব চৌধুরী বলেন, ‘১৫-২০ দিনের আগের কেনা দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন দামে এখনো চাল কেনা হয়নি।’ গত দুই বছর ধরে চালের বাজারে অস্থিরতা চলে আসছে। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ত্রাণ বিতরণে প্রচুর পরিমাণ চালের ব্যবহার হয়। সেই থেকে চালের বাজার ক্রমান্বয়ে অস্থির হয়ে উঠে। সব ধরনের চালের দাম গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় গত ৭ জানুয়ারি শুল্কহার কমিয়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। বোরো মৌসুমে দেশে ধানের ভালো ফলন হয়েছে। তারপরও চালের দাম কমেনি। এরফলে সরকার চাল আমদানি শুরু করে। আমদানি ও অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের মাধ্যমে চালের মজুত বাড়ায় সরকার। দাম নিয়ন্ত্রণে খোলাবাজারে চাল বিক্রয় (ওপেন মার্কেট সেল-ওএমএস) কর্মসূচি শুরু করে সরকার। গত ২৫ জুলাই থেকে বিশেষ ওএমএস দিচ্ছে সরকার। এরপরও বাজারে চালের দাম কমানো যায়নি।

গত ঈদুল আজহার আগেও সব ধরনের চালের দাম বস্তা প্রতি তিনশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় শুল্কহার কমিয়ে বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে উৎসাহিত করছে সরকার। গত ১২ আগস্ট জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চালের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার কথা জানায়। চাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি ছাড়াও ৫ শতাংশ এডভান্স ট্যাক্স (এটি) ও ৫ শতাংশ এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) পরিশোধ করতে হবে। সরকারি বিপণন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মাঝারি চাল ৫০ থেকে ৫৮ এবং মোটা চাল ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। চালের শুল্কহার কমানোর পর পাইকারি বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি একশ থেকে দেড়শ’ টাকা পর্যন্ত কমেছে। গতকাল পাইকারি মোকামে বেতি আতপ চাল বিক্রি হয়েছে বস্তাপ্রতি ২৩শ টাকা, বেতি- ২৮ চাল ২৪শ টাকা, বেতি-২৯ চাল ২২শ টাকা। বস্তা প্রতি দেড়শ টাকা পর্যন্ত কমেছে। নূরজাহান সিদ্ধ মানভেদে ২১শ ও ২২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেছে একশ’ টাকা পর্যন্ত। জিরাশাইল বস্তাপ্রতি ২৮৫০ টাকা, মিনিকেট আতপ ২৪৫০ টাকা, মিনিকেট সিদ্ধ ২৩শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাও বস্তাপ্রতি এক থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
পাহাড়তলী চাল মোকামের আড়তদার ও ব্যবসায়ী মো. জাফর আলম বলেন, ‘চাল আমদানি শুল্ক কমানোর পর থেকে বস্তাপ্রতি এক থেকে দেড়শ টাকা কমেছে। আমদানি বাড়ানোর কারণে বিপাকে পড়ার আশঙ্কায় মিল মালিক, মজুতদার ও ফড়িয়া ব্যবসায়ী দাম কমিয়েছেন।’
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, বোরো ও আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে মজুদ করেন মিল মালিক, ফড়িয়া ব্যবসায়ী ও বড় বড় শিল্প-ব্যবসায়ীরা। ধানের ভরা মৌসুমে এ কারসাজি করেন তারা। পরে তাদের মর্জিমাফিক চালের দাম বাড়ান।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বড় বড় শিল্প গ্রুপ ও ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে ধান-চাল কিনে মজুত করে। পরে চাল প্যাকেটজাত করে উচ্চ দামে বাজারে বিক্রি করে। অথচ এসব শিল্প গ্রুপের নিজস্ব কোনো মিল নেই। অতিরিক্ত মজুত করার কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমদানি শুল্ক কমানোর ঘোষণায় অস্বস্থিতে রয়েছেন মজুতদাররা। বাজার ধস নামানোর শঙ্কা এখন দাম কমিয়ে দিচ্ছেন।’
একই কথা বলেছেন চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘শুল্ক কমানোর ঘোষণার পর পরই অনেক ব্যবসায়ী এলসি খুলেছেন। ভারত থেকে বেশি পরিমাণে চাল আমদানি এলসি খোলা হয়েছে। এখন আমদানির অপেক্ষায়। আমদানির পর বাজার স্থিতিশীল হবে বলে আশা করছি।’ অবশ্য শুল্ক কমানোর পর তাৎক্ষণিক প্রভাবে চালের দাম কেজিপ্রতি ১-২ টাকা কমেছে বলেও জানান তিনি।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন