চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

মশার কৌশল শিখে পথ দেখালেন বাঙালি বিজ্ঞানী

ব্যথা লাগবে না ইঞ্জেকশনে!

মরিয়ম আকতার

৩১ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:০৪ পূর্বাহ্ণ

শরীরে যখন মশা হুল ফোটায়, প্রথমে আমরা তা বুঝতেই পারি না। মশা রক্ত খেয়ে উড়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারি। তা হলে কি মশা কোনও বিশেষ কৌশল জানে?

(গত সংখ্যার পর)
দেখা গিয়েছে, কোনও বস্তুর মধ্যে সরাসরি কোনও সূচ ঢোকাতে গেলে যে বল প্রয়োগ করতে হয়, তার চেয়ে কম বল লাগে যদি কাঁপতে কাঁপতে সেই সূচটিকে শরীরে ঢোকানো হয়।

অনিমাংশুর লক্ষ্য, বাজারে চালু ইঞ্জেকশনের নিডলগুলির সঙ্গে এমন একটি ‘সিস্টেম’ বা ব্যবস্থা যোগ করা যাতে সেই সূচটি কাঁপতে কাঁপতে শরীরে ঢুকতে পারে। তাতে বল অনেক কম প্রয়োগ করতে হবে। যন্ত্রণাও হবে অনেকটাই কম।

অনিমাংশুর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একটি সূচকে যদি সরাসরি প্রবেশ করানো হয়, তাতে যে বল লাগে, সেই বল ৬ ভাগের এক ভাগ হয়ে যাবে, যদি সেই সূচটিকে কাঁপতে কাঁপতে ঢোকানো যায় শরীরে।

তবে সূচটি যার মধ্যে ঢোকানো হচ্ছে তার উপাদান, প্রকৃতির উপর অনেকটাই নির্ভর করবে প্রয়োজনীয় বলের পরিমাণ।
অনিমাংশু পরীক্ষাটা কী ভাবে করেছেন?

অনিমাংশু পরীক্ষাগারে অনেকটা আমাদের ত্বকের মতোই বিশেষ এক ধরনের ‘জেল’ ব্যবহার করেছেন। তাতে ঢুকিয়েছেন ১.২ মিলিমিটার ব্যাসের একটি সূচ। দেখা গিয়েছে, না কাঁপিয়ে সূচটিকে জেলের মধ্যে ঢোকালে ২.৪ মিলিমিটার থেকে ২.৮
মিলিমিটারের ব্যাসের একটি ছিদ্র তৈরি হয়। আর ১.২ মিলিমিটারের ওই সূচকেই যদি কাঁপতে কাঁপতে জেলের মধ্যে ঢোকানো হয়, তা হলে সেই ছিদ্রের মাপটা ১.২ মিলিমিটারের কাছাকাছি থাকবে। তার ফলে, ইঞ্জেকশনের সূচ ফোটালে আমাদের গায়ের চামড়া ও মাংসপেশির মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষতের পরিমাণটা হবে অনেকটাই কম। অনিমাংশু ‘আনন্দবাজার’কে বলেছেন, ‘‘মশা সাধারণত ২০ থেকে ৩০ হার্জ কম্পাঙ্ক ব্যবহার করে হুল ফোটায়। আমরা দেখেছি, মানুষের শরীরের মতো কোনও উপাদানে সূচ ঢোকানোর সময় যদি ২০ থেকে ৫০ হার্জ কম্পাঙ্ক ব্যবহার করা হয়, তা হলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। ক্ষতের পরিমাণ অনেকটা কম হয়। যদিও মানুষের উপর এই পদ্ধতি এখনও প্রয়োগ করা হয়নি।’’
শরীরের বিভিন্ন অংশের জন্য কি প্রয়োজন বিভিন্ন কম্পাঙ্ক?

অনিমাংশুদের লক্ষ্য, সাধারণ একটি ইঞ্জেকশনের সঙ্গে যাতে একটি ‘ভাইব্রেটিং’ যন্ত্র জুড়ে দেওয়া যায়।

সে ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি ধাপ পেরতে হবে। সব মানুষের ত্বকের চরিত্র এক রকম নয়। কারও নরম, কারও একটু শক্ত। কারও ক্ষেত্রে একটু মোটা বা কেউ খুব পাতলা ত্বকের অধিকারী। আবার কোনও একজনের শরীরের বিভিন্ন অংশের ত্বকও আলাদা আলাদা। ফলে, আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ওই যন্ত্রণাহীন ইঞ্জেশনের সূচ ফোটানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন কম্পাঙ্কের প্রয়োগ করার প্রয়োজন হবে কি না, সেটাওদেখতে হবে। তবে সার্বিকভাবে এটা পরীক্ষিত সত্য যে কম্পনের সঙ্গে সূচ শরীরে প্রবেশ করালে যন্ত্রণা কম হবে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানী অদিতি চক্রবর্তীও এ ব্যাপারে তাঁর পিএইচডি-র একটি পেপার প্রকাশ করেন ২০১৬ সালে। সেখানে তাঁরা কম্পনের সঙ্গে কোনও বস্তুর মধ্যে সূচ ঢোকালে ঘর্ষণের মাত্রা কম হয় বলে দেখান। তাঁদেরও উদ্দেশ্য ছিল ইঞ্জেকশনের যন্ত্রণাহীন সূচ বানানো। গবেষণাপত্রটি বেরয় আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল

‘ফিজিক্যাল রিভিউ এক্স’-এ। তবে অদিতি ও তাঁর সহযোগীরা নির্দিষ্ট কোনও একটি কম্পাঙ্ক নিয়ে কাজ করেননি। তাঁরা বহু

কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু অনিমাংশু খুঁজে বের করেছেন নির্দিষ্ট কোন কম্পাঙ্ক সবচেয়ে বেশি কার্যকর। এটাই অনিমাংশুদের কৃতিত্ব। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
[সূত্র : আনন্দবাজার]

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট