চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শক্তিশালী ব্যাটারির মধ্যে আপেলের খোসা!

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২৪ পূর্বাহ্ণ

গবেষকেরা বাসি আপেলের খোসা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন, কারণ তার মধ্যে অনেক কার্বন রয়েছে যা বিদ্যুৎ বহনের জন্য উপযুক্ত। খোসা থেকে পানি বার করে নিলেই ব্যাটারির মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে সেটি ব্যবহার করা যায়।
নাসরিন আকতার

পরিবেশ দূষণ এড়াতে গোটা বিশ্বে ইলেকট্রিক গাড়ির চল বাড়ছে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাটারির ক্ষেত্রে এখনো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। পরিবেশবান্ধব, সহজলভ্য, কম দামী ও কার্যকর উপকরণ কাজে লাগিয়ে লিথিয়ামের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে।
গবেষকেরা ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারির মধ্যে বহু ব্যবহৃত লিথিয়ামের বিকল্প খুঁজছেন। এখনো ব্যাটারির পজিটিভ পোলে লিথিয়াম, মাইনাস পোলে গ্রাফাইট নামের ধাতু ব্যবহার করা হয়। চার্জ করার সময় লিথিয়াম আয়ন মাইনাস পোলের দিকে ধেয়ে যায়, ডিসচার্জ করার সময় সেগুলি আবার উৎসে ফিরে গিয়ে বৈদ্যুতিক শক্তি সৃষ্টি করে।
লিথিয়ামের জায়গায় ন্যাট্রিয়াম ব্যবহার করা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। পুরানো আপেলের খোসা এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে অনেক হাইটেক যন্ত্রপাতিও রয়েছে। ব্যাটারির শক্তি বাড়াতে আরও কিছু উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। হেল্মহলৎস ইনস্টিটিউটের প্রধান স্টেফানো পাসেরিনি বলেন, ‘‘সোডিয়াম প্রথম বিকল্প। কারণ সেটির সঙ্গে লিথিয়াম আয়নের সবচেয়ে বেশি মিল রয়েছে। তাই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সামান্য রদবদল ঘটালেই চলে। তাছাড়া সোডিয়াম খুবই সহজলভ্য। সমুদ্রের পানি থেকে লবণের খনি, অনেক জায়গায় সেটি পাওয়া যায়।”
বিশেষ কামরার মধ্যে নতুন ন্যাট্রিয়াম

ব্যাটারির অংশগুলি জোড়া লাগানো হয়। সেখানে একেবারেই কোনো আর্দ্রতা থাকলে চলবে না, কারণ সামান্য আর্দ্রতাও ব্যাটারি নষ্ট করে দিতে পারে। তারপর সেই ব্যাটারি লাগাতার চার্জ ও ডিসচার্জ করা হয়। এই ব্যাটারির মধ্যে আরও একটি চমক রয়েছে। স্টেফানো পাসেরিনি বলেন, ‘‘সোডিয়ামের জন্য আসলে আর-কার্বন নামের কম দামী কার্বন ব্যবহার করা হয়। আপেলের খোসা ও শস্যদানার মতো বর্জ্য ব্যবহার করেই তা উৎপাদন করা সম্ভব। বাদামের খোসার মতো অরগ্যানিক বর্জ্যও ভালো ফল দিচ্ছে।”
এখনো মাইনাস পোলে অত্যন্ত বিশুদ্ধ মানের গ্রাফাইট ব্যবহার করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দামী। গবেষকদের মতে, গ্রাফাইটের বদলে বিনা সমস্যায় অরগ্যানিক বর্জ্য ব্যবহার করা সম্ভব।
গবেষকরা অবশ্য জানেন না, ব্যাটারির ভিতরে ঠিক কী ঘটছে। ব্যাটারির মধ্যে অন্যান্য রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসে ন্যাট্রিয়াম কী প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাও অজানা রয়েছে। কিন্তু পরীক্ষায় ব্যবহৃত ব্যাটারি মরে যাবার পর হাইটেক যন্ত্রপাতির সাহায্যে ময়না তদন্ত করে সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজা হচ্ছে।
গবেষক হিসেবে মারাল হেকমতফার বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সারফেসের উপর এক্স-রে নিক্ষেপ করি। সারফেস থেকে প্রতিফলিত ইলেকট্রন সেখানকার প্রত্যেকটি রাসায়নিকের আঙুলের ছাপের মতো। সেই অর্থে
সামগ্রিকভাবে ব্যাটারির সেলের মধ্যে কী ঘটছে, তা আমরা জানতে পারি। ফলে পরে আমরা ব্যাটারির রাসায়নিক গঠন আরও নিখুঁত করে তুলতে পারি।”

ন্যাট্রিয়াম ব্যাটারি ক্ষুদ্র বাটন সেল হিসেবেও ইতোমধ্যে ভালোভাবে কাজ করছে। কয়েক বছরের মধ্যেই সেটি বাজারে আসতে পারে। কিন্তু লিথিয়ামের তুলনায় তার শক্তি কম হওয়ায় ইলেকট্রিক গাড়িতে সেগুলির সংখ্যা বাড়াতে হবে। ফলে বর্তমানের তুলনায় আরও বড় ব্যাটারির প্রয়োজন হবে। স্টেফানো পাসেরিনি বলেন, ‘‘ছোট আকারের ইলেকট্রিক গাড়িতে এমন ব্যাটারি কাজে লাগানো হয়েছে।

বড় গাড়িতে এখনই সোডিয়াম-ভিত্তিক ব্যাটারি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তবে শহরের মধ্যে কম দূরত্বে ঘোরাফেরার জন্য হালকা যানে এর প্রয়োগ হতে পারে। সোডিয়াম আয়ন প্রয়োগের এটাই ভালো ক্ষেত্র।”
সে কারণে গবেষকরা সমস্যা এড়াতে নতুন উপকরণের সন্ধান করছেন।
তাঁদের ধারণা, ১০ থেকে ১৫ বছরের আগে ম্যাগনেসিয়াম ব্যাটারি বাজারে আসবে না।
[সূত্র : ডয়চে ভেলে]

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট